পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। জাতির পিতা তার সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে হজ ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে বহু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কম খরচে হজ পালনের জন্য তিনি হিজবুল বাহার জাহাজ ক্রয় করেন এবং বাংলাদেশ থেকে সমুদ্র পথে হজযাত্রী পাঠান। দুঃখজনক হলেও সত্য সেই হিজবুল হাবাহার জাহাজকে প্রমোদতরী বানানো হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হজযাত্রীদের সঙ্গে কোনো এজেন্সি প্রতারণা বা হয়রানি করলে সে এজেন্সির বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আগামী দিনগুলোতেও আল্লাহর ঘরের মেহমানদের যারা হয়রানি করবে, তাদের কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। এটা মনে রাখতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার আগারগাঁওস্থ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতায় এবং হজ এজেন্সীজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ে হজ ও ওমরা ব্যবস্থাবিষয়ক সম্মেলন-২০২২ এবং হজ ও ওমরাহ ফেয়ার-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দুপুরে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি হজ ও ওমরাহ ফেয়ার উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে হজযাত্রীদের নিয়ে কিছু স্বার্থন্বেষী মহল, দালাল-প্রতারকদের প্রতারণা, হজযাত্রী পরিবহনে চরম বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম সাধারণ ঘটনা ছিল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ২০০৯ সালে আমাদের সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই হজ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে এটিকে বিশ্বমানে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করি। হজযাত্রীর প্রাক-নিবন্ধন, নিবন্ধন, ই-হেলথ প্রোফাইল তৈরি, ই-টিকিট, হজযাত্রী পরিবহন, মক্কা-মদিনায় আবাসন ব্যবস্থা, চিকিৎসাসেবা দেয়াসহ সবক্ষেত্রে ই-হজ ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২১ এবং হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২২ প্রণয়ন করেছি। এর ফলে হজ কার্যক্রমে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগের প্রতিকার হয়েছে।’
তিনি বলেন, কিছু সন্ত্রাসীর কারণে পবিত্র ধর্ম ইসলাম সমালোচনার সম্মুখীন। আসুন আমরা সবাই ইসলামের বাণীকে হৃদয়ে ধারণ করি। সমাজ থেকে অন্ধকার, অশিক্ষা, বিভেদ, সহিংসতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্ম‚ল করি। যে অপশক্তি ইসলামের অপব্যাখ্যা করছে তাদের প্রতিহত করি।’ তিনি বলেন, দেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত রেখে পবিত্র ইসলামের শান্তিপূর্ণ গৌরব সমুন্নত রাখতে আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। এ জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় আলেম-ওলামাদেরও সম্পৃক্ত করেছি। মানবসম্পদ উন্নয়নে ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করে মসজিদের ইমামদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় লাখ লাখ শিশুকে কোরআন শিক্ষারব্যবস্থা করেছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা মুসলিম বিশ্বসহ আরব দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করেন। তার ক‚টনৈতিক দূরদর্শীতায় বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে ওআইসির সদস্যপদ লাভ করে। সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়। ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য জাতির পিতা ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন; তাবলীগ জামাতের জন্য কাকরাইল মসজিদে জমি দান করেন; টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেন। বেতার ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান শুরু ও সমাপ্তিতে কোরআন তিলাওয়াতের প্রচলন করেন।
তিনি বলেন, হজ ইসলামের ৫ম স্তম্ভ ও আর্থিকভাবে সক্ষম মুসলমানের জন্য ফরজ ইবাদত। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণভাবে ১০ লাখ হজযাত্রী নিয়ে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ থেকে ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজ পালন করেন। ২০২২ সালে অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে হজ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। বর্তমান হজ ব্যবস্থাপনার অধিকাংশ বিষয়ে আইটি নির্ভর হয়েছে। এছাড়া সাম্প্রতিক বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে হজ ব্যবস্থাপনার অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। এসব বিষয়ে হজযাত্রীসহ বিভিন্ন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী পাঠানো এজেন্সিকে অবহিত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এখন অনলাইন সুবিধা ব্যবহার করে হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন প্রক্রিয়া সারা বছর চলমান আছে। এর মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় দ্রæত ও স্বচ্ছতার সঙ্গে সেবা দেয়া হচ্ছেÑ যা আমাদের সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে হজযাত্রীরা সহজেই তাদের যাবতীয় তথ্য ও সেবা নিতে পারছেন। দেশ-বিদেশ থেকে হজযাত্রীদের আত্মীয়-স্বজনরা তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারছেন। হজযাত্রীদের জন্য স্বল্প সময়ে সেবা দেয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুরক্ষা অ্যাপসের সঙ্গে ই-হজ সিস্টেমের আন্তঃসংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। যার ফলে হজযাত্রীদের কোভিড-১৯ টিকা সংক্রান্ত তথ্যাদি সহজেই জানা সম্ভব হচ্ছে এবং হজযাত্রীদের ই-হেলথ প্রোফাইল প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে।
তিনি বলেন, হজযাত্রীদের সুবিধার্থে আমরা ২০১০ সালে হজযাত্রীদের সেবার জন্য জেদ্দা হজ টার্মিনালে প্লাজা ভাড়া করে দিয়েছি। সউদী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা বিমানের হজ পূর্ববর্তী খালি ফ্লাইটে জমজমের পানি ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করেছি। বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে আগের কোটাভিত্তিক ফায়দা ভোগের অনিয়মকে দূর করে বাড়িভাড়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির মাধ্যমে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিকটবর্তী স্থানে সাশ্রয়ী এবং উন্নত বাড়ি বা হোটেল ভাড়া করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সালের হজে সউদী আরবের ‘রুট টু মক্কা ইনিশিয়েটিভ’-এর আওতায় প্রায় ৬০ হাজার জন হজযাত্রীর ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন হয়েছে। ২০২২ সালে ৯২ শতাংশ হজযাত্রীর প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন হয়। এর ফলে হজযাত্রীদের হজযাত্রাজনিত কষ্ট বহুলাংশে লাঘব হয়েছে। আগামী বছর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে শতভাগ হজযাত্রীর মক্কা রোড ইনিশিয়েটিভের এর আওতায় সউদী পর্বের ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে গত ১৩ নভেম্বর সউদী সরকারের সঙ্গে আমরা চুক্তি করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আমাদের সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ৬৪৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা দিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্প পুনরায় চালু করি। বর্তমানে এ প্রকল্পের বরাদ্দ ২ হাজার ২৭২ কোটি ৪ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয় একটি করে মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। তিনি বলেন, অন্যান্য সব ধর্মের জন্যও আমাদের সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দেশে সব ধর্মের মানুষ যার যার ধর্ম চর্চা করছে। আজ বিশ্বে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যারা আগামীতে হজে যাবেন তারা হজের পাশাপাশি সউদী আরবের সব নিয়মকানুন এবং আইন সম্পর্কে জানতে পারবেন। হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, ধর্ম সচিব কাজী এনামুল হাসান, বাংলাদেশে নিযুক্ত সউদী রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আলদুহাইলান। বিভিন্ন হজ এজেন্সি ও আর্থিক সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তিন দিনব্যাপী হজ ও ওমরাহ মেলায় প্রায় ১৫০টি স্টল এবং প্যাভিলিয়ন স্থাপন করেছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হজযাত্রীদের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে। পরে হাব সভাপতি বিমান প্রতিমন্ত্রী, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী, সউদী রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) মো. মতিউল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. আব্দুল আউয়াল হাওলাদার, ইফার ভারপ্রাপ্ত ডিজি মো. মুনিম হাসান, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (হজ) আবুল কাসেম মো.শাহীন, সিনিয়র সহকারী সচিব এস এম মনিরুজ্জামান, হাবের সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী, সহসভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান, মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদার, যুগ্ম মহাসচিব আবু তাহের ও অর্থ সচিব আব্দুল কাদের মোল্লা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।