Inqilab Logo

বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

দুর্ভিক্ষের প্রচারে আতঙ্ক ছড়াবে, সুযোগ নেবে স্বার্থান্বেষীরা : সানেম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০৫ এএম

দেশে দুর্ভিক্ষের কোনো শঙ্কা নেই বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। তবে দুর্ভিক্ষের কথা বেশি উচ্চারণ না করার তাগিদ দিয়ে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক বলেছেন, এই কথা বেশি বললে মানুষ আতঙ্কিত হবে। স্বার্থান্বেষীরা এর সুযোগ নিতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি: উদ্বেগের জায়গা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে টালমাটাল বিশ্বে খাদ্য সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ডবিøউএফপি দেশে দেশে সঙ্কটের আশঙ্কা করছে, এমনকি দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাসও আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নানা সময় বিশ্বে দুর্ভিক্ষ আসছে জানিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন, যেটি নিয়ে রাজনৈতিক বাদানুবাদ চলছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দুর্ভিক্ষ আসছে না, দুর্ভিক্ষের মধ্যেই আছে দেশ।
সানেম প্রধান বলেন, দেশে দুর্ভিক্ষ হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে দুর্ভিক্ষের কথা বারবার বললে আতঙ্ক তৈরি হয়। এতে একটি গোষ্ঠী সুযোগ নিতে পারে। দুর্ভিক্ষ না হলেও সাময়িক সময়ের জন্য কোনো কোনো জায়গায় খাদ্যসঙ্কট হতে পারে। এমন আশঙ্কা থাকলে আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেও বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বাড়ার যে তথ্য সরকার জানিয়েছে, তার সুফল সবাই পায়নি বলে মনে করে সানেম। তারা বলছে, এই সময়ে স্বল্প আয়ের মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। মূল প্রবন্ধে সেলিম বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কটে স্বল্প আয়ের মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। তাদের খাদ্যতালিকা থেকে মাছ-মাংস বাদ দিতে হচ্ছে। তবে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলার হলে মাছ-গোশত কীভাবে বিলাসী পণ্য হয়?

উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও প্রকৃত মজুরি কমে যাওয়ায় খাদ্যনিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলেও মনে করেন সানেম প্রধান। তিনি বলেন, ফেব্রæয়ারি থেকে মূল্যস্ফীতি ৬ থেকে সাড়ে ৯ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে মূল্যস্ফীতি আরও বেশি। এটা কমিয়ে দেখানো হচ্ছে-এমন বিতর্কও আছে।
ভিয়েতনাম, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায় মূল্যস্ফীতির হার বাংলাদেশের চেয়ে কম জানিয়ে তিনি বলেন, অক্টোবরে মূল্যস্ফীতির হার ভারতে ৬ দশমিক ৭৭, ইন্দোনেশিয়ায় ৫ দশমিক ৭১ এবং ভিয়েতনামে ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর বাংলাদেশে ছিল ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।

সঙ্কট উত্তরণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়িয়ে স্বল্প মেয়াদে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এই কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসার পরামর্শও দেন সেলিম। তিনি বলেন, কারণ, অনেকেই নতুন করে খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকিতে পড়বে।
সেমিনারে জানানো হয়, রফতানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ওপর ধারাবাহিক জরিপ করেছে সানেম। সেই ফলাফল তুলে ধরে সেলিম রহমান বলেন, পোশাক শ্রমিকদের খাদ্যনিরাপত্তার সূচক নিম্নমুখী। তার মানে শ্রমিক ও তার সন্তানেরা আগের চেয়ে কম খাবার খাচ্ছেন। শ্রমিকদের মাসিক মজুরিও কমেছে। ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার কারণে শ্রমিকের কর্মঘণ্টা কমেছে।

সামনের দিনে রফতানি ও প্রবাসী আয়ে সুখবর নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, পণ্য আমদানির ঋণপত্র কমেছে। তার মধ্যে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান কমবে। বিদেশি ঋণের কাঠামোও পরিবর্তন হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে রফতানি ও প্রবাসী আয় না বাড়লে কয়েক বছর পর এই ঋণ পরিশোধের জন্য অর্থনীতিতে বাড়তি চাপ তৈরি হবে। রিজার্ভের পতন ঠেকানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, মধ্যমেয়াদে রাজস্ব ও ব্যাংক খাতে সংস্কার আনতে সরকারের সদিচ্ছা লাগবে। বর্তমান সঙ্কট থেকে উত্তরণে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে উচ্চপর্যায়ের কমিটি করার পরামর্শও দেন সানেম প্রধান।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ