Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

হুন্ডি রোধে ২ শতাধিক হিসাব জব্দ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০২২, ১০:০৩ এএম

অবৈধ পথে প্রবাসী আয় দেশে আনাকে নিরুৎসাহিত করতে এ পর্যন্ত মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পাঁচ হাজারের বেশি এজেন্টশিপ বাতিল করা হয়েছে। এবার এসব অবৈধ এজেন্টের সুবিধাভোগীদের হিসাব জব্দ করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বুধবার এসব এজেন্টের সুবিধাভোগী দুশ’ হিসাব ফ্রিজ করেছে বিএফআইইউ। সব মিলিয়ে চলতি বছরের এই পর্যন্ত ২৩০টি হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে সবসময়ই প্রবাসীদের উৎসাহ ও বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। এরপরও সুফল মিলছে না। এজন্য হুন্ডি প্রতিরোধে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ পর্যন্ত নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে চলতি বছর ২৩০টি হিসাব জব্দ করা হয়েছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যাদের হিসাব জব্দ করা হয়েছে তাদেরকে অবৈধ চ্যানেল ব্যবহার না করে যেন বৈধ চ্যানেল ব্যবহার করে সে বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণের জন্যই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো শুরু করে আমাদেরকে জানালে আমরা হিসাবগুলো আবার চালু করে দেব।’

এদিকে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠালে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগও (সিআইডি) সম্প্রতি বলেছে, বিকাশ, নগদ ও রকেটের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্তত পাঁচ হাজার এজেন্ট অবৈধ উপায়ে বিদেশ থেকে অর্থ আনা ও বিদেশে অর্থ পাঠানোয় জড়িত। ফলে এগুলোর এজেন্টশিপ বাতিল করা হয়েছে।

এসব এজেন্টের মাধ্যমে চার মাসে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার প্রবাসী আয় বিতরণ হয়েছে। অর্থাৎ চার মাসে ২৫ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশ। আর এক বছরে প্রায় ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বা ৭৮ হাজার কোটি টাকা দেশেই আসেনি। হুন্ডির সঙ্গে জড়িত ১৬ জনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‘হুন্ডি কারবারিরা’ এখন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গ্রাহকের এমএফএস হিসাবের মাধ্যমে টাকা পৌঁছে দিচ্ছে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা হিসাব ব্যবহার করেও হুন্ডির টাকা লেনদেন হয় বলে জোর অভিযোগ আছে।

করোনার সময় অবৈধ চ্যানেল বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স অনেক বেশি এসেছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই সক্রিয় হতে থাকে অবৈধ মাধ্যমগুলো। বাড়তে থাকে হুন্ডির প্রবণতা।

সাম্প্রতিক সময়ে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের পরও হুন্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ প্রেরণ থামছে না। বিভিন্ন দেশে হুন্ডি কারবারিদের অপতৎপরতার কারণে প্রবাসী আয়ের একটা বড় অংশ দেশে আসছে না। এর পরিবর্তে দেশে আসছে স্থানীয় মুদ্রায় অর্থ পরিশোধ করে দেয়ার সংকেত কিংবা মেসেজসংবলিত নির্দেশনা। সেই নির্দেশনা মেনে হুন্ডি কারবারিদের স্থানীয় প্রতিনিধিরা প্রবাসীর স্বজনের কাছে সরাসরি কিংবা তার নিজস্ব মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের মাধ্যমে অর্থ পৌঁছে দিচ্ছে।

মোবাইলে বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করে এই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ার নাম দেয়া হয়েছে ডিজিটাল হুন্ডি।

এমন অবস্থায় বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোকে উৎসাহিত করতে বিদেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা, সাবসিডিয়ারি ও একচেঞ্জ হাউসের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ সাতদিনই স্বজনদের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেয়ার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে।

এছাড়া যেসব দেশে বাংলাদেশের ব্যাংকের শাখা, সাবসিডিয়ারি ও ড্রয়িং অ্যারেঞ্জমেন্ট (একচেঞ্জ হাউস) চালু রয়েছে, সেসব দেশে এ সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং রেমিট্যান্সের জন্য সম্ভাবনাময় দেশগুলোতে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর শাখা, সাবসিডিয়ারি, ড্রয়িং অ্যারেঞ্জমেন্ট চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ