Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষার্থী ভর্তিসহ ব্যাপক অনিয়ম : গণস্বাস্থ্য নগর কেন্দ্র, হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

 শিক্ষার্থী ভর্তিসহ নানা অনিয়মে সঙ্গে জড়ানোর তালিকায় এবার নাম এসেছে গরীবের চিকিৎসালয় খ্যাত গণস্বাস্থ্য নগর কেন্দ্র, হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধে। শুধু ভর্তিতে অনিয়মই নয় পিওরিফায়ার মেশিন, ক্রেস্ট ক্রয়সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে উঠেছে। এ সব অনিয়মের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরসহ সংশ্লিস্ট বেশীরভাগ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা পড়েছে অসংখ্য অভিযোগ। খোদ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ট্রাস্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগগুলোর নথি থেকে জানা যায়, দুর্নীতির মূল হোতা গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইস-প্রিন্সিপাল ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার (মনজু)। তিনি একাধারে গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারের সমন্বয়কারী, আরএনএ বায়োটেক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের পরিচালক এবং এফোরটেবল হেলথ ট্রাস্টি কমিটির সদস্য।
অভিযোগ সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা যায়, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমবিবিএস কোর্সের জন্য নির্ধারিত ৬০টি আসনের বিপরীতে ১১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়েছেন। বিদেশী শিক্ষার্থীদের কোটায় অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে ভর্তি করে নিজের পকেট ভারি করেছেন।
রাব্বি হাসান নামে এক শিক্ষার্থী জানান, বাবা লন্ড্রির কাজ করেন। তার পক্ষে নিজ খরচে মেডিকেলে পড়া সম্ভব নয়; তাই মেধাবী গরিব কোটায় গণস্বাস্থ্য নগর কেন্দ্র, হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে আবেদন করেন। কিন্তু তাকে না ডেকে বলা হয় কোটা শেষ। এর মধ্যে সাধারণ ভর্তিও শেষ। পরে জানানো হয়, বিদেশী কোটায় ভর্তির সুযোগ আছে। এ জন্য তার কাছে ৩৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। উপায় না পেয়ে জমি বিক্রি ও আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে ভর্তি হয় রাব্বি হাসান। এটি শুধুমাত্র রাব্বি হাসানেরই নয় অধিকাংশ ভর্তির ক্ষেত্রে এভাবে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রিট চলমান থাকলেও রায়ের অপেক্ষা করেননি ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতরা হাইকোর্টের একটি রায় নিয়ে অতিরিক্ত এই ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করার সুযোগ নেয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এক্ষেত্রে আদালতের যে কোন আদেশ বা নিষেধ বাস্তবায়ন করতে হলেও সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেয়া বাধ্যতামূলক। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অনুষদ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না নিয়েই এবছর ১১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এমনকি মন্ত্রণালয় থেকে এন্ডোর্স করা হয়নি। একই সঙ্গে গর্ভনিং বডির সঙ্গে কোনো আলোচনাও করা হয়নি। শেষ মুহুর্তে গভনিং বডির বৈঠক করা হলেও বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল অনুষদ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিনিধিরা এতে একমত হননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল অনুষদ ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদ ছাড়া হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের কোনো সুযোগ নেই। এর বিরুদ্ধে দুই প্রতিষ্ঠানই হাইকোর্টে আপিল করেছে।
ডা. মুহিবের আর্থিক দুর্নীতির নথি থেকে দেখা যায়, গণস্বাস্থ্য ডায়ালাইসিস সেন্টারে পানি পরিশোধনের জন্য প্রতিটি পিওরিফায়ার কেনা হয়েছে ৭০ হাজার টাকা করে। অথচ বাজারে এসব পিওরিফায়ার সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। এমনকি অনুসন্ধানে জানা যায়, বাজার ঘুরে ৩০ হাজার টাকার কোটেশনও দিয়েছিল গণস্বাস্থ্যের এক কর্মকর্তা।
গত বছর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে নেফ্রোলজি কনফারেন্সে ১৫০টি ক্রেস্ট কেনা হয়, যার প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে সাড়ে ১২শ’ টাকা করে। যে দোকান থেকে ক্রেস্ট ক্রয় করেছে সেই দোকানেরই একজন জানান প্রতিটির দাম ৩৮০ টাকা করে।
জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলেই তাকে হয়রানি বা চাকরিচ্যুত করা হয়। এর ফলে প্রকাশ্যে অনেকে মুখ খুলতে চান না। গণস্বাস্থ্যের প্রতিটি আয়-ব্যয়ের হিসাব একটি চার্টার্ড ফার্ম দ্বারা অডিট করানোর দাবি জানিয়েছে অনেকেই। অভিযোগ রয়েছে, ২০২১ সালে নগর হাসপাতালের গাড়ি মেরামত বা সার্ভিসিংয়ের জন্য যে টাকা খরচ হয়েছে, গণস্বাস্থ্যের বাকী ৪১টি শাখা মিলিয়েও এত বিল আসেনি। এ বিষয়ে গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টির কাছে লিখিত অভিযোগও জানানো হয়েছে।
দুদকে দেয়া অভিযোগে বলা হয়, ডা. মুহিব উল্লাহ’র বেআইনিভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে নামে- বেনামে বিভিন্ন জায়গায় ফ্লাটের মালিক হয়েছেন। এছাড়া তার পরিবারের সদস্য ও বিশ্বস্ত নিকট আত্মীয়দের নামে ব্যাংক একাউন্টে আত্মাসাতের টাকা গচ্ছিত রেখেছেন।
এ বিষয়ে ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার (মনজু) ইনকিলাবকে বলেন, দায়িত্বে থাকলে এ রকম অভিযোগ আসে। যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে এগুলো মিথ্যা। একটি স্বার্থান্বেষী গ্রæপ এটি করছে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ