Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অসময়ে ছোলার মূল্যবৃদ্ধি

বেড়েছে আটা-চিনিরও

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া প্রতি বছর রমজান মান আসার আগেই দেশের বাজারে বেড়ে যায় ছোলার দাম। মুড়ি, পেঁয়াজু ও বেগুনি ভাজার সঙ্গে ছোলা ভুনার মিশ্রণে ইফতারির মুখরোচক খাবার তৈরি হওয়ায় একটু বাড়তি দাম দিয়ে হলেও ওই এক মাস ছোলা কেনায় কার্পণ্য করেন না রোজদাররা। কিন্তু তাই বলে অসময়েও মূল্যবৃদ্ধি! এবার অনেকটা অসময়েই বেড়েছে ছোলার দাম। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিকেই এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ডলার সঙ্কট ও রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধও ছোলার বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করছেন তারা। ছোলার পাশাপাশি আটা ও চিনির বাজারেও পড়েছে মূল্যবৃদ্ধির খড়গ। ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতির পরেও চিনির বাজারে অস্থিরতা কমেনি, উল্টো বেড়েছে। আবার অনেক দোকানে চিনি পাওয়াও যাচ্ছে না। কয়েকদিনের ব্যবধানে খোলা আটার দাম বেড়ে ৬৪ টাকায় ঠেকেছে। কিছু দিন আগেও ৫৫ টাকায় পণ্যটি কেনা গেছে।

বছরের শুরু থেকেই বাজারে ডলারের দাম বাড়ার পাশাপাশি উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে নাভিশ্বাস ওঠেছে মানুষের। গত কয়েক মাসে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বেড়েছে প্রতিটি পণ্যের। বিশেষত, ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে সীমিত আয়ের মানুষেরা দিশেহারা। কবে এ অবস্থা স্থিতিশীল হবে, তা যেন জানা নেই কারোরই। এবার দাম বাড়ার তালিকায় যুক্ত হয়েছে ছোলা-আটা-চিনি। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের পাইকারি বাজারে ছোলার দাম কেজিপ্রতি প্রায় ১০ টাকা বেড়েছে। বাজারে মোটা চালের কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা এবং মাঝারি চালের কেজি ৫৬ থেকে ৬২ টাকা। অর্থাৎ খোলা আটার দাম মোটা ও মাঝারি চালের দামকেও ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে প্যাকেট আটার দামও কোম্পানিগুলো হুটহাট বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। খোলা চিনি ১১০ থেকে ১১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চিনি চেয়েও কোম্পানির কাছ থেক সরবরাহ মিলছে না। পাইকারি বাজারেও চিনির সরবরাহ কম দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একাধিক পাইকারি পণ্যের বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭৪ থেকে ৭৫ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহেও ছিল ৬৪-৬৫ টাকা। গত রমজান মাসে পণ্যটির দাম ছিল কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৬২ টাকার মধ্যে।

দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ ছোলা আমদানি হয় অস্ট্রেলিয়া থেকে। এছাড়া কানাডা থেকেও ছোলা আসে। গত কয়েক মাস ধরে লাগামহীনভাবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ছোলার বাজারেও আগুন লেগেছে, এমনটিই বলছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। প্রভাব রয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেরও। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, যুদ্ধের কারণে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার বাজারে ছোলার দাম বেড়েছে। আমদানি ব্যয় বাড়ায় স্থানীয় বাজারে পণ্যটির দাম বেড়েছে। গত কয়েক মাসে কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার বাজারে ছোলার দাম প্রায় ৫০ ডলার বেড়েছে। এখন প্রতি টন ছোলা কিনতে ৫৩০ থেকে ৫৫০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত গুণতে হচ্ছে।

এদিকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বলছে, গত এক মাসের ব্যবধানে ছোলার দাম ২০ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ছোলা ৮৫ থেকে ৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ৭০ থেকে ৭৫ টাকার মধ্যে ছিল। সংস্থাটির হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খোলা আটার দাম ৭৮ দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়েছে। অপরদিকে খোলা চিনি নিয়ে টিসিবি পর্যবেক্ষণ বলছে, চিনির বর্তমান মূল্য ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি। এক মাস আগে যা ৯০ থেকে ৯৫ টাকা এবং এক বছর আগে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় কেনা গেছে। এ হিসাব অনুযায়ী বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম ৪৫ শতাংশ বেড়েছে।

রাজধানীর বাজারে নামিদামি ব্র্যান্ডের ভালোমানের খোলা আটার কেজি এখন ৬২ থেকে ৬৪ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর সাধারণ মানের আটা ৬০ থেকে ৬২ টাকা। প্যাকেট আটার দামও রাতারাতি বাড়িয়ে দিচ্ছে কোম্পানিগুলো। দুই কেজির প্যাকেট আটা কোম্পানিভেদে ১২৫ টাকা ১৩০ টাকা বিক্রি করছি। গত সপ্তাহে ছিল ১২০ টাকা। এখানেই শেষ নয়, ডিলাররা জানিয়েছেন কিছুদিনের মধ্যে দাম আরও বাড়বে।

চিনির বাজারের অস্থিরতাও কমেনি। এ বাজারে খোলা চিনি ১১০ থেকে ১১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চিনি চেয়েও কোম্পানির কাছ থেক সরবরাহ মিলছে না। পাইকারি বাজারেও চিনির সরবরাহ কম দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও ১২০ টাকা কেজি দরেও খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে। অনেক দোকানে এখনো চিনি বিক্রি হচ্ছে না।

বছরের ব্যবধানে এ পণ্যগুলোর দাম এত হারে বৃদ্ধি দেখে হতবাক বেশির ভাগ ভোক্তা। পোশাক কারখানা শ্রমিক মো. তানভির বলেন, ভাতের ওপর চাপ কমাতে প্রায়ই রুটি খেতাম। এখন চালের চেয়ে আটার দাম বেশি। অল্প সময়ে দাম অস্বাভাবিকভাবে এত বেড়ে যাচ্ছে, অথচ কেউ যেন দেখার নেই। আমরা ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে আছি।

এদিকে আটা ও চিনির দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপত্তিতে পড়েছে রাজধানীর বেকারিগুলো। বেকারি মালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে দাবি করেন বাংলাদেশ ব্রেড বিস্কুট অ্যান্ড কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি জালাল উদ্দিন। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, আটা-চিনির দাম এতটাই বেড়েছে যে বেকারি পণ্যের দাম না বাড়িয়ে আমাদের উপায় নেই। আলোচনা চলছে, খুব শিগগিরিই হয়তো পাউরুটি, বিস্কুট, কেকসহ বেকারি পণ্যের দাম বাড়ানো হতে পারে।

এছাড়া ছোলার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষেরা পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা দোকানে এক প্লেট ছোলা খেয়ে ক্ষুধা নিবারন করেন। এখন সেই এক প্লেট ছোলার দাম একই থাকলেও কমে গেছে পরিমান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ