পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আগামী বছরকে সংকটের বছর (ক্রাইসিস ইয়ার) আশঙ্কায় সবাইকে তা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকার জন্য ছয় নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন হবে বাংলাদেশে মন্ত্রিসভায় চুক্তি, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে জাপানের সঙ্গে হচ্ছে শুল্ক চুক্তি এবং চিড়িয়াখানা আইন-২০২২ এর খসড়া ও ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড করতে আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক রিপোর্টগুলো বিশ্লেষণ করে এই নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। এদিন মন্ত্রণালয় বিভাগসমূহের ২০২১-২২২ অর্থবছরের কার্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, বৈশ্বিক যে অবস্থাটা আসছে তাতে আমাদের যে প্রবেলম বা ক্রাইসিস দেখা যাচ্ছে সারা বিশ্বে সেক্ষেত্রে আমাদেরকে কিছু ইনিশিয়েটিভ নিতে হবে। ফিনান্সিয়াল টাইমস পত্রিকার অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে ২০২৩ সালের ক্রাইসিসের বিষয়টি মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিশেষ করে রিসেন্টলি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণগুলো যা বলছে যে তিনটি কারণে ২০২৩ সাল খুবই একটা ক্রাইসিস বছর হওয়ার সম্ভাবনা। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক যেহেতু সুদের হার বৃদ্ধি করেছে, করোনা মহামারি অর্থনৈতিক অবস্থা রিকভারি হওয়ার আগেই ইক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার ফলে যে অগ্রগতি হচ্ছে তাতে নেতিবাচক প্রভাব এবং চীন উৎপাদন কমে দিয়েছে যা বিশ্ব বাজারকে প্রভাবিত করছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই তিনটি জিনিষকে বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক যে বিশ্লেষণ আসছে তাতে বলা হচ্ছে ২০২৩ সাল একটা ক্রাইসিস ইয়ার হবার সম্ভাবনা আছে। সবাইকে এ অনুযায়ী প্রস্তুত থাকতে হবে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের কার্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপনের পরে মন্ত্রিসভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভা যে অবজারভেশন দিচ্ছেন সর্বাবস্থাতেই আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমরা যতই খাদ্য আমদানির কথা বলি, এটা ক্রাইসিস থাকবে। যদিও ইউক্রেন এবং রাশিয়াকে খাদ্যের ব্যাপারে ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এটার একটা ম্যাটার করবে। আর ফরেন কারেন্সির একটা ক্রাইসি হচ্ছে কারণে ফেডারেল রিজার্ভের ইন্টারেস্ট বৃদ্ধি হওয়ার ফলে যে সব দেশ লোন নিয়ে কাজ করে বা আমদানি বেশি তাদের দুই দিক দিয়েই অসুবিধা হচ্ছে। একটা হলো আমরা যখন টাকা দিদ্ছি তখন বেশি দিচ্ছি এবং যখন নিচ্ছি তখন কম পাচ্ছি। সে কারণে ডাবল নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট হচ্ছে। সেজন্য আমাদের সবাইকে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। এটার সম্ভাবনাও আছে। আমরা দেখছি কৃষি, মৎস্য, লাইভস্টকে বেশিকিছু নতুন নতুন ভ্যারাইটি আসছে। এগুলেঅ রিপ্লেস করলে উৎপাদন দ্বিগুণের কাছাকাছি চলে যাবে ইনশাল্লাহ।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের যারা বিদেশে যাচ্ছে, আমরা দেন অদক্ষ শ্রমিক না পাঠিয়ে দক্ষ জনবল পাঠাই। তাহলে তাদের জন্য উচ্চ বেতনে কাজ করার সুযোগ থাকবে। যে সব দেশে শ্রমিক পাঠানো হবে সে সব দেশে চাহিদা অনুযায়ী যেন ক্যাপাসিটি বিল্ডিং করা হয়। তাদের সনদগুলো যেন সঠিক প্রতিষ্ঠান থেকে পায়। রেমিটেন্স বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক একটা সার্কুলার জারি করেছে যে রেমিটেন্স পাঠানোর ক্ষেত্রে কাউকে ফি দিতে হবে না। যে ব্যাংকে পাঠাবে সেই ব্যাংকই এটা হ্যান্ডেল করবে কীভাবে তাদেরকে বেনিফিট দেওয়া যায়। যারা রেমিটেন্স পাঠাবে তাদের যেন সহজ শর্তে নাম এবং এনআইডি দিয়ে পাঠানো যায় কিনা? বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়ানো নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, বিনিয়োগের যে সব শর্ত আছে সেগুলো আরও সহজ করা যায় কিনা। আমরা কাজ করছি যে একদম বিডাতেই যাবে বিনিয়োগকারীরা। সেখানে তিন-চারটা উইন্ডো থাকবে, যাতে তাকে অন্য জায়গায় আর যেতে না হয়। খাদ্য মজুত বাড়াতে হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের এখন যথেষ্ট ভালো অবস্থায় আছে। বেসরকারি সেক্টরকেও ১৫ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যারা সাপ্লিমেন্টারি পণ্য আমদানি করে তাদেরকে সেই সব দেশের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে দেওয়া যায় কিনা। খাদ্য আমদানিতে ট্যাক্স কমফোর্টের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, উৎসে কর দিতে হয়। এনবিআরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আলাপ-আলোচনা করে যেন দ্রুত সন্তোষজনক অবস্থায় চলে যায়। অনাবাদী সব জমি চাষের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বৈঠকে ট্যাক্স কমফোর্টের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। আমাদের খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আলোচনা করেছেন যে, উৎসে করা সংক্রান্ত কিছু বিষয় আছে, এগুলো দিতে হয়।এ বিষয়ে এনবিআরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে শিগগিরই যেন সন্তোষজনক ও কমফোর্টেবল একটা প্রভিশনের মধ্য দিয়ে চলে যায়। যারা খাদ্য আমদানি করেন তারা যাতে একটা সুবিধাজনক জায়গায় আসতে পারে।
চাষ না করলে জমি খাস হওয়ার তথ্য গুজব: মন্ত্রিপরিষদ সচিব
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। সম্প্রতি বেশ কিছু জায়গায় একটা বড় গুজব চলছে যে, যেসব জমিতে চাষ করা হবে না সেগুলো খাস হয়ে যাবে। গতকাল (রোববার) কমিশনারদের সভায় কৃষি অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং ভূমি সচিব উপস্থিত ছিলেন। গত দু-তিনদিন আগে রংপুর থেকে ঘুরে এসেছি। আমরা ক্লিয়ার ইন্সট্রাকশন দিয়ে দিয়েছি- কারো জমি চাষ করলো না আর আমি খাস করবো, এ রকম কোনো পদ্ধতি নেই। খাস করার একটা আলাদা পদ্ধতি রয়েছে। সেটা অনেক দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, কোনো জমি খাস করার দরকার হলে তাকে (জমির মালিককে) নোটিশ দিতে হবে, তার কাছে শুনতে হবে। জমিতে চাষ না করলেই সেটা খাস করে ফেলা হবে, এমন কোনো প্রভিশন নেই। এটা একটা ‘গুজব’, যা চারদিকে ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ‘যদি দু-এক জায়গায় কোথাও কেউ এমনটি করেও থাকে তাহলে এরই মধ্যে নির্দেশনা দিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেন এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা না নেয়া হয়। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি ম্যাসেজ দিয়েছেন। আমার কাছেও ম্যাসেজ আসছে। খাস করার চিন্তা-ভাবনা করছে। এটা তো স্টেট অ্যাকুইজেশন টেন্যান্সি অ্যাক্টের ব্যাপার। সেখানে খাস করার প্রভিশন আছে। সেটা অন্য জিনিস। ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি কেউ চাষ করলো না এক বছর, দুই বছর বা তিন বছর এতে খাস করার কোনো সিস্টেম নেই। এটা একটা গুজব।
হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন হবে বাংলাদেশে মন্ত্রিসভায় চুক্তি অনুমোদন
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, শতভাগ হজযাত্রীর ইমিগ্রেশন বাংলাদেশের বিমানবন্দরে করতে সউদী আরবের সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একই সঙ্গে সউদী আরবের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তির খসড়াও অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তিনি বলেন, গত বছর হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশনটা এখানে হয়েছে। এবার চুক্তি হয়েছে এখন থেকে আমাদের হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশন আমাদের এখানেই হবে। এটা একটা বড় অর্জন। গত ২০১১ সালে যখন আমরা হজ করতে গেলাম অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। এখন হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশনের বিষয়টি বাংলাদেশে হওয়ার বিষয়টি স্থায়ীভাবে হলো।
চিড়িয়াখানা ব্যবস্থাপনায় হচ্ছে আইন
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চিড়িয়াখানা সুন্দর ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য আইন হচ্ছে। চিড়িয়াখানা আইন-২০২২ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। চিড়িয়াখানাকে সহজভাবে পরিচালনার জন্য, সুন্দর ও মানুষের উপভোগ্য করার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ আইনটি নিয়ে এসেছে। আইনে ২৮টি ধারা রয়েছে। এ আইনে বন্যাপ্রাণি সংগ্রহের ক্ষেত্রে ২০১২ সালের বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইন বা এর অধীনে প্রণীত বিধিমালা পুরোপুরি অনুসরণ করা হয়, সেই বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে জাপানের সঙ্গে হচ্ছে শুল্ক চুক্তি
তিনি জানান, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে জাপানের সঙ্গে শুল্ক বিষয়ে চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি মাসের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময় এ চুক্তি সই হতে পারে। এগ্রিমেন্ট অন কো-অপারেশন অ্যান্ড মিউচুয়াল অ্যসিট্যান্স ইন কাস্টমস ম্যাটারস’ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে শুল্ক সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান, শুল্ক ফাঁকি রোধ, বাণিজ্য সহজীকরণ ও দু-দেশের সম্পর্কের কথা বিবেচনা করে ‘এগ্রিমেন্ট অন কো-অপারেশন অ্যান্ড মিউচুয়াল অ্যাসিট্যান্স ইন কাস্টমস ম্যাটারস’ চুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। এ চুক্তির মূল বিষয় হচ্ছে এতে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। দু-দেশের মধ্যে প্রতিষ্ঠানিক যোগাযোগ সুসংহত হবে। পণ্যের অবৈধ বাণিজ্য ও চোরাচালান প্রতিরোধে তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।