Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ চট্টগ্রামের হালদা নদীর বিপর্যয়ের আশঙ্কা

বালুতে ভরাট হচ্ছে হালদা নদীর কুম হ্রাস পাচ্ছে নদীর নাব্যতা

আসলাম পারভেজ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) থেকে | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র মা মাছের মেটারনিটি ক্লিনিক হিসাবে পরিচিত বঙ্গবন্ধু মৎস্য হ্যারিটেজ হালদা নদীতে বালু উত্তোলন বন্ধ থাকায় প্রতিনিয়ত নদীর কুমগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে হ্রাস পাচ্ছে নদীর নাব্যতা। নষ্ট হচ্ছে কার্প জাতীয় মাছের ডিম দেয়ার প্রাকৃতিক পরিবেশ। অতি বৃষ্টি কিংবা ভরা জোয়ারে লোকালয়ে প্রবেশ করছে পানি। ড্রেজার মেশিন নয় সনাতন পদ্ধতিতে আগের মত নৌকার মাধ্যমে বালু উত্তোলন করলে নদীর পরিবেশ যেমন ঠিক থাকবে তেমনি ফিরে আসবে নদীর হারানোর নাব্যতা। মা মাছ ফিরে পাবে তাদের চলাচল ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। ফলে ডিম ছাড়ার মৌসুমে বৃদ্ধি পাবে মা মাছের পরিপক্ক ডিম। বর্তমানে কুমগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে মা মাছ ডিম ছাড়া নির্দিষ্ট উপযুক্ত স্থান পাচ্ছে না বলে জানান হালদার পাড়ের বেশ কয়েকজন প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারীরা। একইসাথে জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে হালদা পাড়ের বাসিন্দারা।

সরেজমিনে জানা গেছে, গত ১৫/২০ বছর আগেও নদীর যেসব স্থানে ১৭০ থেকে ৪০০ ফুট গভীরতা ছিল বালু উত্তোলন বন্ধের কারণে সেটা বর্তমানে ৫০ থেকে ৮০ ফুট গভীরতায় নেমেছে। মা মাছের ডিম ছাড়ার দুই কুমের (ঘূর্ণিয়মান গর্ত) মাঝে বালু ভরাট হয়ে চর জমে উঠছে।
যার ফলে মৌসুমে পানির স্রোত না থাকায় মা মাছ ডিম ছাড়ার পুরুষ মাছ তার শুক্রাণু দিলেও কুমের পানি পর্যাপ্ত ঘূর্ণিয়মান না হওয়ার কারণে ডিম অপরিপক্কতা হচ্ছে। একইসাথে ভরাট হচ্ছে সেই কুমগুলো। ফলে মা মাছ পর্যাপ্ত থাকলেও পরিবেশ না পাওয়ায় পুরোদমে ডিম ছাড়ছে না সময়মত। অপরদিকে হালদার গভীরতা হ্রাস পাওয়ায় অতিবৃষ্টি, জোয়ারের পানি ঘরবাড়ি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে পড়ছে স্থানীয় হাজার হাজার মানুষ। নদীর পাড় সংলগ্ন জমিতে ক্ষেত খামার বিশেষ করে খ্যাত হাটহাজারীর মরিচসহ প্রভৃতির চাষাবাদ। ইতিমধ্যে এক সময়ে ডিম আহরণ করার প্রসিদ্ধ স্থান কেরাংতল বাঁক, নয়াহাট কুম, অঙ্কুরিঘোনা, বোবার চর, ছায়ারচর বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে নাপিতের ঘাট থেকে রহমত ঘোনা, মাছুয়াঘোনা থেকে পোড়া আওলিয়া প্রকাশ পোড়ালিখাল, আমতুয়া থেকে কুমারিখাল, কাটাখালি থেকে কাগতিয়া সøুইসগেট পর্যন্ত যেসব কুম বিদ্যমান, যদি বালু তোলার ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে আস্তে আস্তে এসব কুমও বিলুপ্ত হতে পারে। ফলে মা মাছের অভয়াশ্রম কার্প জাতীয় মাছের অন্যতম মৎস্য প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস হবে।
অপরদিকে মা মাছের ডিমের পরিমানও কমে গেছে। জাতীয় নদী ঘোষণার লক্ষ্য নিয়ে সরকার যেসব কাজ করছে তা ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই হালদা পাড়ের সকল পেশাজীবীর দাবি হালদা রক্ষা করতে হলে অনতিবিলম্বে হালদা থেকে ম্যানুয়ালি (ডুবুরি) বা সনাতন পদ্ধতিতে বালু উত্তোলনের ব্যবস্থা নিতে হবে। হালদা পাড়ের প্রবীন ডিম আহরণকারী কামাল সওদাগর, মো. লোকমান, হালদা গবেষক ড. শফিকুল ইসলাম, গড়দুয়ারা ইউপি চেয়ারম্যান সরোয়ার মোর্শেদ তালুকদার, জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা যথাক্রমে ফারহানা লাভলি ও নাজমুল হুদা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহিদুল আলম ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস. এম রাশেদুল আলম ম্যানুয়ালি বালু উত্তোলনে একমত পোষণ করেছেন। এতে হালদার মা মাছ, ডলফিন ও জীব বৈচিত্র রক্ষা পাবে। কর্মসংস্থান হবে বেকারদের সাথে সরকারি কোষাগারে জমা পড়বে অর্থ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এলাকাবাসীর ও ডিম সংগ্রহকারীদের এটাই বড় প্রত্যাশা ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ