পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের যে কোনো পরিস্থিতিতে আত্মবিশ্বাস নিয়ে দায়িত্ব পালন ও জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবিরোধী সরকারের কর্মকা-ে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ করে বলেন, সরকারের কর্মচারীদের জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে। জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর শাহবাগে বিসিএস প্রশাসন একাডেমী মিলনায়তনে ৯৮ ও ৯৯তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেষ বিচার তো তিনি আল্লাহ করবেন। কাজেই এভাবে মানুষকে উজ্জীবিত করতে হবে ও সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদবিরোধী ভূমিকা প্রত্যেককে পালনে সচেষ্ট হতে হবে। তিনি বলেন, ধর্মের প্রকৃত শিক্ষাটাই সবার আগে শিখতে হবেÑ সেটাই পালন করতে হবে। সেটাই কিন্তু আল্লাহর নির্দেশ। কিন্তু মানুষের জীবন নিয়ে নয়, সে দায়িত্ব তো আল্লাহ নিয়েছেন।
শেখ হাসিনা সরকারের জঙ্গিবাদবিরোধী দেশব্যাপী সামাজিক আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, আজকে ধর্মের নামে উন্মাদনা করে মানুষ হত্যা করে একদিকে যেমন ইসলাম ধর্মকে মানুষের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে, তেমনি মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। কাজেই এসবের থেকে মানুষকে কীভাবে দূরে রাখা যায়, সে বিষয়ে মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে আমরা একটা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলছি। যেন ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ কখনও বাংলার মাটিতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, নবীন কর্মকর্তাদের সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করতে হবে। উদ্ভাবনী চিন্তা-ভাবনা সব সময়ই আপনাদের থাকতে হবে। কোনো এলাকায় কোনো জিনিসটা উৎপন্ন হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন নতুন করে আবার একটা উৎপাত শুরু হয়েছে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ। যে কোনোভাবেই হোক বাংলাদেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মুক্ত রাখতেই হবে। সেজন্য আমরা সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করার একটা উদ্যোগ নিয়েছি। এর ফল আমরা পাচ্ছি। কারণ প্রত্যেকটা মানুষই শান্তিতে বসবাস করতে চায়। ইসলাম ধর্ম কখনও মানুষ খুন করতে বলেনি। মানুষের জীবন থাকবে কি থাকবে না, তা নির্ধারণ করার দায়িত্ব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিয়েছেন। এটা তো মানুষের হাতে নেই। এটা মানুষকে বোঝাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। গতানুগতিক ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিশ্বের সঙ্গে আমরা যেন এগিয়ে যেতে পারি, সেই উদ্ভাবনী চিন্তা আমাদের মধ্যে থাকতে হবে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে সরকার কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা আমরা বৃদ্ধি করেছি। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন হচ্ছে। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ আছে।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল শুরু হয়। একটি দেশে বারবার সামরিক ক্যু হয়। ১৯ বার সামরিক ক্যু হয়েছে। সামরিক অফিসার, সৈনিক নির্বিচারে তাদের হত্যা করা হয়েছে। প্রতি রাতেই ছিল কারফিউ। এই হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি আমাদের দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
২০০১-২০০৬ সালের সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক দিনে ১৩ জন সচিবের চাকরি গেলো। সামরিক বাহিনীর অবস্থা তো আরও খারাপ। প্রায় ১ হাজার ২শ’ কর্মকর্তাকে সামরিক বাহিনী থেকে বিদায় দিয়ে দিলো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০০ সালে আমরা এমডিজি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আমরা সরকারে আসার পর প্রতিটি ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে সক্ষম হয়েছি। এবার লক্ষ্য নিয়েছি এসডিজি। এটাও আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। এসডিজি বাস্তবায়নের ওপর আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।
সরকার উদ্ভাবনী দল গঠন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা উদ্ভাবন করবে কীভাবে মানুষকে সহজে ভোগান্তি ছাড়া সেবা দেয়া যায়। নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নিজস্ব উদ্ভাবনী চিন্তা দিয়ে এলাকার জনগণকে সম্পৃক্ত করে কাজ করবেন। যখন যে এলাকায় কাজ করবেন, সে এলাকাকে নিজের এলাকা মনে করে কাজ করবেন।
প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি দেশকে গড়ে তুলতে যারা মাঠে ময়দানে সত্যিকার অর্থে কাজ করবেন, তাদের প্রশিক্ষণ একান্তভাবে প্রয়োজন। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান দেশ গড়ার কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা কী অবস্থায় ছিলাম পাকিস্তান আমলে? তখন আমাদের কোনো অধিকারই ছিল না। বাঙালিরা ছিল সবচেয়ে অবহেলিত। এই অবহেলিত বাঙালির কথাই জাতির পিতা সব সময় চিন্তা করেছেন। আজ প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারের সব ক্ষেত্রেই, সব জায়গায়ই বাঙালিরাই আছি। এমন দিন ছিল পাকিস্তান আমলে, তখন বাঙালিদের কোনও অবস্থানই ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সামরিক ও বেসামরিক উভয় ক্ষেত্রেই বাঙালিরা ছিল সম্পূর্ণভাবে অবহেলিত। কেন্দ্রীয় সচিবালয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে ৬৯২ জনের মধ্যে বাঙালি অফিসার ছিলেন মাত্র ৪ জন। সচিব পর্যায়ে কোনও বাঙালির স্থান পাননি। যুগ্ম সচিব পর্যন্ত মাত্র ৮ জনের মতো ছিলেন। সামরিক ক্ষেত্রে অবস্থা আরও করুণ। কেবল মেজর পদ পর্যন্ত বাঙালি ছিল, একজন মাত্র কর্নেল পদ পেয়েছিল। বাঙালির কথা বলার কোনও অধিকার ছিল না। প্রতিটি ক্ষেত্রে বিরাট বৈষম্য ছিল। তারা আমাদের অবহেলা করত, মনে করত বাঙালিরা আবার কী করবে? কিন্তু ওরাই এই বাঙালির কাছে পরাজিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধে। আমরা বিজয় অর্জন করি, আমরা বিজয়ী জাতি আজ।
তথ্য-প্রযুক্তির অগ্রগতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে আজ ইন্টারনেট সার্ভিস। বঙ্গবন্ধু স্যাটালাইট উৎক্ষেপণ করছি। ঘরে বসে নিজের দেশের মধ্যে যোগাযোগ এবং বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ আমরা করে দিয়েছি। ডিজিটাল সেন্টার বাস্তবায়ন করেছি। কোরবানির গরুও কিন্তু এখন অন-লাইনে বিক্রি হয়।
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্ম সেতু নিয়ে একটা সমস্যা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সঙ্গে। কারণ তারা মনে করে দরিদ্র দেশ পেলেই চাপ দিয়ে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করিয়েই নেবে। দুর্নীতির প্রশ্নটা উঠলো, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, আমাকে দুর্নীতি দেখাতে হবে মুখে বললে হবে না। তারা প্রমাণ করতে পারেনি। আমার কথা ছিল, নিজস্ব অর্থায়নে আমরা পদ্মা সেতু করব। তা করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, নিজস্ব সম্পদ দিয়েই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব, সেই সক্ষমতা আমাদের আছে, এই আত্মবিশ্বাস সকলের মাঝে থাকতে হবে। শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, শিক্ষাই একমাত্র পথ যার মাধ্যমে একটা দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা যায়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন বিসিএস প্রশাসন একাডেমীর রেক্টর ড. এম আসলাম আলম। রেক্টর পদক জয়ের অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন ’৯৮ ও ’৯৯তম কোর্সের রেক্টর পদক জয়ী মো. সোহাগ হাওলাদার ও মো. নাহিদুল করিম।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ’৯৮ এবং ’৯৯তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের শিক্ষার্থীদের মাঝে সনদপত্র এবং শীর্ষস্থান অর্জনকারি মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্রেস্ট বিতরণ করেন। ৯৮তম কোর্সের মেধাক্রম অনুযায়ী প্রথম স্থান অধিকারকারী মো. সোহাগ হাওলাদার, দ্বিতীয় প্রণব কুমার ঘোষ এবং তৃতীয় আসিফ আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ক্রেস্ট গ্রহণ করেন। ৯৯তম কোর্সে প্রথম স্থান অধিকারকারি মো. নাহিদুল করিম, দ্বিতীয় মো. এনামুল হক এবং তৃতীয় মো. মাহফুজুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ক্রেস্ট গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী একাডেমি লাইব্রেরিতে নবনির্মিত মুক্তিযুদ্ধ কর্নারের উদ্বোধন করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।