Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আরো ৫ জনের মৃত্যু হাসপাতালে ৮৮৮

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ক্রমেই তার ভয়াবহতা দেখিয়ে চলেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। হাসপাতালগুলো রোগীর ভীড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে আরো ৮৮৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে মশাবাহিত রোগটিতে মোট তিন হাজার ২৪৮ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ সময় নতুন করে আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯২ জনে।

গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত বুধবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল একই সময়ের মধ্যে সারাদেশে নতুন করে আরো ৮৮৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নতুন ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৪৭৫ জন ঢাকায় এবং ৪১৩ জন ঢাকার বাইরে চিকিৎসাধীন। এ নিয়ে বর্তমানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট তিন হাজার ২৪৮ জন ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৫৩টি ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন এক হাজার ৯১৫ জন। এছাড়া এক হাজার ৩৩৩ জন ঢাকার বাইরে চিকিৎসাধীন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৪৬ হাজার ৪৮৬ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৪৩ হাজার ৪৬ জন। আর এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ১৯২ জন।

অথচ চলতি বছরের শুরু থেকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকলেও বছরের মাঝামাঝি এসে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে রোগটি। বছরের প্রথম পাঁচ মাস সংক্রমণের হার অত্যন্ত কম থাকলেও গত তিন মাসে তা আকাশ ছুঁয়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে প্রাণহানির ঘটনাও। জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কোন মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও পরের তিন মাসে ঘুরে গেছে দৃশ্যপট। জুনে এক জনের মৃত্যু হলেও জুলাইয়ে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় নয়ে। আগস্টে আরও বেড়ে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ জনে। সেপ্টেম্বর মাসে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৪ জনে। অক্টোবর মাসে মৃত্যু হয়েছে ৮৬ জনের। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দশ দিনে এ সংখ্যা ৫১ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১২৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর ফেব্রæয়ারি ও মার্চে এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় মাত্র ২০ জনে। এপ্রিলেও নিয়ন্ত্রণে থাকা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৩ জন ভর্তি হয়েছিলেন। মে মাসে সেই সংখ্যা এক লাফে প্রায় আটগুণ বেড়ে হয় ১৬৩ জন। তবে এতে তেমন দুঃশ্চিতার কারণ ছিল না। কারণ এ সময়ের ব্যবধানে কোন মৃত্যু নেই।

তবে এর পরের মাসে (জুনে) ৭৩৭ জন হাসপাতালে ভর্তির পাশাপাশি মৃত্যু হয় একজনের। জুলাইয়ে এই আরও ভয়াবহ হয় পরিস্থিতি। সে সময়ে ১ হাজার ৫৭১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তির সঙ্গে মৃত্যু হয় ৯ জনের। আগস্ট মাসে রোগী ভর্তির সংখ্যা আগের মাসের তুলণায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। ৩ হাজার ৫২১ জন হাসপাতালে ভর্তির পাশাপাশি মৃত্যু হয় ১১ জনের। সেপ্টেম্বর মাসে ৯ হাজার ৯১১ জন হাসপাতালে ভর্তির সঙ্গে মৃত্যু হয় ৩৪ জনের। অক্টোবর মাসে মৃত্যু হয়েছে ৮৬ জনের। ভর্তি হয়েছেন ২১ হাজার ৯৩২ জন রোগী। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দশ দিনে ৮ হাজার ৪৬২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পাশাপাশি মারা গেছেন ৫১ জন।

চট্টগ্রামে একদিনে ৩ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১০৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু জ¦র। একদিনে নারী, শিশুসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০৬ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে মারা গেছে ৯ জন। আর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭০১ জন।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২ নভেম্বর ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৫০ বছর বয়সী আবুল কালাম নামে এক ব্যক্তি। পরের দিন ৩ নভেম্বর চমেক হাসপাতালে মারা যান ১৩ বছর বয়সী শিশু তৌহিদ। এর একদিন পর ৫ নভেম্বর মা ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বর্ণ নামে ১১ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়। এরপর ৬ নভেম্বর চমেক হাসপাতালে মো রকিব নামে ২৬ বছর বয়সী এক যুবক, একই দিন পার্কভিউ হাসপাতালে আয়েশা সেলিম নামে ৪৫ বছর বয়সী নারী মারা যান। পরে ৮ নভেম্বর মা ও শিশু হাসপাতালে আর্য দত্ত নামে ৭ বছর বয়সী শিশু, ৯ নভেম্বর একই হাসপাতালে জ্ঞানেন্দ্র নাথ মিত্র নামে ৮৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ এবং একই দিন চমেক হাসপাতালে আবিদ নামে ৬ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়।

এখন পর্যন্ত চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসে নয় জন ছাড়াও অক্টোবর মাসে ১১ জন এবং সেপ্টেম্বর মাসে আরও তিন জনের মৃত্যু হয়। এ ২৩ জনের মধ্যে ছয় জন পুরুষ, আট জন মহিলা এবং নয় জন শিশু রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চমেক হাসপাতালে ৩৫ জন এবং অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালে ৭১ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ পর্যন্ত তিন হাজার ৩৭৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন।

ডেঙ্গুর ভয়ঙ্কর বিস্তারের মধ্যেও নির্বিকার সিটি কর্পোরেশন। মশা মারতে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই। চিকিৎসকেরা বলছেন, ডেঙ্গু জ¦রের শুরুতে গুরুত্ব না দেয়ায় এবং যথাযথ চিকিৎসা না নেয়ায় পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। আর এ কারণে মৃত্যু এবং শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। এ পর্যন্ত যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই জটিল পরিস্থিতি নিয়ে হাসপাতালে গেছেন। সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম চলছে। আমরা চেষ্টা করছি মানুষকে সচেতন করার।

 

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ