পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ডি ডব্লিউ : সউদী আরব জার্মানিতে মৌলবাদী ইসলামী গ্রুপগুলোকে সরাসরি সমর্থন দিচ্ছে বলে একটি গোয়েন্দা রিপোর্টে জানা যাবার পর সউদী আরবের প্রতি জার্মানির নীতিতে পরিবর্তন ঘটতে পারে। এ প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে রিয়াদের কাছে অস্ত্র বিক্রির বিষয়টি। মূলত সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা রিপোর্টটি ফাঁস হওয়ার পর মঙ্গলবার মধ্যপ্রাচ্যের কিছু প্রধান অংশীদারের সাথে বার্লিনের সম্পর্ক গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে। ঐ রিপোর্টে জার্মানিতে সালাফি আন্দোলনের সাথে সউদী আরব, কুয়েত ও কাতার সরকারের সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ইসলামী মৌলবাদীদের ধর্মপ্রচার উদ্যোগকে সমর্থন করছে বলে দীর্ঘদিন থেকে সন্দেহ করা হচ্ছিল। জার্মান সরকারের পক্ষে জার্মানির অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দেয়া রিপোর্টে তিনটি সালাফি সংগঠনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলো তাদের স্বদেশে সরকারী দফতরগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। রিপোর্টে আরো বলা হয় যে বিশ^ব্যাপী ধর্মান্তরকরণ সউদী আরবের রাষ্ট্রীয় উদ্দেশ্য ও পররাষ্ট্র নীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। রিপোর্টে আভাস দেয়া হয় যে সালাফি সংগঠনগুলো ইউরোপ ও জার্মানিতে তাদের কার্যক্রমের সম্প্রসারণ অব্যাহত রাখবে। জার্মানির বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএনডি ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা রিপোর্টের উদ্ধৃতাংশের সত্যতা নিশ্চিত করা বা রিপোর্টের অধিকতর বিশদ বিবরণ দিতে অস্বীকার করে বলেছে, এতে শুধু সরকারকে প্রদত্ত তথ্য রয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট সালাফিজম সম্পর্কে হুঁশিয়ারি গুরুত্বের সাথে নেয়া উচিত।
থিংক ট্যাংক জার্মান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস-এর সেবাস্টিয়ান সনস ডয়েটশে ভেলেকে বলেন, আমি মনে করি এ সব রিপোর্ট বিশ^াসযোগ্য। এটা সুবিদিত যে কয়েক দশক ধরে সউদী আরব বিশ^ব্যাপী ধর্মপ্রচারের কাজ করছে। বেসরকারী ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে ও ধর্মপ্রচারকদের বিদেশে পাঠিয়ে তা করা হচ্ছে। সউদী আরব নিজেকে মুসলিম বিশে^র সুন্নীদের নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়।
রিপোর্টে বলা হয়, সংগঠনগুলোর একটি কুয়েতী রিভাইভাল অব ইসলামিক হেরিটেজ সোসাইটির ধর্মপ্রচার কাজ ও জিহাদিদের সহিংসতায় সমর্থনের মধ্যে পার্থক্য করা অসম্ভব। সর্বশেষ আনুমানিক হিসেবে জার্মানিতে সালাফিস্টদের সংখ্যা ১০ হাজারের কিছু নিচে। রাজনীতিকরা একমত যে তারা একটি সম্ভাব্য ঝুঁকি।
পার্লামেন্টের সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক সদস্য ও মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ রলফ মুতজেনিশ বলেন, বিপদটা আসল এবং তা উপেক্ষা করা উচিত নয়। বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের কাছে আভাস ও সাক্ষ্য রয়েছে যে জার্মান সালাফিস্টরা সউদী আরব, কুয়েত ও কাতার সরকারের অনুমোদিত সাহায্য পাচ্ছে। তা পাচ্ছে অর্থের আকারে, ইমাম প্রেরণ এবং কোরআন স্কুল ও মসজিদ নির্মাণের মধ্য দিয়ে।
একটি গ্রুপ রয়েছে যাদের সম্পর্কে কিছু পর্যবেক্ষকের শংকা যে তারা বিশেষ করে উগ্রপন্থা অবলম্বনে সক্ষম।
উদ্বাস্তু বিষয়ে উদ্বেগ জার্মানি সংকট অঞ্চল থেকে বিশেষ করে সিরিয়া থেকে ২০১৫ সালে ৯ লাখ উদ্বাস্তু গ্রহণ করেছে। যদি তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে তারা ইসলামী মৌলবাদের জন্য সম্ভাব্য উর্বর ক্ষেত্র হতে পারে। অভ্যন্তরের লোকজন বলছেন যে জার্মানিতে কিছু ইমাম যেভাবে ইসলামের রক্ষণশীল ব্যাখ্যা করছেন তা দেখে সিরীয় উদ্বাস্তুরা কেনো কোনো সময় বিস্মিত হচ্ছেন।
মুতজেনিশ বলেন, বিপদ বিদ্যমান এবং এ ব্যাপারে আমাদের পাল্টা ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে উদ্বাস্তুদের উগ্রবাদী হওয়া থেকে বিরত রাখা এবং তাদের সফল একীকরণ। এটা অর্জনের জন্য আমাদের পেশাদারী প্রতিরোধ ও উগ্রবাদ-বিমুক্তকরণ কর্মসূচি প্রয়োজন। বাস্তব অর্থ হচ্ছে স্কুলগুলো, সরকারী প্রশাসন, পুলিশ, যুব কল্যাণ সংস্থা, কারাগার ও সংস্কার স্কুলগুলোতে বিশেজ্ঞের জন্য আরো অর্থ ও সম্পদ প্রয়োজন।
সউদী রাজপরিবার আঠারো শতক থেকে সালাফিজমের সউদীরূপ ওয়াহাবিজমের সাথে জোটবদ্ধ। তবে যদিও জার্মান গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ধর্মপ্রচার আন্দোলনের প্রতি সমর্থন সউদী আরবের দীর্ঘদিনের পররাষ্ট্রনীতির অংশ, কিন্তু সনস মনে করেন না যে জার্মানির ক্ষেত্রে রিয়াদের বিশেষ কোনো লক্ষ্য আছে।
এ মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, সউদী প্রভাবকে খাটো করে দেখা আমাদের উচিত নয় যদিও আমি মনে করি না যে জার্মানি ওয়াহাবি ধর্মান্তরকরণের প্রধান লক্ষ্য। অতীতে ইসলামী জগতে, এশিয়া, বলকান অঞ্চল ও আফ্রিকায় এটা সব সময়ই ছিল। আমি মনে করি ভবিষ্যতে ঐ সকল এলাকাতেই তা ক্রমবর্ধমানভাবে সম্পৃক্ত বলে প্রমাণিত হবে।
বিএনডি এ বছরের শুরু থেকেই তাদের ভাষায় বর্ধিত সউদী হস্তক্ষেপবাদিতার দিকে লক্ষ্য রাখছে। ফাঁস হওয়া রিপোর্ট এ ব্যাপারে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে জার্মান সরকারের উপর ক্রমবর্ধমান চাপ সৃষ্টি করছে।
সময়োচিত ফাঁস
জার্মানিতে ইসলামী মৌলবাদ ছড়াতে সউদী আরবের অভ্যন্তর থেকে চেষ্টার ব্যাপারে জার্মানি কখনোই সচেতন ছিল না। বহু লোকই গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নের সম্মুখীন মধ্যপ্রাচ্যের এমন মিত্রদের জার্মানির অস্ত্র প্রদানের বিরুদ্ধে আপত্তি করেছে।
ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা রিপোর্টের প্রেক্ষিতে কি এ দু’টি বিষয়কে সংশ্লিষ্ট করা যেতে পারে?
মুতজেনিশ বলেন, জার্মান সরকার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রশ্নবিদ্ধ সরকারগুলোকে তাদের সমর্থন (সালাফিদের প্রতি) বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। এ প্রেক্ষিতে মোদ্দা যে প্রশ্নটি উত্থিত হয়েছে তা হল এ সব দেশ ও অন্য সংকট অঞ্চলে আমাদের আমাদের অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখা উচিত কিনা। আমি মনে করি, জার্মান সরকারের পরিষ্কার কথা বলা উচিত।
নিরাপত্তা সম্প্রদায়ের মধ্যকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রগুলো মনে করেন যে গোয়েন্দ রিপোর্ট ফাঁস হওয়ার সময়টি দুর্ঘটনাজনিত ছাড়া আর কিছু নয়। গোয়েন্দা কম্যুনিটি মধ্যে সউদী আরবে জার্মানির অস্ত্র দেয়ার বিরোধিতা ক্রমেই বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে এবং রিপোর্টের অংশবিশেষ প্রকাশ সম্ভবত বার্লিনে রাজনীতিকদের হাত বন্ধ করার চেষ্টা।
সনসও মনে করেন যে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের সময় হয়ত এসেছে।
সনস বলেন, সরকারকে দেখাতে হবে যে সউদী আরবের মত এক কঠিন অংশীদারের সাথে আচরণে তাদের স্পষ্ট কৌশল রয়েছে। আমার দৃষ্টিতে অস্ত্র রফতানি বন্ধ করতে হবে। সেখানে রাষ্ট্রীয় সফরের প্রতিও নজর দিতে হবে। মানবাধিকার ও ওয়াহাবিদের ধর্মান্তরকরণের এটা গুরুত্বপূর্ণ।
তবে বার্লিন মধ্যপ্রাচ্যে তাদের একজন শক্তিশালী মিত্র থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হওয়া ঝুঁকি নেবে, এমন সম্ভাবনা কম। সনস বলেন, আমরা ভুলে যেতে পারি না যে সউদী আরব এ অঞ্চলে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। আমরা পছন্দ করি বা না করি, এ দেশটিকে ছাড়া আমাদের কিছু করার উপায় নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।