পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একযোগে ১০০টি সেতু উদ্বোধনকে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা উল্লেখ করে বলেছেন, এটি দেশের সার্বিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে। সবচেয়ে বড় কথা হল আমরা ১০০টি সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নকে দ্রুততর করতে পারবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোনো দুর্যোগে মানুষকে সাহায্য করা সহজ হবে, পণ্য পরিবহন এবং বিপণন ও দ্রুত এবং সহজ হবে। সেতুগুলো রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করেছে, কারণ, এগুলো ৩৩টি রুট ফেরি পরিষেবা থেকে মুক্ত করেছে, যা, সড়ক যোগাযোগকে অবাধ, দ্রুত, সহজ এবং নিরাপদ করবে।
গতকাল গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ৮৭৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৫টি জেলায় ১০০টি সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পর প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সেতুগুলো জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করবে।
সেতুগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৬টি, সিলেট বিভাগে ১৭টি, বরিশাল বিভাগে ১৪টি, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে সাতটি, ময়মনসিংহ বিভাগে ছয়টি এবং রংপুর বিভাগে তিনটি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত প্রায় ১৪ বছরে আমরা বিভিন্ন মহাসড়কে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩০৩ মিটার সেতু নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ এবং ২১ হাজার ২৬৭ মিটার কালভার্ট নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ করেছি। তাছাড়া, বহু সড়ককে সরকার মহাসড়কে উন্নীত করেছে যাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়।
এ সময় বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা বাংলাদেশের যেন খুব বেশি ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থেকে উৎপাদন বৃদ্ধি, সাশ্রয়ী ও মৃতব্যয়ী হওয়ার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিচ্ছে তা মোকাবিলায় বেশি বেশি খাদ্য উৎপাদনের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আঘাতটা আসবেই। কারণ, বিশ্ব এখন একটি গ্লোবাল ভিলেজ। কাজেই, কোনও জায়গায় একটা সমস্যা দেখা দিলে এর অভিঘাতটা বাংলাদেশেও এসে পড়ে। পাশাপাশি প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারে খুবই সাশ্রয়ী হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের প্রত্যেকটা এলাকায় আপনারা যত পারবেন খাদ্য উৎপাদন করবেন। তরিতরকারি যেটা পারেন উৎপাদন করবেন, হাঁস মুরগি, গরু, ছাগল, ভেড়া- যেটা পারেন সেটা পালন করতে হবে। অর্থাৎ নিজেদের খাদ্য সংস্থান নিজেদের করার চেষ্টা করতে হবে। কেননা, বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিচ্ছে এর ধাক্কা যেন বাংলাদেশকে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে।
তিনি বলেন, সরকার দেশের যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি, তৃণমূলের মানুষের জন্য দেশের যে উন্নয়ন করা হয়েছে তার সুফল পাচ্ছে দেশের মানুষ এবং সরকার কাজ করছে বলেই মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশে আর কোনও অভাব হয়নি। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের ফলে পার্বত্য অঞ্চলেও উন্নয়ন হচ্ছে। সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নয়ন হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। তিনি বলেন, সরকার এমনভাবে সেতু সড়ক ও মহাসড়কগুলো নির্মাণ করছে, যেন শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, আমরা এশিয়ান হাইওয়ে এবং এশিয়ান রেলের সঙ্গে যুক্ত হতে পারি। কারণ, ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমাদের যোগাযোগ যাতে আরও এগিয়ে যেতে পারে সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছি। আমরা বাংলাদেশটাকে উন্নয়নের জন্য রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেভাবেই কাজ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল না, সেখানে সেটা করেছি। কেননা, দুর্গম এলাকাতে পর্যন্ত আমরা ব্রডব্যান্ড এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। এ কারণেই আজ বিভিন্ন জেলা যুক্ত করে একযোগে ১০০টি সেতুর উদ্বোধন করতে পারছি।
সারা দেশে কানেক্টিভিটি বাড়াতে তার সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে, সড়ক, নৌ এবং আকাশপথে যোগাযোগের বাড়াতে তার সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।
সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু নির্মাণকাজ সমাপ্তকরণসহ খুলনা, পাকশী ও আশুগঞ্জে তিনটি বৃহৎ সেতু নির্মাণ করা হয়, যা মহাসড়ক নেটওয়ার্ককে নিরবচ্ছিন্ন করে তোলে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তার সরকার ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে একুশ বছর পর ক্ষমতায় এসেই সে সময়ে ১৯ হাজার বৃহৎ, মাঝারি, ছোট সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ করে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এসময় গণভবনের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সুনামগঞ্জ, বরিশাল, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম জেলা প্রান্ত যুক্ত ছিল। সুবিধাভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করার সময় প্রধানমন্ত্রী চলমান কোভিড-১৯ মহামারি থেকে উদ্ভূত বৈশ্বিক সংকট এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দা এবং বিশ্বে খাদ্য সংকট সৃষ্টির যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা থেকে পরিত্রাণ পেতে সকলকে সাশ্রয়ী এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার পাশাপাশি সার্বিক উৎপাদন বাড়াতে তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
এসময় ডেঙ্গু প্রসঙ্গেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যেসব জায়গায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা গেছে সেসব এলাকায় ঘরবাড়ি এবং চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন এবং মশারি টানিয়ে ঘুমাতে যান।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী সেতুগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন। অনুষ্ঠানে সেতুর ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
খাগড়াছড়ি জেলা সংবাদদাতা জানান, খাগড়াছড়িতে নবনির্মিত ৪২টি পাকা সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় জেলা শহরের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সারা দেশের সঙ্গে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এসব সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জুমচাষি অঞ্জলি ত্রিপুরা বলেন, আমদের পাহাড়ের উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী শহরে নিতে পারতাম না। শিশুদের স্কুলে যেতে অনেক অসুবিধা হতো। সেতু হওয়ায় যাতায়াতসহ পাহাড়ে ফসল পরিবহনে সহজ হয়েছে। খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. খলিলুর রহমান বলেন, পাহাড়ি জেলার বেইলি ব্রিজগুলো ছিল ৪ দশক আগের। এগুলো পুরোনো হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সময় সড়কে দুর্ঘটনা ঘটতো। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে যান চলাচল বন্ধ থাকতো। বর্তমান সরকার নতুন পাকা সেতু করে দেওয়ার কারণে এসব দুর্ঘটনা কমে গেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে পাকা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপদ বিভাগ। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জরাজীর্ণ পুরোনো সব সেতুর পরিবর্তে তৈরি হয়েছে ৪২টি পাকা সেতু। সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উসৈসিং, টাস্কপোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা, উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক প্রমুখ।
সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল সকালে রানিগঞ্জ সেতুর উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে কাঙ্খিত স্বপ্নে গড়াগড়ি খাচ্ছে হাওরবাসী। রানিগঞ্জ সেতুসহ মোট সুনামগঞ্জের ১৭টি সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধন উপলক্ষে বিনা টোলে গণপরিবহন চলাচল শুরু করে। পরে পরিকল্পনামন্ত্রী গাড়ি নিয়ে সেতুটি ঘুরে দেখেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী হাওরবাসীকে রানীগঞ্জ সেতুসহ ১৭টি সেতু উপহার দিয়েছেন। রানিগঞ্জ সেতুপথে গণ পরিবহন চলাচল শুরু করেছে। এতে আরও সময় বাঁচানোর জন্য সরাসরি হবিগঞ্জের সাথে সড়ক সংযুক্ত করার চিন্তা করছি আমরা। সড়ক ও জনপথ তথ্য মতে, ২০১৪ সালের ২৫ জুন একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী এই সেতুর ১২৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেন।
পটিয়া (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পটিয়া কালারপোল সেতু উদ্বোধন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বেলা ১২টায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সেতুটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মুমিনুর রহমান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেনসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা। সেতুটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ায় কর্ণফুলী উপজেলা ও বোয়ালখালী উপজেলার সাথে পটিয়ার সড়ক পথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।