Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলতে থাকবে

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা

| প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ হবার নয়। এ বিচার চলতে থাকবে। যেমন করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিচার আজও চলছে। তিনি দেশবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সময় এসে গেছে। দেশবাসীকে আজকে সোচ্চার হতে হবে। শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নয়, যারা যুদ্ধাপরাধীদের লালন-পালন করেছে, যারা তাদের রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে, লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা দিয়েছে, তারাও সমান অপরাধী। যুদ্ধাপরাধীদের যেমন বিচার হয়েছে, এদেরও বিচার বাংলার মাটিতে হবে।
গতকাল বুধবার বিকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে এবং যুদ্ধাপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে এদেশে প্রতিষ্ঠিত করেছে তারা সমান অপরাধী সুতরাং তাদেরও বিচার হবে।
শহীদের রক্ত বৃথা যায় না এমন যুক্তি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, শহীদদের পথ ছিলো সত্য ও সুন্দরের। সত্য ও সুন্দরের পথকে কেউ সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত করতে পারে কিন্তু চিরতরে রুখে দিতে পারে না। আমরা সে পথেই আছি সুতরাং যত বাধা-বিপত্তি আসুক জয় আমাদের নিশ্চিত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে, এ বিচার চলতেই থাকবে। কারণ এ বিচার শেষ হবার নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আজও চলছে। যারা এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে, বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে- তাদের কেউ রক্ষা করতে পারবে না। কারণ এটা ন্যায়ের পথ। যেটা ন্যায় ও সত্য, তার জয় সবসময় হয়, সবসময় হবে। এটাই আমরা বিশ্বাস করি। শহীদ বুদ্ধিজীবী ও লাখো শহীদদের রক্তের শপথ নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা। ইনশাআল্লাহ আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলবোই। তাদের রক্ত কখনো বৃথা যেতে দেবো না। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। শহীদ বৃদ্ধিজীবীসহ একাত্তরের সকল শহীদদের রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে।    
শেখ হাসিনা বলেন, কোনো আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যায় না। মাঝখানে একটা কালো মেঘ এসেছিলে, কিন্তু সেই মেঘটা সরে গেছে। আশা করি, এই মেঘের ঘনঘটা আর কখনো ওভাবে আসবে না। এই দুর্যোগ দেশের মানুষের জীবনে কখনো আসবে না। আসলে দেশের মানুষই পারবে সেটা মোকাবেলা করতে। সেই চেতনায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, সেই চেতনায় মানুষকে উঠে দাঁড়াতে হবে। যেন কখনো আর কোনদিন কেউ যেন বাংলার মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। সেভাবেই এদেশের মানুষকে গড়ে তুলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাক হানাদার বাহিনীরা এদেশের পথ-ঘাট চিনত না। কারা এদের পথ-ঘাট, বাড়ি-ঘর চিনিয়ে দিয়ে এতো গণহত্যা চালাতে সাহায্য করেছিল তা সবারই জানা। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কিছু বেঈমানের জন্ম না হলে, এদেশীয় আলবদর-আলশামস সৃষ্টি না হতো তবে কোনোভাবেই দেশের এতো বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা সম্ভব হতো না। আলবদর-আলশামসরাই তালিকা তৈরি করে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করতে সাহায্য করেছে। কী বীভৎস কায়দায় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।  
আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরের পরাজিত শত্রুরা তাদের পরাজয় মেনে নিতে পারেনি। তাই ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছে। আমার এখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, যে দেশের জনগণের জন্য বঙ্গবন্ধু সারাজীবন এতো কষ্ট সহ্য করে দেশকে স্বাধীন করলেন, তার বুকে কেউ গুলি চালাতে পারে। জাতির পিতাও কোনদিন বিশ্বাসই করতে পারেনি যে, বাঙালীরা কখনো তার বুকে গুলি চালাতে পারে। অনেকে সতর্ক করলেও বঙ্গবন্ধু সবসময়ই বলতেন, আমাকে কে মারবে? কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত শত্রুর দোসর-কুলাঙ্গাররা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশকে আবার অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী জিয়াউর রহমানের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশের ইতিহাসই পাল্টে দেয়া হয়। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকরে জিয়াউর রহমান একাত্তরের পরাজিত শক্তির পদলেহনকারী, তোষামদকারী ও পক্ষালম্বনকারী যুদ্ধাপরাধীদের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানায়। দীর্ঘ ২১ বছর একটি প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে দেয়া হয়নি। জয়বাংলা ও বঙ্গবন্ধুর নাম মুখ ফুটে কাউকে বলতে দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১০টি বছর সন্ধ্যায় কার্ফিউ দিয়ে দেশ চালানো হয়েছে। ওই সময় কিছু কথিত বুদ্ধিজীবী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীকে গণতন্ত্রের প্রবক্তা বানাতে উঠেপড়ে লেগেছিল। এরাই পেছন থেকে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছিল। জিয়াউর রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, সত্যিকারের কেউ যদি স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হয় বা স্বাধীনতার ঘোষণাও দেয়, সে কীভাবে স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানাতে পারে? স্বাধীনতায় বিশ্বাস করলে কোনোদিনই তা করতে পারতো না। ওই সময় মিথ্যার কুহেলিকা ছড়িয়ে দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছিল।
তাকে হত্যার জন্য বারবার হামলার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে হত্যার জন্য বার বার হামলা করা হয়েছে। আল্লাহ আর দলের নেতাকর্মীদের জন্যই আমি প্রাণে রক্ষা পেয়েছি। মানবঢাল রচনা করে নিজের জীবন দিয়ে নেতাকর্মীরা আমাকে রক্ষা করেছেন। শত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও অনেকে সাহসী হয়ে সামরিক স্বৈরাচারসহ সকল অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। কারণ সবাই বিকিয়ে যায় না। সবাই বিকিয়ে গেলে বাংলাদেশ এতো উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারতো না। তিনি বলেন, মৃত্যু যে কোন সময় আসতে পারে, মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না। আমার প্রধান শক্তিই হলো দেশের জনগণ আর কোটি নেতাকর্মী ও মুজিব আদর্শের সৈনিকরা। তাই স্বাধীনতার চেতনা নিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে সে দল ক্ষমতায় এসে দেশ উন্নত-সমৃদ্ধ হয় আমরা তা প্রমাণ করেছি। আর যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না তারা ক্ষমতায় আসলে দেশ যে পিছিয়ে যায় তাও দেখেছে দেশবাসী। তাদের ক্ষমতা মানেই ছিল ভোগ করা। কিন্তু ক্ষমতা মানেই ভোগ করা নয়, জনগণের কল্যাণ করা। দেশের মানুষের কল্যাণ নয়, উন্নত জীবন পায়, দেশ যাতে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যায় আমার কাছে সেটাই হলো ক্ষমতা। আমাদের একটাই দায়িত্ব হচ্ছে দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতেই হবে। কারণ আমরা যুদ্ধ করে বিজয়ী জাতি।  
জীবনে ধন সম্পদ কিছুই না, মরে গেলে সব ফেলে রেখে যেতে হয়’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আমার বাবা ও মাকে দেখেছি। কখনো নিজেদের কথা চিন্তা করেন নাই। দেশের মানুষের কথাই চিন্তা করেছেন। আমরা এই দেশের মানুষের জন্যই কাজ করে যাচ্ছি। কাজেই আজকে দেশের  যে উন্নতি, এটা ম্যাজিকও না, কোন কিছুই না। যেহেতু আমরা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছি। তাই আমরা জানি এদেশের মানুষ কতো ত্যাগ স্বীকার করেছে। তাদের সেই ত্যাগ আমরা কখনো বৃথা যেতে দেবে না। তাদের ত্যাগকে মহিয়ান করে রাখার জন্যই আমাদেরকে এদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করতেই হবে। এটাই হচ্ছে আমাদের প্রতিজ্ঞা।   
ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আওয়ামী লীগের  নেতৃত্বে বাংলাদেশকে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে যাব। অচিরেই বাংলাদেশ  সে অবস্থানে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিক সিরাজউদ্দীন হোসেনের পুত্র সাংবাদিক শাহীন রেজা নূর ও শহীদ বুদ্ধিজীবী-চিকিৎসক ডা. আলীম চৌধুরীর কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী শম্পা। আওয়ামী লীগের সিনিয়র সকল নেতাই মঞ্চে উপস্থিত থাকলেও কেউই বক্তব্য রাখেননি। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ