পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দি গার্ডিয়ান : আমরা ভেবেছিলাম যুক্তরাষ্ট্র রসাতলে যাওয়া থেকে পিছিয়ে আসবে। আমরা বিশ^াস করেছিলাম এবং নির্বাচন আমাদের নিশ্চিত বোধের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল যে আমেরিকানরা শেষ পর্যন্ত বিশে^র সবচেয়ে ক্ষমতাশালী পদটিকে এক অস্থিতিশীল গোঁড়া, যৌন শিকারী ও ডাহা মিথ্যাবাদীর হাতে তুলে দেবে না।
বিশ^ব্যাপী মানুষ গোটা ২০১৬ সাল ধরে নির্বাচনী প্রচারণার একটানা ভীতিকর পরিস্থিতি দেখছিল আর অপেক্ষা করছিল। তাদের বিশ^াস ছিল যে শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প নামক দুঃস্বপ্ন কেটে যাবে। কিন্তু যে দেশটি তার জন্মলগ্ন থেকে নিজেকে দেখে আসছে বিশ^কে অনুপ্রেরণাদায়ী আলোকবর্তিকা হিসেবে, নিজেদের প্রশংসা করে এমন একটি সমাজ হিসেবে যা বিশে^র সর্বোচ্চ আশা, এমন এক দেশ যা ইতিহাসের বাঁকে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে ন্যায়বিচার প্রবণ হিসেবে, যা কিনা আট বছর আগের একই সকালে বারাক ওবামা স্মরণীয়ভাবে তুলে ধরেছিলেনÑ সেই যুক্তরাষ্ট্র আজ রসাতলে যাওয়ার দিকে পা বাড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র আজ আর বাকি বিশে^র জন্য প্রেরণা নয়, বরং এক ভয়ের উৎস। দেশটি তার প্রথম নারী প্রেসিডেন্টকে বরণ করার পরিবর্তে এমন এক ব্যক্তির কাছে অসাধারণ ক্ষমতা তুলে দিচ্ছে যিনি তার নিজের অজ্ঞতা, বর্ণবাদ ও নারী বিদ্বেষের জন্য সুপরিচিত। তাকে চেনেন এমন যে কেউই তাকে এক মারাত্মক ‘সোসিওপ্যাথ’ বলে বর্ণনা করেন।
খুব শিগগিরই তিনি অসাধারণ ক্ষমতা পেতে যাচ্ছেন। রিপাবলিকানরা তাদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর জয়লাভের জন্য প্রায় কোনো প্রদর্শনী, আগাম ভাষ্য ও ডাটা-সমৃদ্ধ কম্পিউটার মডেলকে তোয়াক্কাই করেনি। তারা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ ও সিনেটের অধিকাংশেই বিজয়ী হয়েছে। ট্রাম্প তার ক্ষমতার চাবুক হাঁকাতে সামান্যই বাধার সম্মুখীন হবেন। তার শক্তির বাপারে কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তিনি হবেন সংযমহীন। বিপুল শক্তির ক্ষমতাকে তিনি তার অহং ও পরিচিতির জন্য ব্যবহার করবেন।
সবচেয়ে স্পষ্ট প্রভাব পড়বে দেশের উপর যা তিনি শিগগিরই শাসন করতে চলেছেন। শুধু ভেবে দেখুন তিনি কি অঙ্গীকার করেছেন। একটি খেদাও বাহিনী ১ কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে জড়ো করবে ও বহিষ্কার করবে যারা কিনা মার্কিন কর্মীবাহিনীর ৬ শতাংশ। প্রথমে তিনি মুসলিমদের আমেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলেন। পরে তা থেকে সরে এসে সন্দেহভাজন দেশগুলো থেকে আসা মুসলমানদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। তিনি মেক্সিকো সীমান্তে বিরাট দেয়াল তোলার কথা বলেছেন। যেসব মহিলা গর্ভপাত চায় তাদের এক ধরনের শাস্তি দেয়ার কথা বলেছেন। যাক তিনি পরাজিত করেছেন সেই হিলারিকে জেলে পাঠানোর অঙ্গীকার করেছেন।
লোকে বলবে যে তিনি যা বলেছেন তার সবই কথার কথা। তবে তারা বলেছেন, নির্বাচনী প্রচারণার গোটা সময় জোর দিয়ে বলা যে অধিকতর মধ্যপন্থী অবস্থানের প্রতি ট্রাম্প হবেন গুরুত্বপূর্ণ, তিনি হবেন অধিকতর প্রেসিডেন্ট সুলভ। তিনি কখনোই তা করেননি। নিশ্চিত যে তিনি এই বিজয়কে তিনি যে সব সময়ই সঠিক, তার সহজাত অনুভূতিই ঠিক, সেগুলো কখনোই চ্যালেঞ্জ করার মত নয়, তার প্রমাণ হিসেবে দেখবেন। তার জন্য মধ্যপন্থী হওয়ার মোটেই কারণ নেই। টমাস জেফারসন, আব্রাহাম লিংকন, ফ্রাংকলিন রুজভেল্ট ও জন এফ. কেনেডির পদ হচ্ছে তার কাছে খেলনার বিষয়। তিনি তার যা খুশি তাই করতে পারেন।
এটাই হবে প্রধানত আমেরিকার অগ্নিপরীক্ষা। তবে তা আমাদের সকলের উপর প্রভাব ফেলবে। রাজনীতি বা সামরিক অভিজ্ঞতাহীন একজন রিয়েলিটি টিভি স্টার তার হাতে খেলনা হিসেবে পাবেন পারমাণবিক বোতাম। স্মরণ করুন, বলা হয়েছে যে ইনিই সেই ব্যক্তি যিনি এক সামরিক ব্রিফিংয়ের সময় কয়েকবার জিজ্ঞেস করেন যে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও কেন তা ব্যবহার করেনি। ইনিই সেই ব্যক্তি যিনি বলেছিলেন আমি যুদ্ধ ভালোবাসি। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ব্যাপারে তার সমাধান ছিল তাদের বোমা মেরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া ও তেল লুট করা।
এই সকালে রিগা, ভিলনিয়াস ও তাল্লিনে উদ্বেগের কথা ভাবুন। গ্রীষ্মে ট্রাম্প নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছিলেন, তিনি ন্যাটোর মূল নীতিতে বিশ^াস করেন না যে কোনো সদস্য দেশের উপর হামলা হলে সবাই মিলে তার জবাব দেবে। তিনি মনে হয় নাটোকে এক মাফিয়া প্রতিরোধ চক্র হিসেবে দেখেন। ক্ষুদে সদস্য দেশগুলো অর্থ না দিলে তারা অরক্ষিত থাকবে। ভøাদিমির পুতিন হচ্ছেন ট্রাম্পের হিরো, যুক্তরাষ্ট্রের ভাবি প্রেসিডেন্টের তিনি আদর্শ নেতা। রাশিয়ার স্বৈরশাসক নিশ্চিতভাবে একে এক বা একাধিক বাল্টিক দেশে হামলা করা ও তার সাম্রাজ্য বিস্তারের সুযোগ হিসেবে দেখবেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ ধরনের পদক্ষেপের প্রশংসা করবেন।
চীনের সাথে এক বাণিজ্য যুদ্ধ ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষিতে শুল্ক আরোপিত হতে যাচ্ছে যা গোটা বিশ^ বাণিজ্য ব্যবস্থাকে বিপন্ন করতে পারে। আমেরিকা সংরক্ষণবাদের দিকে অগ্রসর হয়ে অন্তর্মুখী হতে যাচ্ছে। বাজার এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই তাদের রায় দিয়ে দিয়েছে। তারা ডুবেছে।
আমাদের গ্রহের ব্যাপারে কি হবে? ট্রাম্প মনে করেন যে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে চীনের অপকর্মজনিত ধাপ্পাবাজি। তিনি নির্গমন হ্রাসে কিছুই করবেন নাঃ তিনি বিশ^াস করেন না যে তা আছে।
সব কিছুর বাইরে এই ভীতিকর সিদ্ধান্তের আরেকটি পরিণতি আছে যা কম খারাপ নয়। ট্রাম্পের সাফল্য তার নিজের দেশ ও বাইরে শে^তাঙ্গ জাতীয়তাবাদী ও বর্ণবাদীদের আনন্দিত করেছে। প্রধান ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোতে তার বিজয় কু ক্লাক্স ক্লানের সাবেক বিশিষ্ট নেতা ডেভিড ডিউকের প্রশংসা লাভ করেছে। তিনি টুইটে বলেনঃ ইশ^র ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আশীর্বাদ কর। আমেরিকাকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেয়ার এখনই সময়। ডাচ জাতীয়তাবাদী জিয়ার্ট ওয়াইলডার্সের মধ্যে একই রকম উল্লাস পরিলক্ষিত হয়। তিনি বলেনঃ জনগণ তাদের দেশকে পিছনে নিয়ে যাচ্ছে। আমরাও সে চেষ্টা করব। মেরিন লা পেনেরও একই অনুভূতি যেমনটা অন্য জনপ্রিয় বা জাতীয়তাবাদী নেতাদের ঘৃণা যাদের পুঁজি।
ভীতি ও ঘৃণার উপর গড়ে ওঠা বার্তার ক্ষমতা তারা দেখেছেন। এটা বলা ঠিক নয় যে এর সব কিছুই হয়েছে পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলোর অর্থনৈতিক উদ্বেগের কারণে যদিও সুস্পষ্টভাবে সেগুলো ট্রাম্পের বিজয়ে ভূমিকা পালন করেছে। তবে এটা অসম্পূর্ণ ব্যাখ্যা, কারণ ট্রাম্প শুধু এ ভোটগুলোর জন্যই জয়ী হননি। তিনি শে^তাঙ্গ পুরুষ ভোটারদের ৬৩ শতাংশ ও শে^তাঙ্গ নারী ভোটারদের ৫২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
কে দায়ী? রিপাবলিকান পার্টি থেকে মিডিয়া, পোলস্টার থেকে ডাটা সংগ্রাহক যারা ক্লিনটনের প্রচারণার মধ্যে ভুল দেখেছেন। আর হিলারি ক্লিনটন নিজে ছিলেন তার সকল শক্তি নিয়েও এক ত্রুটিপূর্ণ প্রার্থী। আপনি তাদের সকলকে দায়ী করতে পারেন, কিন্তু এ রকম একটা দিনে আসলে তাদের অভিযোগকে কে পাত্তা দেয়? বিশে^র সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটি তার সবচেয়ে বিপজ্জনক নেতা দ্বারা পরিচালিত হতে যাচ্ছে। এমন এক ব্যক্তি যিনি বিশ শতকের পাঠ্যবইয়ের অন্ধকার ইতিহাস থেকে হেঁটে এসেছেন। জানুয়ারিতে যে অফিস হবে ট্রাম্পের সে অফিসের যুদ্ধকালীন ধারক একবার বলেছিলেন, অন্য কিছুকে নয়, নিজেকে ভয় কর। আজ এ কথা সত্য নয়। আমেরিকা ও বাকি আমাদের সবার ভয়ের বহু জিনিস আছে যার শুরু সেই লোককে দিয়ে যিনি এখন বিশে^র শীর্ষে দাঁড়িয়ে আছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।