Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিকট ভবিষ্যতে ঢাকার সঙ্গে এফটিএ’র সম্ভাবনা নেই : ইইউ রাষ্ট্রদূত

সরকারের প্রস্তুতি যথেষ্ট নয় : ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর শুল্কমুক্ত সুবিধার রফতানি বাজার অব্যাহত রাখতে ইউরোপের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) নিয়ে দেশের ব্যবসায়ীদের বিস্তর আগ্রহ থাকলেও বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলির মতে, তদের ট্রেড ইন্টারেস্ট বিবেচনায় তা নিকট ভবিষ্যতে সম্ভব হবে না। নিকট ভবিষ্যতে এফটিএ’র সম্ভাবনা নেই। জটিলতা, বিস্তৃত প্রকৃতি এবং বাংলাদেশের সাথে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্ক এখনও সে পর্যায়ে যায়নি ইইউ এক্ষেত্রে আগ্রহ দেখাবে বলে বৃহস্পতিবার এক সেমিনারে উল্লেখ করেন তিনি।
এ সময় তিনি বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের ইউরোপ সুবিধা দিলেও একই ধরনের সুবিধা ইউরোপের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে পাচ্ছে কিনা, সে প্রশ্ন তোলেন। রাজধানীর একটি হোটেলে ‘স্ট্রেংথেনিং বাংলাদেশ-ইইউ ট্রেড অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন: ইস্যুস অ্যান্ড পলিসি প্রায়োরিটিস’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড)। সরকারি ও ব্যবসায়িক খাতের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন।
২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটতে যাচ্ছে বাংলাদেশের। এরপর আরও তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত ইইউভুক্ত দেশগুলোতে শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা ভোগ করবে দেশ। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রতিনিধিরা বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ২০৩২ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা আরও তিন বছর বাড়ানোর জন্য ইউরোপকে অনুরোধ করেন।
বিজিএমই’র পরিচালক বিদ্যা অমৃত খান বলেন, আমরা সম্প্রতি ইউরোপ সফর করেছি এবং সেখানকার প্রতিনিধিদের এই সুবিধা আরও তিন বছরের জন্য বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছি। তবে চার্লস হোয়াইটলি ইঙ্গিত দিয়েছেন, এ সুবিধা সম্প্রসারণের সম্ভাবনা কম।
তিনি বলেন, ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশের আর এলডিসি মর্যাদা থাকবে না। এলডিসি না হওয়ার নতুন বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য করার জন্য বাংলাদেশের ব্যবসা এবং সরকারের জন্য তিন বছরের ট্রানজিশন সময় যথেষ্ট দীর্ঘ। এর মানে বাংলাদেশ আর ইইউ বাজারে শুল্ক-মুক্ত, কোটা-মুক্ত অ্যাক্সেস পাবে না যোগ করেন তিনি। যেহেতু বাংলাদেশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইইউতে শুল্ক-মুক্ত, কোটা-মুক্ত বাজারে প্রবেশের যোগ্যতা অর্জন করবে না, তাই তিনি রাজনৈতিক, আর্থিক ও অর্থনৈতিকভাবে জিএসপি প্লাসের দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন।
এলডিসি উত্তরণের পর ইইউর জেনারেলাইজড স্কিম অফ প্রেফারেন্সের আওতায় বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত সুবিধা না পাওয়ার কথা থাকলেও জিএসপি প্লাসের অধীনে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ইইউ’র বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী, এ সুবিধা থেকে বাদ যাবে পোশাক, যা রফতানিতে ১১ শতাংশের বেশি শুল্ক দিতে হবে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী র‌্যাপিডের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি প্লাসের সম্ভাব্য প্রধান সুবিধাভোগী হিসেবে বলেন, বাংলাদেশ যদি এই সুবিধা না পায়, তাহলে এই সুবিধার তাৎপর্য শূন্য হয়ে যাবে। তিনি ইইউকে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার অনুরোধ জানান। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খানও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ইইউ দেশগুলোতে কেন আরএমজিতে শুল্ক ১১ শতাংশের বেশি যখন বিশ্বব্যাপী গড় শুল্কের হার কম? এটা কি এই খাতকে চাপের মধ্যে ফেলার জন্য? বিষয়টি বিবেচনা করা দরকার। এদেিক দেশের ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে এফটিএ’র প্রস্তুতির কথা বলা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো প্রস্তুতি দৃশ্যমান নয়। প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক বলেন, ব্যবসায়িক জটিলতা ও দুর্নীতি দূর করা না হলে যেসব দেশ এফটিএ’তে সম্মতি দিয়েছিল, তারা আমাদের সঙ্গে এফটিএ করতে চাইবে না। সমান সুবিধা না পেলে তারা কেন এফটিএ’তে প্রবেশ করবে? আমাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই। তিনি বলেন, বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী জিএসপি বা জিএসপি প্লাস সুবিধা থাকবে না। এর পরে যদি এফটিএ না হয়, তাহলে আমাদের রফতানি অবশ্যই একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে কারণ আমরা এখন শূন্য শুল্কে রফতানি করি। ২০২৯ সাল থেকে আমাদের ১১ শতাংশের বেশি শুল্ক দিতে হবে, যেদিকে ভিয়েতনাম শূন্য শুল্ক সুবিধা ভোগ করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিখ্যাত আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদ মোস্তফা আবিদ খান উল্লেখ করেন, এফটিএ’র ক্ষেত্রে প্রধান শর্ত হল পারস্পরিকতা। তারা তাদের সুবিধা না পাওয়া পর্যন্ত এফটিএ’তে প্রবেশ করবে না। দীর্ঘদিন ধরে বলা হলেও আমরা সহজে ব্যবসা করা ও শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়ে সংস্কার করিনি। আমাদের কোনো বড় অর্থনীতির সাথে এফটিএ’র অভিজ্ঞতা নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি। মোস্তফা আবিদ খান বলেন, ইউরোপের সঙ্গে যদি এফটিএ না হয় এবং শুল্ক দিয়ে বাণিজ্য চালাতে হয় তাহলে রফতানি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ