পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হোসেন মাহমুদ : আজ ১৩ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের প্রায় সবটাই স্বাধীন হয়ে যায়। অন্যান্য অঞ্চল নয়- বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর লক্ষ্য হয়ে উঠেছিল রাজধানী ঢাকা। ঢাকার পতন মানেই পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয়। ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মানেকশ’র বার্তায় লে: জেনারেল নিয়াজিকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব মেনে নিতে হবে। না হলে ঢাকার সকল সামরিক অবস্থানের উপর ব্যাপক বিমান হামলা চালানো হবে। বেসামাল হয়ে পড়া নিয়াজি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে বারবার সাহায্যের আবেদন জানিয়েও কোন ফল পাননি। ইসলামাবাদ থেকে তাকে আরো কয়েকটা দিন ধৈর্যধারণের পরামর্শ দেয়া হয়। এ দিন বেলা ১১টার দিকে ঢাকার গভর্নর হাউসে ভারতীয় জঙ্গি বিমান বোমা বর্ষণ করে। গভর্নর এ এম মালিক প্রাণ রক্ষার্থে ভূগর্ভস্থ বাংকারে আশ্রয় নেন। বিমান হামলা কমার পর তিনি তার মন্ত্রিসভাসহ পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন। পরে তিনি ও চীফ সেক্রেটারিসহ পদস্থ কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক রেডক্রস ঘোষিত নিরাপত্তা স্থান হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গিয়ে ওঠেন। এ দিন লেঃ জেনারেল নিয়াজি আত্মসমর্পণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে তার পদস্থ সহকর্মীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। চাঁদপুরে ভারতীয় বিমান হামলায় আহত মেজর জেনারেল রহিম ও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩৬ ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল জামশেদ আত্মসমর্পণের পক্ষে জোরালো মত দেন। কিন্তু নিয়াজি কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি। এদিকে পূর্বে প্রণীত নীলনকশা অনুযায়ী ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে এ দিন রাত থেকে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর নেতৃত্বে ঢাকায় বুদ্ধিজীবী নিধনে নামে আলবদর-আলশামস বাহিনী। ১৯৭১ সালের এ দিনে কালিয়াকৈর, মানিকগঞ্জ, বগুড়া, মির্জাপুর, কাহালু, লালপুর, ধামরাই, তাড়াশ, গঙ্গাচড়া প্রভৃতি এলাকা শত্রু মুক্ত হয়।
মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, আজ ১৩ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ পাক হানাদারমুক্ত দিবস। ৪৬ বছর আগে এই দিনে বাংলার মুক্তিকামী দামাল ছেলেদের প্রতিরোধের মুখে পাক হানাদাররা মানিকগঞ্জ থেকে পালিয়ে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করতে বাধ্য হয়।
জেলার ৭টি থানা থেকে এর আগেই সরে এসে মানিকগঞ্জ মহকুমা শহরে (বর্তমানে মানিকগঞ্জ জেলা শহর) অবস্থান নেয় পাক হানাদাররা। মানিকগঞ্জ সিএন্ডবির ডাকবাংলো ছিল পাক হানাদার বাহিনীর আঞ্চলিক সদর দপ্তর। এখান থেকেই হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা এলাকায় অগ্নিসংযোগ, হত্যা, লণ্ঠনসহ বর্বরোচিত কার্যকলাপ পরিচালনা করত। আর তাদের মূল ব্যারাক ছিল মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পিটিআই-এর মূল ভবন।
মানিকগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার ইঞ্জিনিয়ার তোবারক হোসেন লুডু বলেন, জেলাবাসীর কাছে মুক্তিযুদ্ধের ঊষালগ্নে অবিস্মরণীয় দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর আনন্দঘন পরিবেশে উপভোগ করতে এই দিন থেকে ১৫ দিনব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলার আয়োজন করা হয়।
উল্লাপাড়া উপজেলা সংবাদদাতা জানান, আজ ১৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া মুক্ত দিবস। ’৭১-এর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগে ১১ ডিসেম্বর থেকেই পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের অন্তর্ভুক্ত মুক্তিযোদ্ধারা উল্লাপাড়া হামিদা পাইলট বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজে স্থাপিত পাকবাহিনীর বৃহৎ ক্যাম্প ও অস্ত্রভা-ার আক্রমণের লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে চার দিক থেকে ঘেরাও শুরু করে। অবস্থা বেগতিক দেখে পাকবাহিনী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ১২ ডিসেম্বর গভীর রাতে এই ক্যাম্পে আগুন দিয়ে বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়ক হয়ে ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়। পরদিন ১৩ ডিসেম্বর সে সময়ের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে উল্লাপাড়া থানা চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। থানা শহরে বের করা হয় মুক্তিযোদ্ধা জনতার প্রথম বিজয় মিছিল। উল্লাপাড়া মুক্ত দিবস পালন উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বলে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খোরশেদ আলম জানান।
মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, আজ ১৩ ডিসেম্বর মির্জাপুর হানাদারমুক্ত দিবস। আজ থেকে ৪৫ বছর আগে ’৭১-এর এই দিনে মির্জাপুর পাক হানাদারমুক্ত হয়। এ জন্য মির্জাপুরবাসীকে দিতে হয়েছে অনেক রক্ত এবং লড়তে হয়েছে অনেক সম্মুখযুদ্ধে। ’৭১-এর ৩ এপ্রিল এ উপজেলার জামুর্কী ইউনিয়নের গোড়ান-সাটিয়াচড়ায় ঢাকার বাইরে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এরপর একে একে উপজেলার পাথরঘাটা, নয়াপাড়া, হিলড়া এবং ভররাসহ অনেক স্থানে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক সম্মুখযুদ্ধ হয়। ৭ মে উপজেলা সদরের মির্জাপুর এবং আন্ধরা গ্রামে পাক বাহিনী প্রথম গণহত্যা চালায়। এদিকে মির্জাপুর হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল শহরে র্যালি ও সমাবেশ করবে বলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অধ্যাপক দুর্লভ বিশ্বাস জানিয়েছেন।
নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা জানান, আজ ১৩ ডিসেম্বর ধামইরহাট উপজেলা হানাদারমুক্ত দিবস। জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা ধামইরহাট। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার বিভিন্ন বয়সী মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সীমান্তের ওপারে ভারত হওয়ায় অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। ধামইরহাট-জয়পুরহাট সড়কের ঘুকসী নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজে এবং উপজেলার হরিতকীডাঙ্গা গ্রামের সন্নিকটে নলপুকুর নামক স্থানে পাক বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর প্রথম প্রতিরোধ সংঘটিত হয়। এ প্রতিরোধে পাক বাহিনী পিছু হটে যায় এবং তারা ১টি এলএমজি ও কিছু গোলা বারুদ রেখে পালিয়ে যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।