পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : প্রধান রাস্তা থেকে নেমে একটা সেগুনবাগান পেরোলেই চোখে পড়ে অ্যাসবেস্টস আর টালির চালের মাটির দোতলা বাড়িটা। অগ্রহায়ণের চকচকে রোদে নতুন ধানের গন্ধ। পাশেই খামারে মাঠ থেকে সদ্য কেটে আনা ধানের আঁটিগুলো পরপর সাজিয়ে রাখছেন মাঝবয়সী একজন। রঙচটা সাদা লুঙ্গিটা ভাঁজ করে হাঁটুর ওপর তোলা। গায়ে নীল গেঞ্জি। শীতের মিঠে রোদে কপালে বিনবিন করছে পরিশ্রমের ঘাম।
আমলাচটি গ্রামের খামারে ব্যস্ত মানুষটিকে পাহারা দিতে নিচে বন্দুক হাতে সতর্ক চোখে ঘুরে বেড়াচ্ছে একদল নিরাপত্তারক্ষী। নীল গেঞ্জি আর লুঙ্গি পরা ভদ্রলোকের নাম চূড়ামণি মাহাতো। রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণীর কল্যাণমন্ত্রী চূড়ামণি বিধানসভায় আসেন লালবাতি ও জাতীয় পতাকা লাগানো গাড়িতে। কিন্তু গ্রামের বাড়িতে আপাতত তিনি পড়েছেন মহাসঙ্কটে। দিন দশেক আগেই মাঠের ধান কাটা হয়েছে। সেই ধানের গন্ধে তার গ্রাম আমলাচটি লাগোয়া ডুংরি জঙ্গলে হাজির হয়েছে দু’টি হাতি। মাঠ থেকে ধান খামারে না আনলে হাতির উপদ্রব শুরু হবে গ্রামে। এ দিকে নোট বাতিলের জেরে চাষের মজুর মেলা ভার। দুশ্চিন্তা গোপন করছেন না মন্ত্রী মশাই।
‘মোদি সরকার যা ঘোষণা করেছে তাতে সবাই অসুবিধার মইধ্যে পইড়্যে গেল। ট্যাকা-পয়সা নাই। কারও ঘরের লোক কামিন খাটতে যায় নাই। আমি বিধানসভায় ছিলাম। শুক্রবার ফির্যাছি। আইজ শুইনলাম জঙ্গলে হাতি বেরাইছিল। গাঁয়ের দিকেও এসেছিল। কলাগাছগুলা খাইন গেছে। ধান গাদা না করলে হাতি এগুলান নষ্ট কইর্যে দিবে।’ শনিবারও কিছু ধানের আঁটি গাদা করেছিলেন চূড়ামণি। বাকি কাজটা সেরে নিলেন রোববার। মন্ত্রী হয়েও চাষবাষ বন্ধ করেননি চূড়ামণি। কিন্তু খুচরোর সমস্যায় মজুরদের পারিশ্রমিক দেয়ার সমস্যায় পড়েছেন তিনিও। ছুটির দিনে সাহায্যকারী হিসেবে প্রথমে পেয়েছিলেন ভাগ্নে প্রিয়রঞ্জন মাহাতো ও চাচাতো ভাই আকুল মাহাতোকে। মন্ত্রীর কাছে হরেক সমস্যা নিয়ে হাজির হন অনেকেই। হাত লাগালেন তারাও।
জমির সমস্যা সমাধানে মন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাতে এসেছিলেন গ্রামেরই চক্রধর গোয়ালা ও তার স্ত্রী চুনু। চুনু বলেন, ‘আমরা খাস জমিতে চাষ করতাম। এখন শুনছি সেই জমি অন্যের নামে রেকর্ড হয়ে গিয়েছে। এসে দেখি, মন্ত্রী ধানের আঁটির গাদা সাজাচ্ছেন। আমরাও ওকে কিছুটা সাহায্য করলাম।’ কিছুটা দূরের সাঁকরাইল ব্লক থেকে সমস্যার কথা শোনাতে এসেছিলেন কমল দাস। তিনিও মন্ত্রীর সঙ্গে হাত লাগিয়ে খড়ের আঁটি তুলে দিলেন।
কাজ সেরে খামার লাগোয়া টিউবওয়েলের পানিতে গোসল সেরে নিলেন মন্ত্রী। বাড়িতে এতদিন শৌচাগার ছিল না। সবে পাকা শৌচাগার গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। গোসল সেরে হলুদ পাঞ্জাবি আর সাদা প্যান্ট পরে ফিটফাট মন্ত্রী মশাই বসে গেলেন গরম ভাত আর শাকের তরকারি নিয়ে। খাওয়া-দাওয়ার পর সরকারি গাড়ি রওনা দিলো নিকটবর্তী শহর অভিমুখে। আমলাচটির মাটির বাড়িতে নিরাপত্তা নেই। তাই স্ত্রী-ছেলেমেয়েকে নিয়ে রাতে মফস্বল টাউন লোধাশুলিতে থাকেন চূড়ামণি। পেছনে পড়ে রইল খামারবাড়িতে ডাঁই করা ধানের আঁটি, গোটা ১৪ ছাগল, সাতটা গরু আর হাঁস-মুরগির পাল। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।