Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সংবাদকর্মীরা সব স্থান ও অফিসে প্রবেশ করতে পারবেন

ইনকিলাবের প্রতিবেদনে হাইকোর্টের স্বপ্রণোদিত রুলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

সাংবাদকর্মীরা পেশাগত দায়িত্ব পালন এবং তথ্যের জন্য সব স্থানে, সব অফিসে প্রবশে করতে পারবেন। সংবাদের তথ্যের উৎস কী, সেটি জানতে সাংবাদিকের ওপর চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। সংবাদের কোনো বিষয়ে অভিযোগ থাকলে সেটি নিয়ে আদালতে আসার আগে প্রেসকাউন্সিলে যেতে হবে। দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে হওয়া স্বপ্রণোদিত রুলের নিষ্পত্তি করে এ রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
গতকাল (রোববার) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৫১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। সেই রায়ে কোনো সংবাদের বিষয়ে আদালতে আসার আগে প্রেস কাউন্সিলের শরণাপন্ন হবার কথা বলেছেন হাইকোর্ট। এ তথ্য জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিনউদ্দিন মানিক।

এর আগে গত বছর ২ মার্চ ‘২০ কোটিতে প্রকৌশলী আশরাফুলের দায়মুক্তি! দুর্নীতি দমনে দুদক স্টাইল’ শিরোনামে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক ইনকিলাব। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে সস্ত্রীক প্রকৌশলী আশরাফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। প্রকাশিত এ প্রতিবেদন নিয়ে জারি করা রুলের শুনানি শেষে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দেও ডিভিশন বেঞ্চ চলতি বছর জুন মাসে এ রায় দেন।
রায়ের বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সাংবাদিকদের বিষয়ে রায়ে আদালত বলছেন, সাংবাদিকরা সব স্থানে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। সরকারি, আধা সরকারি অফিসে যেতে পারবেন। আর তথ্যের উৎস জানার বিষয়ে সাংবাদিকদের চাপ প্রয়োগ করা যাবে না।

আদালত রায়ে বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সাংবাদিকরা সঠিক তথ্য তুলে ধরে সমাজের অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে। গণমাধ্যমের কাজ হলো জনগণকে সজাগ ও সচেতন করা।

রায়ে বলা হয়, বর্তমান সময়ে প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। গণমাধ্যম দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি বিশেষের দুর্নীতি-অর্থ পাচার ফলাও করে তুলে ধরতে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তবে হলুদ সাংবাদিকতা কখনো সমর্থন করা যায় না।
আদালত আশা প্রকাশ করে বলেন, সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে গণমাধ্যমকে মনোযোগী হতে হবে। দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও জনস্বার্থ আছে— এ ধরণের সব সংবাদ সাংবিধানিকভাবে ও আইনগতভাবে সাংবাদিকরা তুলে ধরতে পারেন। সাংবাদিকদের সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে যে সুরক্ষা দেয়া হয়েছে তাতে সাংবাদিকরা তাদের নিউজের তথ্যের উৎস প্রকাশ করতে বাধ্য নন।

হাইকোর্ট রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন রক্ষায় সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। গণমাধ্যমের কাজ হলো জনগণকে সজাগ করা। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে দেয়া আছে। গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এটি গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আধুনিক বিশ্বে জানার অধিকার সবারই আছে।

৫১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে ভারতের হাইকোর্টের দেয়া রায়ের উদাহরণ তুলে ধরে আদালত বলেন, আমাদের বলতে দ্বিধা নেই যে, সাংবাদিকরা তাদের সংবাদেও সোর্স প্রকাশে বাধ্য নন। সংবিধান ও আইন তাদের সুরক্ষা দিয়েছে।
রায়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নতুন তদন্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত করে ৬ মাসের মধ্যে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। সেইসঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা নিয়ে প্রেস কাউন্সিলে যেতে বলা হয়।

এর আগে গত বছর ২ মার্চ ‘২০ কোটিতে প্রকৌশলী আশরাফুলের দায়মুক্তি! দুর্নীতি দমনে দুদক স্টাইল’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক ইনকিলাব। প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের নজরে আনা হলে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে দুর্নীতি দমন কমিশনের নথিপত্র তলব করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে প্রতিবেদককে তার তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন। ইনকিলাব প্রতিবেদক তার সংবাদে ব্যবহৃত রেকর্ডপত্র তুলে ধরেন।
রুলের শুনানিকালে গত ২১ জুন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ইনকিলাব’র বিশেষ প্রতিবেদক সাঈদ আহমেদ’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চান। অন্যদিকে ইনকিলাবের প্রতিবেদকের পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সংবিধানে থাকা সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতার বিষয় এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় সোর্স প্রকাশ না করার নীতির বিষয়টি উপস্থাপন করেন।

এ সময় হাইকোর্ট বলেন, এটি কোনো আদালত অবমাননার মামলা নয়। সাংবাদিকের কোনো সংবাদের বিষয়ে অভিযোগ থাকলে আগে প্রেস কাউন্সিলের শরণাপন্ন হতে পারেন। সাংবাদিকের সংবাদেও সোর্স আমরা জানতে চাইনি। উভয় পক্ষের শুনানির পর আদালত রুলের নিষ্পত্তি করেন। সেই সঙ্গে গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম ও তার স্ত্রীর জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন বিষয় অনুসন্ধানে আগের কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে নতুন কর্মকর্তার মাধ্যমে পুনরায় অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন। এ সময় প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের পক্ষের আইনজীবীও উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • বেলায়েত হোসেন ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ৬:৪২ এএম says : 0
    উচ্চ আদালতের রায় এবং ইনকিলাব সাংবাদিক সাঈদ আহমেদের ভূমিকা স্বাধীন সাংবাদিকতার মাইল ফলক।
    Total Reply(0) Reply
  • বেলায়েত হোসেন ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ৬:৪২ এএম says : 0
    উচ্চ আদালতের রায় এবং ইনকিলাব সাংবাদিক সাঈদ আহমেদের ভূমিকা স্বাধীন সাংবাদিকতার মাইল ফলক।
    Total Reply(0) Reply
  • বেলায়েত হোসেন ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ৬:৪২ এএম says : 0
    উচ্চ আদালতের রায় এবং ইনকিলাব সাংবাদিক সাঈদ আহমেদের ভূমিকা স্বাধীন সাংবাদিকতার মাইল ফলক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ