পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এলাকার সবাই জানেন গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় রাতের শিফটের শ্রমিক নাসির ফকির (৩৭)। সেই নাসিরই দিনে ওয়াকিটকি হাতে পুরোদস্তর হয়ে যান পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর। এই পরিচয়ে সাধারণ মানুষকে তল্লাশির নামে টাকা হাতিয়ে নিতেন গত কয়েক বছর ধরে। কেউ প্রতিবাদ বা কিছু বলার চেষ্টা করলে নিজের কাছে থাকা ওয়াকিটকি দেখিয়ে আটকের হুমকি দিতেন তিনি। বাড়তি প্রয়োজনে মানিব্যাগে রাখা পুলিশের ইউনিফর্ম পরা ছবি দেখিয়ে নিজের পরিচয় নিশ্চিত করতেন নাসির। গত বৃহস্পতিবার উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের মাসকট প্লাজার সামনে একজন ডিপ্লোমা দন্ত চিকিৎসকে তল্লাশির নামে টাকা হাতিয়ে নেয়ার সময় নাসির ফকিরকে আটক করে পুলিশ। এর পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
এভাবেই বিভিন্ন পেশার আড়ালে রাজধানী ও এর আশপাশ এলাকায় সক্রিয় ৮০টি ভয়ঙ্কর অপরাধী সিন্ডিকেট। দিনে ফেরিওয়ালা, গার্মেন্টসকর্মী, গাড়ি চালক, হেলপার, রাজমিস্ত্রী, কেউ আবার টেইলার দোকানের কাটিং মাস্টার ও হোটেল কর্মচারী হিসেবে কাজ করলেও রাতে তারা অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের হাতে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) নকল জ্যাকেট, ওয়াকিটকি ও হ্যান্ডকাপ। এ নিয়ে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সেজে রাস্তায় নামে। তাদের মধ্যে একজন অফিসার নিজেরা নিয়োগ দেয়। তার নেতৃত্বে ডাকাতি করা হয়। এ চক্র অভিজাত প্রাইভেটকার কিংবা মাইক্রোবাস ব্যবহার করে। সড়ক ও মহাসড়কে ডাকাতি করার জন্য তাদের একাধিক গ্রুপ রয়েছে। তাদের সর্দার ওই গ্রুপগুলো নিয়ন্ত্রণ করে।
ডিবি ও র্যাব সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ও এর আশপাশের এলাকায় ৮০টি অপরাধ সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। এরা নানা পেশার আড়ালে কখনো দিনে আবার কখনো রাতে অপরাধ করছে। এ সব চক্রের মূলহোতাসহ সদস্যরা একাধিকবার গ্রেফতার হলেও জামিনে বেরিয়ে এসে আবার একই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। প্রতিটি সিন্ডিকেটে রয়েছে ৮ থেকে ১৪ জন পর্যন্ত সদস্য।
উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানান, নাসির আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক। সেখানে তিনি প্রতিদিন রাতের বেলায় কাজ করতেন। এরপর দিনে পুলিশের এসআইয়ের বেশ ধারণ করে সরল ব্যক্তিদের আটক করে তল্লাশির নামে ভয়ভীতি দেখিয়ে মানিব্যাগ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন। সবাই যেন পুলিশ মনে করে, এজন্য মাথার চুল ছোট রাখতেন এবং মানিব্যাগে রাখতেন পুলিশের পোশাক পরা ছবি।
তিনি আরো জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে মাইনুল ইসলাম নামের একজন ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট এটিএম বুথে টাকা তুলতে গেলে তার গতিরোধ করেন নাসির। প্রথমে ওই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চান। এরপর তার ব্যাগ নিয়ে তল্লাশি করেন। তখন টহল পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশকে দেখে ভুক্তভোগী মাইনুল পুলিশকে সব খুলে বলেন। এরপর টহল পুলিশ নাসিরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি নিজের ভুয়া পুলিশ পরিচয় স্বীকার করেন। কয়েক বছর ধরেই এ ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত নাসির। আগেও একই ধরনের অপরাধে মিরপুরেও নাসিরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এ চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে। নাসিরের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলার আরোয়াকান্দি গ্রামে।
র্যাবের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইনকিলাবকে জানান, গত ১২ আগস্ট রাতে র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ ও বন্দর থানা এলাকার মহাসড়ক থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কেউ ড্রাইভার, হেলপার, রাজমিস্ত্রী, কেউ আবার টেইলার দোকানের কাটিং মাস্টার। দিনে নিজ নিজ পেশায় নিয়োজিত থাকলেও বিভিন্ন সময় রাতে তারা সংঘবদ্ধভাবে অংশ নিত দুর্ধর্ষ ডাকাতিতে। গেলো বেশ কয়েকবছর ধরেই নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায় বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিতভাবে ডাকাতি করে আসছে ১০-১২ জনের এই চক্রটি। এর আগেও তারা বিভিন্ন সময় কারাভোগ করেছে এবং জামিনে বের হয়ে আবার একই ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলোÑ মূসা আলী (৪০), নাঈম মিয়া (২৪), শামীম (৩৫), রনি (২৬), আবু সুফিয়ান (২০), মামুন (২৪)।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিবির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, অপরাধী চক্রের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের আদলে পোশাক পরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানাধরনের অপরাধ করছে। এই অপরাধী চক্রের সক্রিয় সদস্যরা নিজেদেরকে ডিবি পুলিশের সদস্য হিসেবে উপস্থাপন করতে ডিবির জ্যাকেটের ন্যায় নকল জ্যাকেট, ওয়াকিটকি ব্যবহার করছে। তারা অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করছে। নিজেদেরকে ডিবি পুলিশের ন্যায় বিশ্বাসযোগ্য করতে ডিবির স্টিকার তৈরি করে মাইক্রোবাসসহ তাদের ব্যবহৃত গাড়িতে ব্যবহার করছে। এদের বিরুদ্ধে ডিবির অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সাল থেকে ডাকাতি করে আসছে মোস্তফা কামাল ওরফে লিটন। সে নারায়ণগঞ্জ ও ডেমরা এলাকার অপরাধী চক্রের মূল হোতা। লিটন একটি গার্মেন্টসে চাকুরি করত। পরে সে রাজধানীর মহাখালীর একটি হোটেলে মেসিয়ার শাহাব উদ্দিনকে নিয়ে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলটি গঠন করে। ডাকাতির জন্য সে টার্গেট নির্ধারণ করত এবং ডাকাতির সময় সে ডিবি অফিসার এর ন্যায় পোশাক পরত। সম্প্রতি র্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর লিটন এখন পর্যন্ত ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ১৫০ টিরও বেশি ডাকাতি/চুরি করেছে বলে স্বীকার করে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় তার নামে ১২/১৪টি ডাকাতি মামলা রয়েছে এবং পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে একাধিকবার কারা ভোগ করেছে।
রাজধানীর আশপাশের এলাকায় ফেরীওয়ালা হিসেবে কাজ করত শফিকুল ইসলাম। ফেরীওয়ালা হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি সে দীর্ঘদিন যাবত এই সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সঙ্গে ডাকাতি করত। নাছির উদ্দিন পেশায় একজন প্রাইভেটকার চালক। সে ঢাকায় রেন্ট-এ কারে গাড়ি চালাত। রেন্ট-এ কারে গাড়ি চালানোর পাশাপাশি সে এই সংঘবদ্ধ অপহরণকারী দলের একজন সক্রিয় সদস্য। আসামি আলমগীর শেখ রাজধানীতে একটি বাসের কাউন্টারে কাজ করত। কাউন্টারে কাজ করার পাশাপাশি সে দীর্ঘদিন যাবত উক্ত সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের একজন সক্রিয় সদস্য।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, বিভিন্ন পেশার আড়ালে সক্রিয় অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কাজ করছে। এরই মধ্যে অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। একই অপরাধে এক ব্যক্তি একাধিকবার গ্রেফতার হওয়ার ঘটনাও রয়েছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।