Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

চারদিকে যুুদ্ধ ধ্বংস আর বিপর্যয়

ফিরে দেখা বিজয়ের মাস

| প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হোসেন মাহমুদ : একাত্তরের ১২ ডিসেম্বর। যুদ্ধ এবং শুধু যুদ্ধই চলছিল চারদিকে। ধ্বংস আর বিপর্যয়। বিজয়ের আর কোন আশা ছিল না মনোবল হারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনী ঢাকাকে চারদিক থেকেই ঘিরে ফেলেছিল। দেশের বিভিন্ন স্থানে আটকে পড়া পাকিস্তানি বাহিনীর বিচ্ছিন্ন ইউনিটগুলোর ঢাকায় ফেরার আর কোন উপায় ছিল না। এ অবস্থায় ঢাকাকে ঘিরে আত্মরক্ষার শেষ কৌশল গ্রহণ করতে চেয়েছিল পাক সেনাবাহিনী। লেঃ জেনারেল নিয়াজিসহ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের মতে, মার্কিন সপ্তম নৌবহরের বঙ্গোপসাগরে উপস্থিতির কথিত আশ্বাস কিছুটা আশার সঞ্চার করেছিল। জানা যায়, এদিন মার্কিন সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগর থেকে ২৪ ঘন্টা দূরত্বে পরবর্তী নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরে পৌঁছেনি। জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে ১২ ডিসেম্বর রাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শর্তসম্বলিত একটি প্রস্তাব প্রেরণ করেন। এ প্রস্তাবে তিনি বলেন, পাকিস্তান তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে, বাংলাদেশ সরকারের সাথে যুক্তিসঙ্গত আপসরফা করলে তার দেশ পাক-ভারত যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব বিবেচনা করতে রাজি আছে। অন্যদিকে পাকিস্তানে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত এদিন পাক-সামরিক জান্তার সকল আশার গুড়েবালি ঢেলে দিয়ে বলেন, চীনের কাছে বেশি কিছু আশা করা ঠিক হবে না। এদিন যুক্তরাষ্ট্র পুনরায় জাতিসংঘে পাক-ভারত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করে। এ প্রস্তাবে পূর্ব-পাকিস্তান থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের কথাও বলা হয়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পুনরায় ভেটো দেয়ার কারণে এ প্রস্তাব আর পাস হতে পারেনি। এদিন জুলফিকার আলী ভুট্টো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অত্যন্ত আবেগময় ভাষায় বক্তৃতা করেন। তবে তা কোন কাজে আসেনি। এদিকে ঢাকায় মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করা হয়। এদিন বৃটিশ রাজকীয় বিমানবাহিনীর বিমানে করে বিদেশী নাগরিকদের ঢাকা থেকে অপসারণের কাজ শুরু হয়। ওদিকে লন্ডনের হাইড পার্কে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে হাজার হাজার বাঙালি জড়ো হয়। সমাবেশ শেষে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান ও শেখ মুজিবের মুক্তির দাবী জানিয়ে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান ও শেখ মুজিবের মুক্তির দাবী জানিয়ে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ১৯৭১ সালের এদিনে সরিষাবাড়ী, আশুগঞ্জ, আদমদীঘি, ভাঙ্গা, কালিয়াকৈর, ভেড়ামারা, ডিমলা, গোপালগঞ্জ, ঘোড়াঘাট, গোবিন্দগঞ্জ, চান্দিনা, ডোমার, নরসিংদীসহ বিভিন্ন এলাকা শত্রুমুক্ত হয়।
মুন্সীগঞ্জে হানাদার মুক্ত দিবস পালিত
মুন্সীগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা: মুন্সীগঞ্জ মুক্ত দিবস উপলক্ষে ১১ ডিসেম্বর রোববার সকাল ১০টায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়। একাত্তরের ওই দিনে মুক্তিকামী মানুষের দুর্বার আক্রমণে দখলদার বাহিনী মুক্ত হয় মুন্সীগঞ্জ। ঐতিহ্যবাহী মুন্সীগঞ্জ জেলাকে মুক্ত করার সংগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি অনেক মানুষ শহীদ হন। অনেকের মৃত্যু হয় হানাদার বাহিনীর নিষ্ঠুর ও অমানুষিক নির্যাতনে।
মুন্সীগঞ্জ মুক্ত দিবস উপলক্ষে গতকাল জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিট রবিবার (১১ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। কর্মসূচি অনুযায়ী রবিবার সকাল ১০টায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি শহরের জুবলী রোড হয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমি ঘুরে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড প্রাঙ্গণে এসে  শেষ হয়।
র‌্যালির পর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড প্রাঙ্গণের সড়কে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ হান্নান। মুখ্য আলোচক হিসেবে ছিলেন ইমদাদুল হক মিলন। সভায় সভাপতিত্ব করেন মুন্সীগঞ্জ জেলা ইউনিটের কমান্ডার আনিসউজ্জামান আনিস।
হিলি শক্রমুক্ত দিবস পালিত
হিলি সংবাদদাতা: ১১ ডিসেম্বর, এইদিনে দিনাজপুরের হিলি শক্র মুক্ত হয়। সেই ভয়াল দিনের কথা স্বরণ করে হিলি-হাকিমপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও পৌরসভা দিন ব্যাপী  নানা কর্মসুচি পালন করেছে।  
হিলি শত্রু মুক্ত দিবস উদযাপন উপলক্ষে হাকিমপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও পৌরসভার উদ্যোগে সকাল সাড়ে ১১ টায় র‌্যালী, আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বীরমুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলীর নেতৃত্বে হিলি চেকপোষ্ট জিরোপয়েন্ট থেকে র‌্যালী ্েবর হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন করে। পরে মুহাড়াপাড়া মুক্তিযুদ্ধের শহীদ মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিসৌধ ‘সম্মুখ সমর’ এ  গিয়ে শেষ হয়।
গোবিন্দগঞ্জ মুক্ত দিবস আজ
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা ঃ আজ ১২ ডিসেম্বর । ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ ৯ মাসের বিভীষিকাময় দিনের শেষে সবুজের মাঝে রক্তলাল পতাকা উড়িয়ে সামগ্রিক বিজয় ছিনিয়ে আনার ৩দিন  পূর্বেই  গোবিন্দগঞ্জে ওড়ে বিজর্য়ে পতাকা। মুক্ত হয় গোবিন্দগঞ্জ। পাকিস্থানী লুটেরা , স্বৈরশাসক, শোষকদের নির্যাতন আর বিশ্বাসঘাতকতার  কবল থেকে মুক্ত হয় এ দিন। আর আনন্দে উৎফুল্ল  হয়ে বিজয় উৎসবে মেতে উঠেছিল  গোবিন্দগঞ্জের স্বাধীনতার পক্ষের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ ।
আশুগঞ্জ মুক্ত দিবস পালিত
আশুগঞ্জ (ব্রাক্ষণবাড়িয়া) উপজেলা সংবাদদাতা ঃ নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযোদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানো আহবানের মধ্য দিয়ে নানান কর্মসূচীর মাধ্যমে গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আশুগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে আজ সকালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে স্থানীয় সম্মুখ যোদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা । পরে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
সরিষাবাড়ী শত্রুমুক্ত দিবস আজ
সরিষাবাড়ী(জামালপুর) উপজেলা সংবাদদাতা-আজ ১২ ডিসেম্বর সরিষাবাড়ী হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১’র ১৬ ডিসেম্বর সমগ্র বাংলাদেশ চুড়ান্ত বিজয় অর্জন করলেও তৎকালীন জামালপুর মহকুমার সরিষাবাড়ী থানা স্বাধীন হয় ৪ দিন আগেই।
সরিষাবাড়ী শত্রুমুক্ত দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বাউসি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সরণী ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পন, কোরআনখানী ও ফাতেহা পাঠ, বর্ণাঢ্য বিজয় শোভাযাত্রা এবং আলোচনা সভাসহ দিনব্যাপী আজ বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।
­রহনপুর মুক্ত দিবস পালিত
গোমস্তাপুর উপজেলা সংবাদদাতা ঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জরে গোমস্তাপুর উপজেলা সদর রহনপুর মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে রোববার সকালে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি র‌্যালি ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে । রহনপুর কলোনী মোড় থেকে বের হওয়া র‌্যালিটি শহর প্রদক্ষিন করে রহনপুর বাজার বেগম কাচারী প্রাঙ্গণে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ