Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৫৪ লাখ ৬০ হাজার টন জ্বালানি তেল কিনবে সরকার

১ হাজার ১৬৬ কোটি টাকার ৬ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন কানাডা ও মরক্কো থেকে ৯০ হাজার টন সার কিনবে সরকার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ডধারী এক কোটি পরিবারের মাঝে কম দামে বিক্রির জন্য এক কোটি ৬৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার একটি প্রস্তাবসহ মোট ৬টি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এজন্য ব্যয় হবে ১ হাজার ১৬৬ কোটি ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৪১০ টাকা। গতকাল বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির ভার্চুয়াল সভায় ক্রয় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রাহাত আনোয়ার বলেন, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র ২৩তম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র ৩১তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ৪টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২টি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১টি এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রস্তাব ছিল।

তিনি বলেন, ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ৬টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১১৬৬ কোটি ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৪১০ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ২৬৭ কোটি ৭১ লাখ ৬৩ হাজার ৯১০ টাকা এবং দেশীয় ব্যাংক ঋণ ৭৩৯ কোটি ৪৩ লাখ ৪১ হাজার ৫০০ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের (১ম ও ২য় শ্রেণি) ৯৮টি লটে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের দরপ্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সকল শিক্ষার্থীর কাছে তাদের কাক্সিক্ষত পাঠ্যপুস্তক যথাসময়ে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের (১ম ও ২য় শ্রেণি) ৯৮টি লটে ২ কোটি ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার ৯৯০ কপি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে ৫২৭টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে ৩৯৯টি দরপত্র রেসপনসিভ হয়। টিইসি কর্তৃক ৯৮টি লটে সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন ২৪টি দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এই বই সংগ্রহ করা হবে। এজন্য ব্যয় হবে ৭৮ কোটি ৬৮ লাখ ১৩ হাজার ৯১০ টাকা। প্রতিটি পাঠ্যপুস্তকের গড় দাম পড়বে ৩১ দশমিক ৬৮ টাকা।
তিনি বলেন, উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার (+৫ শতাংশ) সয়াবিন তেল ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবি’র ফ্যামিলি কার্ডধারী নিম্ন আয়ের ১ কোটি পরিবারের কাছে প্রতি মাসে ভর্তুকি দামে সয়াবিন তেল বিক্রির লক্ষে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কর্তৃক স্থানীয়ভাবে সংগ্রহের জন্য উন্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৫টি দরপত্র জমা পড়ে, যা রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেঘনা এডিবল অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড, ঢাকা এই সয়াবিন তেল সরবরাহ করবে। ২ লিটার প্যাকেটজাত বোতল প্রতি লিটার সয়াবিন ১৭১ দশমিক ৮৫ টাকা হিসেবে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার কিনতে ব্যয় হবে ১৮৯ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় কাসাডিয়ান কমার্শিয়াল করপোরেশন থেকে ৬ষ্ঠ লটে ৫০ হাজার মে.টন মিউরেট-অব-পটাশ (এমওপি) সার আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বিএডিসি কর্তৃক কানাডা হতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে এমওপি সার আমদানির প্রস্তাব ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি তারিখের সিসিইএ সভায় নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়। ইতোপূর্বে সম্পাদিত চুক্তির কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় বিদ্যমান চুক্তির শর্ত অভিন্ন রেখে সিসিইএ সভার অনুমোদনক্রমে বিগত ২০২২ সালের ৬ জুলাই তারিখে চুক্তি নবায়ন করা হয়। সার আমদানি চুক্তিতে উল্লিখিত মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসারে কানাডা থেকে ৬ষ্ঠ লটে ৫০ হাজার (+১০ শতাংশ) মেট্রিক টন এমওপি সার আমদানি করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৪ কোটি ১০ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪৩৭ কোটি ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি মে.টন এমওপি সারের দাম পড়বে ৮২১ মার্কিন ডলার।

এ ছাড়াও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কো থেকে ৯ম লটে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ২০২০ সালে সম্পাদিত চুক্তির কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় বিদ্যমান চুক্তির শর্তগুলো অভিন্ন রেখে ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর চুক্তি নবায়ন করা হয়। প্রতি মেট্রিক টন ডিএসপি সারের দাম ৯৩২ মার্কিন ডলার হিসেবে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে ২ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০২ কোটি ৩৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।

সভায় টেবিলে দু’টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। এরমধ্যে স্থানীয়ভাবে ৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সংগ্রহের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সুপার অয়েল লিমিটেড এই সয়াবিন তেল সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ৮৭ কোটি ৯৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে টিসিবি’র জন্য ৮ হাজার মেট্রিক টন মুসুরির ডাল আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ৭০ কোটি ৯৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।

এর আগে, অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ৩টি প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় ‘চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন স্যুয়ারেজ প্রজেক্ট ফর পতেঙ্গা ক্যাচমেন্ট’ প্রকল্প পিপিপি ভিত্তিতে বাস্তবায়নে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম মহানগরীর দক্ষিণাঞ্চল পতেঙ্গা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় পরিবেশ বান্ধব স্যানিটেশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। প্রকিউরমেন্ট গাইড লাইন ফর পিপিপি প্রজেক্ট-২০১৮ অনুযায়ী প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে জাপানি বিনিয়োগকারী সংস্থা মারুবেনি করপোরেশন পিপিপি (জি-টু-জি) ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রকল্পের আওতায় দৈনিক ৫ কোটি লিটার পরিশোধন ক্ষমতার ১টি পয়ঃশোধনাগার, ৬৮ কি.মি. পয়ঃপাইপ লাইন, ১টি লো লিফট পাম্প স্টেশন এবং ১১ হাজার গ্রাহক সংযোগ করা হবে।

অতিরিক্ত সচিব জানান, ২০২৩ সালের জন্য অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে আমদানির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) কর্তৃক জি-টু-জি ভিত্তিতে দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তির আওতায় সউদী আরব এবং আবুধাবি থেকে ক্রুড অয়েল আমদানি করে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে প্রক্রিয়াকরণ করে থাকে। ইআরএল ফিড ডিজাইন অনুযায়ী প্রক্রিয়াকরণের জন্য কাঁচামাল হিসেবে এই দুইটি দেশের ক্রুড অয়েল অধিক উপযোগী এবং টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অন্য কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে আমদানির সুযোগ নেই বিধায় রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে পিপিএ ২০০৬ এর ৬৮(১) ধারা এবং পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) অনুযায়ী ২০২৩ সালের জন্য সউদী আরব এবং আবুধাবি থেকে ১৬ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল (ক্রুড অয়েল) সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।

সভায় ২০২৩ সালের (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) জন্য পরিশোধিত জ্বালানি তেল সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে আমদানির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০১৬ সাল থেকে জ্বালানি তেলের মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ জি-টু-জি ভিত্তিতে এবং ৫০ শতাংশ উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবানের মাধ্যমে আমদানি করে আসছে। বিক্রয় প্রবণতা ও পর্যাপ্ত মজুদ বিবেচনায় ২০২৩ সালের জন্য জি-টু-জি ভিত্তিতে মোট আমদানিয় পরিমাণ গ্যাস অয়েল ২৬ দশমিক ৭০ লাখ মেট্রিক টন (+১০ শতাংশ), জেট এ-১= ৩ দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন (+১০ শতাংশ), মোগ্যাস ৩ লাখ মেট্রিক টন (+১০ শতাংশ), ফার্নেস অয়েল ৪ দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন (+১০ শতাংশ) এবং মেরিন ফুয়েল ৯০ হাজার মেট্রিক টন (+১০ শতাংশ) সর্বমোট পরিশোধিত জ্বালানি তেল ৩৮ দশমিক ৬০ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ