Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

১৯৭৭ সালের সামরিক আদালতের দণ্ডাদেশ কেন অবৈধ হবে না?

হাইকোর্টের রুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৭ সালে সামরিক আদালতের দণ্ডাদেশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে নাÑ এই মর্মে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে দণ্ডিতদের কেন ‘দেশপ্রেমিক’ ঘোষণা করা হবে না-তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া দণ্ডিতদের পরিবারকে কেন পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে না এবং দণ্ডিতদের সন্তানদের যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরি প্রদানের কেন নির্দেশনা দেয়া হবে নাÑ জানতে চাওয়া হয়েছে।
রিটের শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের এবং বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর ডিভিশন বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
এ তথ্য জানিয়েছেন ওই বেঞ্চের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। এর আগে ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বিমান বাহিনীর এক বিদ্রোহের ঘটনায় সামরিক আদালতে দণ্ডাদেশের ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট হয়। রিটে ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সামরিক আদালতে দণ্ডিতদের চাকরির স্বাভাবিক অবসর গ্রহণ পর্যন্ত বেতন, অন্য সব সুবিধা, পেনশন পাওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। কোর্ট মার্শালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট সাইদুর রহমানের পুত্র মো: কামরুজ্জামান মিঞা লেলিন এবং বিমান বাহিনীর ১৪ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত সেনা ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের সন্তানসহ ৮৮ জনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মতিউর রহমান রিট করেন। এতে প্রতিরক্ষা সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিমান বাহিনীর প্রধানকে বিবাদী করা হয়। রিটের শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এবং আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন।
রুলের বিষয়ে অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান বলেন, ‘মার্শাল ল’ রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৭৭’ দ্বারা সামরিক আদালতে জিয়াউর রহমান অন্যায়ভাবে বিচার করেছিলেন। সেই বিচারে যাদের ফাঁসি হয়েছিল, যাদের যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছিল এবং যারা চাকরিচ্যুত হয়েছিল সেসব ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের আওতায় আনার জন্য রিটটি করা হয়েছে। এছাড়া যারা মারা গেছেন তাদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পোষ্যদের যাতে সরকারি চাকরিতে অ্যাকোমোডেট করার আর্জি জানানো হয়েছিল। ৮৮ জনের মধ্যে ১৩ জন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত, ৩৩ জন যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত। আর বাকি ৪২ জন চাকরিচ্যুত করা হয়।
৬ বছর আগে ১৯৭৬ সালে এ রকম এক বিচারে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত কর্নেল আবু তাহেরের বিচার অবৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই রায় হওয়ার পর জিয়ার আমলে বিচারের নামে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচারে কমিশন গঠনের দাবি তুলে তাহেরের ভাই ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ওই সময় বেছে বেছে মুক্তিযোদ্ধা সেনা সদস্যদের হত্যা করা হয়েছিল। তার আগে আরেক রায়ে হাইকোর্ট বলেছিলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ, বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ ছিল সংবিধান-বহির্ভূত ও বেআইনি।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে সামরিক বাহিনীতে বিদ্রোহের ঘটনার পুন: তদন্ত দাবি করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন ওই ঘটনার শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। ওই বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি না হওয়ার মধ্যেই ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল এ রিট ফাইল হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৬ সালে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। পরের বছর ১৯৭৭ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বেশ কিছু বিদ্রোহ ও ব্যর্থ অভ্যুত্থান হয়। এসব অভ্যুত্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সামরিক আদালতে বিচার করা হয়। এতে সেনা ও বিমান বাহিনীর বেশ কিছু কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ