ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
মোহাম্মদ আবু তাহের : শিশু-কিশোরদের মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া শিখে নিজেদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এবং দেশের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১৮ অক্টোবর রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিশন মিলনায়তনে শেখ রাসেলের ৫২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তবে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা প্রযুক্তিগত শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। একটা মানুষও এ দেশে ক্ষুধার্ত থাকবে না, গৃহহারা থাকবে না, শিক্ষার জন্য সবাই স্কুলে যাবে। মানুষের মতো মানুষ হবে। তারা মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। শিশু-কিশোরদের মানুষের মতো মানুষ হতে হলে, দেশপ্রেমিক যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে মানসম্মত উন্নত নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা, মেধা বিকাশের জন্য যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। দেশকে উন্নত দেশে রূপান্তর করার জন্য একটা জ্ঞানভিত্তিক মানবিক সমাজ বিনির্মাণে এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে অসাধারণ। তবে এর জন্য সবাগ্রে প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফল দেশের শিক্ষানুরাগী মানুষ ও সচেতন অভিভাবকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে দিয়েছে। কয়েক বছর ধরে কলা ও বাণিজ্য অনুষদের অধীনে ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী পাস করতে পারছে না। এবার তা স্থান নিয়েছে ৫.৫২ শতাংশে। এই ফল কোনোভাবেই প্রমাণ বহন করে না, দেশে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা গেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতের উন্নয়ন প্রশংসনীয়। দেশের এই উন্নয়ন অগ্রগতিকে ধরে রেখে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে মানসম্পন্ন শিক্ষার বিকল্প নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলোÑ দেশের বিপুলসংখ্যক শিশু-কিশোর শিক্ষার্র্থীর মোবাইল ফোন ব্যবহার, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে কিনা তা ভেবে দেখা দরকার। বাংলাদেশের স্কুলগামী শিশু-কিশোরদের হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন। কোচিং সেন্টার থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই শিশু-কিশোরদের হাতে দামি মোবাইল ফোন দেখা যায়। শিশু-কিশোরদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিয়ে কোনো বিধি-নিষেধ কার্যকর নেই। কিছু কিছু অতি উৎসাহী অভিভাবকও শিশুদের হাতে মোবাইল তুলে দিচ্ছেন। এতে করে যে সমস্ত সচেতন অভিভাবক তাদের শিশু সন্তানদের হাতে মোবাইল দিতে চান না তারাও পড়েছেন অত্যন্ত বেকায়দায়। আমার কিশোর ছেলেটিও তার সহপাঠী আশপাশের অন্তত পাঁচজনের নাম বলেছে যাদের মোবাইল ফোন আছে এ যুক্তিতে তাকেও একটি স্মার্টফোন দিতে হবে। আমি তাকে মোবাইল ফোন দেইনি। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেয়া যায় তার মনটা খারাপ। এই হলো আমাদের সমাজের বাস্তবতা।
পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহে ১৮ বছরের কম বয়সীদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ রয়েছে। মোবাইল ব্যবহারের কারণে শিশু-কিশোরদের লেখাপড়ার মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। অনেকে রাত জেগে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করায় স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে। এতে করে তারা ভালো কোনো কিছু চিন্তা করতে পারবে না, এটাই স্বাভাবিক। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু-কিশোররা যে শুধু পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ করছে তাই নয় একই সঙ্গে নিষিদ্ধ ছবির প্রতিও তারা আসক্ত হয়ে পড়েছে। শিশু-কিশোরদের জ্ঞান আহরণ ও মেধা বিকাশের জন্য বিদ্যমান এই পরিবেশ অব্যাহত থাকলে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। শিশু-কিশোরদের হাতে মোবাইল ফোন দেয়ার কারণে একদিকে নৈতিক স্খলন হচ্ছে, অন্যদিকে ভয়ঙ্কর বিবাদও ডেকে আনছে। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোবাইল ফোনে ট্রেনের ছবিসহ সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে তিন শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে যা হৃদয়বিদারক। সেলফি তুলতে গিয়ে প্রাপ্তবয়স্কদেরও মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর সংবাদ মাধ্যমে মাঝেমধ্যে প্রকাশিত হয় যা সত্যিই বেদনাদায়ক। সেলফির উন্মাদনা যেন দিন দিন বেড়েই চলছে। পৃথিবীর কোন দেশেই অবাধে শিশু-কিশোরদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেয়া হয় না। আমাদের দেশে শিশু-কিশোরদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে কোন বিধি-নিষেধ কার্যকর না থাকায় এই প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে, এতে করে মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। ভারতবর্ষেও আইন রয়েছে ষোলো বছরের নিচে শিশু-কিশোররা ইন্টারনেট ও ফেসবুক ব্যবহার করতে পারবে না। অনেক সময় দেখা যায় হঠাৎ মোবাইল ফোন হাতে পেয়ে কৌতূহলবশত অবুজ মেয়ে শিক্ষার্থীরা স্বল্প সময়ের কথাবার্তায় অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে প্রেমের সম্পর্কে এবং পরবর্তীতে ফোনে কথা বলা ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে যৌন হয়রানিরও শিকার হচ্ছে। কখনও কখনও প্রতারিত হয়ে এসব কিশোরীরা বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। সম্প্রতি ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার্স স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী রিশা নির্মমভাবে খুন হয়। দর্জির দোকানের কর্মচারী ওবায়দুল জামা বানানোর ডেলিভারি স্লিপ থেকে রিশার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে প্রেম নিবেদন করে। সেই প্রেম প্রত্যাখ্যান করায় শেষ পর্যন্ত ওবায়দুল তাকে ছুরিকাঘাত করে খুন করে। দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, মাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি প্রাথমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে যা রাজধানীর কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. এ এস এম আমান উল্লাহ বলেছেন, দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারে শিশু-কিশোররা। তিনি এ ব্যাপারে অভিভাবকদেরই বেশি দায়ী করেছেন। মোবাইল যোগাযোগের অন্যতম সহজ মাধ্যম। যোগাযোগের ক্ষেত্রে মোবাইল বাংলাদেশে একটি বিপ্লব এনেছে। সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের কাছে এখন মোবাইল ফোন। রিকশাওয়ালা, ঠেলাওয়ালা গৃহকর্মীসহ সকলের কাছেই মোবাইল ফোন। ছাত্রছাত্রীসহ অনেক বেকার যুবক-যুবতীর কাছেও একাধিক দামি মোবাইল ফোন দেখা যায়। বাংলাদেশে কত ভাগ মানুষ বিনা প্রয়োজনে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে তার একটা গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করি। কারণ খাদ্য উৎপাদনে, দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। দক্ষিণ কোরীয় বংশদ্ভূত মার্কিন নাগরিক বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেছেন, ১৯৫৯ সালে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নেয়ার সময় শর্তপূরণের মতো সক্ষমতা দক্ষিণ কোরিয়ার ছিল না। কিন্তু দক্ষতা উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ দক্ষিণ কোরিয়া আজকের এ পর্যায়ে এসেছে। বাংলাদেশের পক্ষেও দক্ষিণ কোরিয়ার কাতারে সামিল হওয়া সম্ভব বলে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশের এই আশা জাগানিয়া অগ্রগতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে মানুষের অপ্রয়োজনীয় খাতে খরচের বিষয়টিকেও মাথায় রাখতে হবে। মানুষকে মিত্যব্যয়ী হতে হবে। মাত্রারিক্ত অপব্যয় থেকে নাগরিকদের রক্ষা করতে হবে। অপ্রয়োজনে এবং অসচেতনভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা মনে হয় বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি। প্রাপ্ত বয়স্ক ও অনেক মানুষের মৃত্যুর উপলক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মোবাইল ফোন। সচেতনতার অভাবে রেললাইন পার হওয়ার সময় বা রেললাইনে হাঁটার সময় কথা বলতে বলতে প্রায়ই মৃত্যুর ঘটনা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ২০১১ সালের ১১ জুলাই মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে চট্টগ্রামের মিরসরাইর ট্র্যাজেডির কথা দেশবাসী ভুলেনি। চালকের অবহেলার কারণে ফুটবল খেলা শেষে বাড়ি ফেরার পথে কিশোর শিক্ষার্থীদের বহনকারী মিনি ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে ডোবায় পড়ে গেলে ৪৮ জন শিক্ষার্থীর প্রাণহানি ঘটে। যা ছিল হৃদয়বিদারক ও মর্মান্তিক। ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার প্রধান কারণ ছিল চালকের একটি মোবাইল সঙ্গে থাকা ও মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকা। অস্বীকারের কোন উপায় নেই তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের প্রয়োজনীয়তার কথা। কিন্তু মোবাইল ফোনের অপব্যবহার রোধ করার প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। ব্রিটেনে কোনো চালকের গাড়ি চালনো অবস্থায় কথা বলতে দেখিনি। সেখানকার গাড়ি চালকরা গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলার চিন্তাও করতে পারে না। যুক্তরাজ্যের রাস্তায় চলার সময় দেখেছি একজন চালক ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে সাথে সাথেই পুলিশ ঐ দোষী চালকের কাছে এসে পড়েছে এবং জরিমানা ধরিয়ে দিচ্ছে। চালকের অবহেলার কারণে দুর্ঘটনায় কারো মৃত্যু হলে তাকে হত্যা হিসেবে গণ্য করে কঠোর শাস্তির বিধান করা দরকার। গাড়ি চালানোর সময় চালক মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে তাৎক্ষণিক জরিমানার বিধান করে তা কঠোরভাবে কার্যকর করা দরকার। মোবাইল ফোন, ফেসবুক, ওয়াটস অ্যাপ, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। পর্নোগ্রাফির অবাধ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনও জরুরি হয়ে পড়েছে। গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেইজ ও সের্গেইব্রীন তাদের কোম্পানির সেøাগান ঠিক করেছেন ‘ডোন্ট বি ইভিল’ এ কথাটি তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের একটি দিক-নির্দেশনা হিসেবে ধরা যেতে পারে। আসলে বিশ্বায়নের এ যুগে ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমকে কোনো অবস্থায় বাদ দেয়া সম্ভব নয়। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য পড়াশুনারও চর্চার ব্যবস্থা। এর ভালো দিকটি বোঝার বয়স শিক্ষার্থীদের হতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর একটি চমৎকার সুযোগও তৈরি হয়েছে। পৃথিবীকে এগিয়ে নেবার ব্যাপারে তথ্যপ্রযুক্তি যেভাবে ভূমিকা রাখছে ঠিক তেমনি মানুষ অকল্যাণেও ব্যবহার করছে। খ্যাতিমান মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ ‘আল্লাহর ঘরের পবিত্রতা সুরক্ষা নিয়ে দুটি কথা’ শীর্ষক একটি নিবন্ধে লিখেছেন, হজব্রত পালন করতে এসেও মানুষ জাগতিক কিছুকে তো পরিত্যাগ করেইনি বরং পবিত্র কাবা শরিফে নিয়ে এসেছে জঞ্জাল। আজকের যুগে স্মার্ট ফোন সবার হাতে হাতে। তার সঙ্গে সেলফি স্টিক। পবিত্র বায়তুল্লাহ্ শরিফ তাওয়াফ করার সময়ও এই সেলফি স্টিক ধরে ভিডিও ফেইসবুক লাইভে অনেকেই ব্যস্ত। একই তৎপরতা মদিনাতেও দেখেছেন বলে তার প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে জানা যায়। মোবাইল প্রযুক্তি মানুষের ধ্যান ভাঙানোর জন্য ভূমিকা রাখছে। গাড়ি ড্রাইভিংয়ের সময় মোবাইল ফোনে কথা বলতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে এবং অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন পরিচালিত সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, রাজধানীতে ৭৭ শতাংশ কিশোর পর্নো ভিডিওতে আসক্ত। সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পর্নোগ্রাফি আসক্তি মাদকের চেয়েও ভয়ানক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয় যারা পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত তাদের মস্তিষ্কে মাদকাসক্তের মতোই নেশা কাজ করে। মাদকাসক্তদের যেমন স্বাভাবিক জীবনে ছন্দপতন ঘটে, তেমনি পর্নো আসক্তরাও ধীরে ধীরে অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে এবং বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়। তাই তরুণ সমাজকে রক্ষায় ক্ষতিকর ওয়েবসাইট বন্ধের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারকে সুপারিশ করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে।
শিশু-কিশোররা যাতে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করতে পারে সেজন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ করা দরকার, এ জন্য নিম্নলিখিত উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে : (১) ১৮ বছরের কম বয়সী কোন শিশু দোকান থেকে সিম ক্রয় করলে দোকানির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান রাখলে এবং এর প্রয়োগ দৃশ্যমান হলে কার্যকর ফল পাওয়া যাবে। (২) সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে মাঝেমধ্যে সমাবেশ করা যেতে পারে। (৩) কেজি স্কুল ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতে কোন শিক্ষার্থী মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের দফতর থেকে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে, ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জরিমানার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। (৪) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিকে শিশু-কিশোরদের মোবাইল ব্যবহারের ব্যাপারে আন্তরিক ও উদ্যোগী ভূমিকা অব্যাহত রাখতে হবে। (৫) শিশু শিক্ষার্থীরা যাতে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করে সেজন্য অভিভাবকদের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা নিয়ে সকল কেজি ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
লেখক : ব্যাংকার ও কলামিস্ট এবং সভাপতি
ব্যাংক অফিসার্স এসোসিয়েশন,
মৌলভীবাজার জেলা কমিটি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।