Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাঁধভাঙা স্রোত দেখে সরকারের নেতা মন্ত্রীদের বুকে কাঁপন ধরেছে

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিএনপির গণসমাবেশে জনগণের বাঁধভাঙা উত্তাল স্রোত দেখে সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের বুকে কাঁপন ধরেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, গত ১৪ বছর ধরে সীমাহীন নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার মানুষ সর্বশক্তি নিয়ে সারাদেশে জেগে উঠেছে। গুম, খুন, অপহরণ, হামলা, মামলা, জুলুম করে এতদিন মানুষকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছিল। জনগণ আর ঘরে বসে বসে মাফিয়া সরকারের হাতে অসহায়ের মতো জান-মাল হারা হতে চায় না। জনগণ এবার আটঘাট বেঁধে শেষ প্রস্তুতি নিয়েই সকল বাধার বিন্ধ্যাচল উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে এসেছে। মাত্র দুইটি গণসমাবেশ অবলোকন করেই সরকারের মন্ত্রীরা প্রলাপ বকতে শুরু করেছেন। গতকাল সোমবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, চট্টগ্রামের স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসমুদ্র দেখে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, “চট্টগ্রামে জব্বারের বলী খেলায় যে পরিমাণ লোক সমাগম হয়, বিএনপির সমাবেশে তাও হয়নি। বিএনপি হাঁকডাক করে মহাসমাবেশ নাম দিয়ে একটি ফ্লপ সমাবেশ করেছে।” পৃথিবীতে সম্ভবত হাছান মাহমুদ সাহেবই একমাত্র তথ্যমন্ত্রী যিনি সঠিক তথ্যকে টিনের বাক্সে তালা দিয়ে অসত্য তথ্য সম্প্রচার করেন। কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্ববাসী, পত্র পত্রিকা, গণমাধ্যম-সোস্যাল মিডিয়ায় দেখেছে জনসভাস্থল ছাড়িয়ে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল সরকার পতনের দাবীতে ঘর ছেড়ে আসা মানুষের ঢল। কেবল দেখতে পাননি হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে লোক সমাগম নিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা সঠিক তথ্য তুলে ধরছেন না। আমি প্রধানমন্ত্রীর নিকট টেলিফোনে বলেছি, লাখের কাছে লোক হয়েছে। সত্যকে আড়াল করে তো লাভ নেই, সত্য আড়াল করব কেন? বিএনপি ঢাকায় ১০ লাখ লোক সমাগম করলে আওয়ামী লীগ ৩০ লাখ লোক সমাগম করতে পারবে। “ওবায়দুল কাদের সাহেবদের জানা উচিত, জনগণ চিড়িয়াখানার প্রাণী নয়। বিএনপি মানুষ জড়ো করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত নয়। বিএনপির এই গণসমাবেশ মানুষের ভোটাধিকার আদায়, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
রিজভী বলেন, রাস্তায় যানবাহন বন্ধ করে দিচ্ছেন, পথে পথে বাধা, হামলা, গ্রেফতার, মামলা করছেন। তারপরও গণসমাবেশমুখী কাফেলা দিন দিন বেড়েই চলেছে। চিড়ামুড়ি নিয়ে দিন-রাত হেঁটে কিংবা ভ্যানে-ট্রলারে করে এসে সমাবেশ মাঠে-ময়দানে, রাস্তায়, ফুটপাথে, গলিতে, ছোট্ট ঘরে গাদাগাদি করে একত্রে, এমনকি বাথরুমের পাশে কাটাচ্ছেন হাজারো দেশপ্রেমিক জনতা। এই অভূতপূর্ব দৃশ্য, এদের অবদান-ত্যাগ বৃথা যাবে না। এই পরিস্থিতি উপলব্ধি করে আপনারা নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। তা না হলে গণঅভ্যুত্থান আসন্ন। বিএনপির এই নেতা ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যদি ব্যাপক লোক সমাগম করতে পারেন, তবে নিশিরাতে ভোট ডাকাতি কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ভোট করতে হয় কেন?
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে বলছেন, দুর্ভিক্ষ আসছে! যারা লুটপাটের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত তাদের দ্বারা অনাহার-অর্ধাহার আর দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হওয়ায় স্বাভাবিক। রাষ্ট্রের বারোটা বাজিয়ে এখন আপনি জনগণকে উপদেশ দিচ্ছেন ভেন্নার তেল দিয়ে কুপি ও হারিকেন জ্বালানোর প্রস্তুতি নিতে। এতদিন উন্নয়ন উন্নয়ন বাজনা বাজিয়ে দেশের মানুষের কান ঝালা পালা করে এখন জনগণের হাতে হারিকেন আর ভিক্ষার ঝুলি তুলে দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। ১৪ বছর দেশ চালিয়ে দেশটাকে ভেন্না গাছে তুলে এখন তাদের বাচাল গল্পবাজ মন্ত্রীরা আর ইউরোপ আমেরিকা সিংগাপুরের গল্প শোনায় না। তবে দেশ এবং জনগণের উন্নয়ন না হলেও প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ এবং তাদের স্বজন, পরিবার আত্মীয়দের উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে অর্থ সম্পদ বিদেশে পাচার হয়েছে। বিদেশে সেকেন্ড হোম করেছে-রাজপ্রাসাদ গড়েছে।
রিজভী বলেন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এখন স্বীকার করছেন, দেশ সংকটের দিকে যাচ্ছে। সামনের পরিস্থিতি খারাপ। রিজার্ভ সংকট, ডলার নেই, তাই তেল-গ্যাস আমদানি করা যাচ্ছে না! লুটপাট আর ব্যর্থতা চেপে রাখার জন্য সবকিছুতেই সরকার বিদেশের দোহাই দিচ্ছে। তারা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলে। অথচ বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ২০০৩ সালে ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যে ন্যাটো বাহিনীর যুদ্ধে আরো কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তখন জনগণের ভোটে নির্বাচিত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সরকার সবকিছু স্বাভাবিক রেখেছিলেন। কই তখনতো বেগম জিয়া জনগণের ওপর প্রভাব পড়তে দেননি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দুর্ভিক্ষ হবেই। ৭৪ সালেও দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। তখন কোথাও যুদ্ধ ছিলোনা। দেশের জনগণ জানে-মানে-বিশ্বাস করে বাংলাদেশের ইতিহাসে দুর্নীতি-দুর্ভিক্ষ আর আওয়ামী লীগ সমার্থক। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ময়মনসিংহে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে আসা ও ফেরার পথে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা এবং তাদের নামে মামলা দেয়ার ঘটনায় তীব্র, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এছাড়া ছাত্রদলের সাবেক নেতা মফিজুর রহমান আশিকের মুক্তি দাবি করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ