পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অভিবাসীদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। তাদের ভয় পাওয়া বা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এসময় তিনি অভিবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিশ্বনেতাদের প্রতিও আহ্বান জানান। গতকাল শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অভিবাসী বিষয়ক তিনদিনব্যাপী সম্মেলন ‘গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ (জিএফএমডি)-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জিএফএমডি চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশ এই সম্মেলনের আয়োজক। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলামও উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স সম্পর্কিত আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল উ হংবো, জাতিসংঘ মহাসচিবের আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি গ্রেগরি মানিয়াতিস, ইউএন উইমেনের উপ-নির্বাহী পরিচালক লাক্সমি পুরী, ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) মহাপরিচালক উইলিয়াম লেসি সুইং, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মহাপরিচালক গাই রাইডারসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। নতুন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের একটি ভিডিও বার্তা অনুষ্ঠানে প্রচারিত হয় এবং সিভিল সোসাইটির পক্ষে জিএফএমডি সিভিল সোসাইটি ডেইজ (সিএসডি) সভাপতি কলিন রাজা জিএফএমডি ২০১৬ সম্পর্কে সিভিল সোসাইটি রিপোর্ট উপস্থাপন করেন।
সম্মেলনে দেয়া ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, অভিবাসন একটি জটিল ব্যাপার। এটি এখন আর ‘আমাদের বা তাদের’ বিষয় নেই। এটা সব মানুষের এবং সব রাষ্ট্রের সমৃদ্ধি ও কল্যাণ সম্পর্কিত বিষয়। গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে আমরা এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছি। যেহেতু জিএফএমডি শীর্ষ সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছে, একটি নতুন চুক্তি প্রণয়নে আমি আপনাদের উচ্চাভিলাষী, বাস্তববাদী এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে আহ্বান জানাতে চাই। এজেন্ডা ২০৩০-এ অভিবাসী ও উদ্বাস্তু বিষয়ে যে অঙ্গীকার আমরা করেছি, তা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের একটি অনুমানযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে বিশ্বের শান্তি, প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য অন্যান্য বিষয়ের মতো অভিবাসনও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এপ্রিলে, বাংলাদেশ একটি ব্যাপকভিত্তিক ‘গ্লোবাল কমপ্যাক্ট ফর মাইগ্রেশন গভর্নেন্স’ প্রস্তাব জাতিসংঘে পেশ করেছে। গত সেপ্টেম্বরে অভিবাসন ও উদ্বাস্তু সংক্রান্ত জাতিসংঘ শীর্ষ সম্মেলনে আমি এটা দেখে আনন্দিত হয়েছি যে, বিশ্ব আমাদের মাইগ্রেশন কমপ্যাক্ট প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে। এ সময় জিএফএমডি’র সভাপতি পদে বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়ায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। এসময় তিনি ‘অভিবাসন সুশাসন’ বিষয়কে সামনে আনায় জাতিসংঘ মহাসচিবের অভিবাসন ও উন্নয়নবিষয়ক বিশেষ দূত পিটার সাদারল্যান্ডের প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ শুধু কাজের জন্য নয়, বহুবিধ কারণে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বিচরণ করে। বিশ্বায়নের এ যুগে বিপুলসংখ্যক মানুষের বিচরণ অব্যাহত থাকবে। সুতরাং, আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আমরা কীভাবে মানুষের চলাফেরা আরও নিরাপদ, নিয়মিত ও সুশৃঙ্খল করতে পারি। পাশাপাশি নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে একজন ব্যক্তি যেন তাঁর ইচ্ছানুযায়ী চলাফেরা করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন অভিবাসী শুধু একজন শ্রমিক নন। প্রত্যেক অভিবাসীর বলার মতো অসাধারণ গল্প আছে। একজন অভিবাসী যখন তাঁর পরিবার এবং দেশ ত্যাগ করেন, তখন তাঁকে অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হয়। অভিবাসীরা তাঁদের উদ্ভাবনী শক্তি, শ্রম ও সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাগতিক দেশের সমাজের উন্নয়নে অবদান রেখে থাকেন। তাঁরা তাঁদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় অন্যের জন্য ব্যয় করেন। আমরা অনেক সময় তাঁদের মানবিক বিষয়গুলো এবং মানুষ হিসেবে ন্যূনতম অধিকারগুলোর প্রতি অবজ্ঞা দেখাই।
অভিবাসনকে একটি জটিল মানবিক ব্যাপার আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অভিবাসন এবং অভিবাসীকে ভয় পাওয়া বা তাঁদের এড়ানোর কোনো কারণ নেই। এসময় তিনি ঢাকায় আগত বিদেশি অতিথিদের ভ্রমণ আনন্দদায়ক হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।’
‘অভিবাসন বিকল্প হতে পারে, অপরিহার্য নয়’-জাতিসংঘ মহাসচিব
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতিসংঘের নতুন মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস তার বাণীতে বলেছেন, নাগরিকরা বিকল্প চিন্তা হিসেবে অভিবাসনকে গ্রহণ করতে পারে। এটা যেন প্রয়োজন হয়ে না দাঁড়ায়। অভিবাসনের সঙ্গে উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র রয়েছে উল্লেখ করে গুতেরেস বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে তার দেশ পর্তুগালে তিনি অভিবাসীদের প্রবেশের সুযোগ দেন। এতে করে পর্তুগালের জন্মহার বাড়ে। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, অভিবাসন ছাড়া সমাজে স্থিতিশীলতা আসে না। তবে অভিবাসন বিষয়টি একই সঙ্গে মানবিক ও সংগঠিত উপায়ে হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি। পর্তুগালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গুতেরেস আরও বলেন, অভিবাসন নিয়ে সাম্প্রদায়িকরা অযৌক্তিক বিতর্ক করে। যা আমাকে দুঃখ দেয়। আমি বিশ^াস করি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে অভিবাসন। বক্তব্যে জিএফএমডি’র সম্মেলনের সফলতা কামনা করেন গুতেরেস।
প্রসঙ্গত, ১২৫টি দেশের প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের ৩০টিরও বেশি সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, গ্লোবাল সিভিল সোসাইটি এবং ব্যবসায়ী সংস্থার সাত শতাধিক প্রতিনিধি তিন দিনব্যাপী জিএফএমডি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন। অভিবাসন ও বৈশ্বিক শরণার্থী পরিস্থিতিতে করণীয় নানা বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে এবারের এই সম্মেলনে। অভিবাসন ও উন্নয়ন নিয়ে জাতিসংঘের উদ্যোগে এক দশক আগে জিএফএমডি সম্মেলনের উদ্যোগ নেয়া হয়। গত বছর তুরস্কের কাছ থেকে বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান পদ লাভ করে। ১২ ডিসেম্বর সমাপনী অনুষ্ঠানে চেয়ারের দায়িত্ব জার্মানীর হাতে তুলে দেবে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ১২ ডিসেম্বর অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্য দেবেন।
জিএফএমডি’র প্রথম দিন বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রসচিব
অভিবাসন ক্ষেত্রে সুশৃঙ্খল বৈশ্বিক ব্যবস্থা দেখতে চায় বাংলাদেশ
আইনি কাঠামোয় আসছে
অভিবাসীদের অধিকার
কূটনৈতিক সংবাদদাতা
প্রথমবারের মতো অভিবাসীদের অধিকার ও সুরক্ষার বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে আইনি কাঠামোতে আসতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলো ঐকমত্যের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এর জন্য বাংলাদেশ গ্লোবাল কমপ্যাক্টের প্রস্তাব করেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। গতকাল নবম গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিএফএমডি) সম্মেলনের প্রথম দিনের সরকারি পর্যায়ের আলোচনা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সম্মেলনের চেয়ার ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো: শহীদুল হক।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা কমপ্যাক্ট নিয়ে আলোচনা করছি এবং আশা করি সম্মেলন শেষে একটি দিক নির্দেশনা পাবো। গত সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘে কমপ্যাক্ট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সারা বিশ্ব একমত হয়েছে। এখন আমরা এই কমপ্যাক্টে কি কি উপাদান থাকবে তার আলোচনা করছি। আশা করি, সম্মেলন শেষে এ বিষয়ে একটি উপসংহারে আসতে পারব। বাংলাদেশ অভিবাসীদের পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কমপ্যাক্টে কাজ করবে বলেও জানান তিনি। আগামী ২০১৮ সালে বিশ্ব নেতারা এ চুক্তিটি অনুমোদন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ কমপ্যাক্টের উদ্যোক্তা বাংলাদেশ।
অভিবাসন ইস্যুটি অত্যন্ত এক্সক্লুসিভ উল্লেখ করে শহীদুল হক বলেন, সিভিল সোসাইটি কিছু বিষয়ে খুব শক্তিশালী বক্তব্য এবং মতামত দিয়েছে। তিনি বলেন, এ সম্মেলনে সরকার ও সিভিল সোসাইটির পাশাপাশি প্রথমবারের মতো বিজনেস কমিউনিটিও অংশ নিচ্ছে। এর আগে সুইডেন সপ্তম জিএফএমডি সম্মেলনে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের আনার চেষ্টা করলেও তারা সফল হয়নি। তাদেরকে যুক্ত করলে সে সময় সিভিল সোসাইটি ওয়াক আউট করতে চেয়েছিল। তবে আমরা সকল পক্ষকে রাজি করে এবার ব্যবসায়ীদেরকে জিএফএমডিতে যুক্ত রাখতে পেরেছি। সারা জীবনের জন্য এটি বাংলাদেশের বড় অর্জন হিসেবে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর পিছিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে সচিব বলেন, আমরা পরিবর্তিত তারিখ নিয়ে আলোচনা করছি। কেন সফর পিছিয়ে গেল সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীদের অনেক অসুবিধা থাকতে পারে। আগের সফরসূচিতে সমস্যা ছিল, এখন আমরা নতুন সফরসূচি নিয়ে কথা বলছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।