Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রিকশায় আঁকা ‘ময়ূর-সাপ’ সন্ধান দিলো খুনি ধর্ষকের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০২ এএম

সাত বছরের নিষ্পাপ শিশু সুরমার লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ নিশ্চিত হয় তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে এটাও জানা যায় খুনি একজন রিকশা চালক। কিন্তু তাকে সনাক্ত করা যাচ্ছিল না। ঘটনাস্থলের আশপাশের প্রায় ২০০ সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। তার কয়েকটিতে রিকশা চালককে দেখা গেলেও ছবি স্পষ্ট না। ফলে কোনভাবেই ওই অপরাধীকে সনাক্ত এবং পাকড়াও করা যাচ্ছিল না। কোন উপায় খুঁজতে পুলিশ কর্মকর্তারা বার বার সিসি টিভি ফুটেজ দেখতে থাকেন। এক পর্যায়ে রিকশার পেছনে আঁকা ছবিতে চোখ আটকে যায় এক পুলিশ কর্মকর্তার। দেখেন রিকশার পেছনে ময়ূর আর ফনা তোলা সাপের ছবি। এই ছবির সূত্র ধরে মাঠে নামে পুলিশ। পাওয়া যায় যিনি ছবি এঁকেছেন তাকে। তিনি সন্ধান দেন নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএর একটি গ্যারেজের। ওই গ্যারেজের রিকশায় তিনি এই ছবি এঁকেছেন। সেখানে গিয়ে ফের বিপাকে পড়তে হয় পুলিশকে। কারণ সব রিকশার পেছনে একই রকম ময়ূর আর সাপের ছবি। তবে তাতেও হাল না ছেড়ে তদন্ত চালিয়ে যায় পুলিশ। গ্যারেজ থেকে ভাড়া নেওয়া সকল রিকশার চালককে জড়ো করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। এক পর্যায়ে সনাক্ত করা হয় বেশভূষা পাল্টে ফেলা আসামি ওসমানকে।

গ্যারেজের মালিকও জানান, গত একমাস ধরে তার কথাবার্তা-চালচলন অসংলগ্ন লাগছে। ওসমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে সাইফুল নামে আরেক চালক এ ঘটনায় জড়িত বলে তথ্য দেয়। সাইফুলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর সে জানায়, ওসমান শিশুটিকে ধর্ষণের পর খুন করেছে। ঘটনার দুইদিন পর সে সাইফুলের কাছে সব স্বীকার করেছে। এরপর ওসমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে ঘটনার দায় স্বীকার করে। হত্যা-ধর্ষণের বিষয়ে ওসমানকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের এসআই কিশোর জানান, ১৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার দিকে বিরিয়ানি খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে হালিশহর কে-ব্লক থেকে সুরমাকে রিকশায় তুলে নেয় ওসমান। সেটা দেখে সুরমার সমবয়সী দুই বান্ধবী রিকশার সিটের পেছনে লোহার পাদানিতে উঠে যায়। ওসমান আবার রিকশা থামিয়ে তাদের তাড়িয়ে দেয়। সুরমাকে নিয়ে বড়পোল এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের পেছনের একটি দোকান থেকে ৪০ টাকা করে ৮০ টাকা দিয়ে দুই প্যাকেট বিরিয়ানি কিনে। স্থানীয় মনসুর মার্কেটের নিচে বসে দু’জনে বিরিয়ানি খায়। এরপর ওসমান সুরমাকে আবার রিকশায় তুলে নিয়ে পোর্ট কলোনির পরিত্যক্ত বাসাটিতে যায়। ওই বাসায় নিয়ে ওসমান যখন তাকে ধর্ষণ করতে উদ্যত হয়, তখন সুরমা চিৎকার দেয়। চিৎকার থামাকে ওসমান তার গলায় গামছা পেঁচিয়ে দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে। ধর্ষণের পর ওসমান বুঝতে পারে, মেয়েটি মারা গেছে। তখন সে পালিয়ে যায়। গ্রেফতার ওসমান গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমানের আদালতে ধর্ষণ ও খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

বুধবার রাতে নগরীর ডবলমুরিং থানার বেপারিপাড়া এলাকা থেকে তাকে বন্দর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। গ্রেফতার রিকশা চালক ওসমান হারুন মিন্টুর (৪৪) বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। চট্টগ্রাম নগরীর সিডিএ আবাসিক এলাকার ২৫ নম্বর সড়কে একটি গ্যারেজ থেকে রিকশা চালিয়ে তিনি আগ্রাবাদ-সিডিএ এলাকায় চালাতেন।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টার দিকে পোর্ট কলোনির ৮ নম্বর সড়কের মুখে একটি পরিত্যক্ত একতলা বাড়ির ভেতর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করেছিল বন্দর থানা পুলিশ। সুরমা আক্তার নগরীর বড়পোল এলাকার একটি বস্তির বাসিন্দা রিকশাচালক মো. কাউছারের মেয়ে। সে সময় পুলিশ জানিয়েছিল, সুরমাকে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ