Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশে প্রথমবারের মত বৃক্ষ ও বন পূর্ণাঙ্গ জরিপ কার্যক্রমের উদ্বোধন

আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়

| প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আশরাফুল ইসলাম নুর ও মনিরুল ইসলাম দুলু : সুন্দরবনে উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে সারাদেশে দ্বিতীয়বারের মত বৃক্ষ ও বনজরিপ-২০১৬ শুরু হয়েছে। এ জরিপের আওতায় সারাদেশের প্রায় ১ হাজার  ৮৫৮ প্লটে এ জরিপ কাজ চালানো হবে। প্রথম বছরে সুন্দরবন ও দেশের উপকূলীয় ও পাহাড়ী এলাকায় এ জরিপ কাজ করা হবে। পরের বছর দেশের অন্যান্য স্থানে এ জরিপ কাজ চালবে। গতকাল শনিবার দুপুরে বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু প্রধান অতিথি হিসাবে এ জরিপ কাজের উদ্বোধন করেন।
মন্ত্রী বলেন, সুন্দরবন আমাদের মায়ের মতন। কোনভাবেই বিশ্বঐতিহ্যের সুন্দরবন ধ্বংস হতে দেয়া হবে না। এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সূত্র জানান, বনজ সম্পদের সুরক্ষা, সর্বোত্তম ব্যবহার সুনিশ্চিত, বনের আচ্ছাদন বৃদ্ধি এবং বন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশে এ জরিপের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বন অধিদপ্তর এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। তাদের সহযোগিতা করছে স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় সরকার, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্থা (এফএও), ইউএসএআইডি এবং সিলভাকার্বন। আগামী ২০১৮ সালে এ জরিপ কাজ শেষ হবে। এটিই প্রথম পরিপূর্ণ দেশের বনজসম্পদ জরিপ বা গবেষণা কার্যক্রম। এর আগে ২০০৫ সালে সারাদেশে এ ধরনের জরিপ কাজ চালানো হয়। তবে সেটি পূর্ণাঙ্গ জরিপ কাজ ছিল না।
প্রধান বন সংরক্ষক মোঃ ইউনুস আলী বলেন, ২০০৫-৭ সালে প্রথমবার দেশ ব্যাপী বৃক্ষ ও বনজ সম্পদের সমীক্ষা হয়েছিল। বৃক্ষ ও বনজ জরিপ ২০১৬ বাংলাদেশের জন্য প্রণীত নকশা অনুযায়ী মোট এক ৮৫৮টি নমুনা প্লট হতে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। যার ৪২৯টি পাহাড়ী বনে, ১৪৫টি শালবনে, ১১৩টি উপকূলীয় বনায়ন এলাকায়, সুন্দরবনে ১৭৩টি এবং ৯৯৮টি সরকারি বন বহিভূত গ্রামীণ বন এলাকায় অবস্থিত। জরিপের মাধ্যমে বনজসম্পদের পরিমাণ, বনের আচ্ছাদন, বৃক্ষ প্রজাতি, কাঠ ও জ্বালানি কাঠের পরিমাণ, বনাঞ্চলের মজুদ কার্বন এবং বন হতে প্রাপ্ত সুবিধাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এ জরিপের কার্যক্রম জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা এবং রেটপ্লাস পরিকল্পনা প্রণয়নে ও বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করবে। বৃক্ষ ও বনের সঠিক ব্যবস্থাপনা বন বিষয়ক দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন পরিকল্পনার বিভিন্নসূচক অর্জনে প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারনের জন্য প্রতি ৫ বছর পরপর বৃক্ষ ও বন জরিপের প্রয়োজন বলেও তিনি মতামত দেন।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক জহির উদ্দিন আহমেদ, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোঃ ফারুক হোসেন, অতিরিক্ত ডিআইজি আকরাম হোসেন, জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার চীফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার হেনরি ম্যাথিউ, ইউএন রেড বাংলাদেশ জাতীয় কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক রাকিবুল হাসান মুকুল, বন অধিদপ্তরের রিমস্ ইউনিটের উপ-বন সংরক্ষক জহির ইকবাল প্রমুখ।
জরিপ কার্যক্রমের সদস্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক প্রফেসর ড. নাজমুস সাদাত জরিপ কাজ সম্পর্কে বলেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মত এই বনজ সম্পদ জরিপ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এর সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন দাতাসংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় ও বন বিভাগ। এই গবেষণার মাধ্যমে আমাদের প্রকৃত বনজ সম্পদ কতটুকু আছে সেটা চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। তিনি জানান, এই গবেষণায় সারাদেশের গ্রামীণ বনজসম্পদের পরিমাণও জানা যাবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রকিবুল হাসান সিদ্দিকী বলেন, এই জরিপ কার্যক্রমের প্রধান তিনটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, বনজসম্পদ চিহ্নিতকরণ, পাঁচ বছর পরে আবার গবেষণা করে দেখা বনে কী ধরনের পরিবর্তন হয়েছে এবং এই পরিবর্তনে কি কি প্রভাব কাজ করেছে। এছাড়া কার্বন কতটুকু আছে। এই কার্বণ নি:সরণের জন্য উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিসংস্থা (এফএও) চিফ টেকনিক্যাল এ্যাডভাইজার মেথিউ হেনরি বলেন, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশের বনজসম্পদ জরিপ কাজ সম্পন্ন করা হবে।
বাংলাদেশ বনবিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুস আলী আরও বলেন, আমরা সমন্বিতভাবে বনজসম্পদ জরিপ কাজ শুরু করেছি। গতকাল (শনিবার) সুন্দরবন থেকে এ জরিপ কাজ শুরু হয়েছে। ইউএসএআইডি এ জরিপ কাজে অর্থায়ন করছে। এর মাধ্যমে বন ও বৃক্ষ জরিপ করা হবে। জরিপের মাধ্যমে আমাদের কি পরিমাণ বন ও কাঠ আছে তা জানা যাবে। এছাড়া কার্বন নির্ণয় করা গেলে আমরা বলতে পারবোÑ বাংলাদেশে কি পরিমাণ কার্বন মজুদ আছে। এরআগে, ২০০৫ সালে সারাদেশে এবং ২০০৯-১০ সালে শুধুমাত্র সুন্দরবনে জরিপ করা হয়েছিল। বর্তমান জরিপ কাজের সঙ্গে স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জড়িত রয়েছে।
তিনি বলেন, সর্বোপরি এই জরিপ, দেশের সরকারি বন ও গ্রামীণ বনের উন্ননয়ন, ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের বৃক্ষরোপণ উদ্যোগকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন তার দিক-নির্দেশনা পাওয়া যাবে।
মংলা বন্দর সংলগ্ন সুন্দরবনের পাশে পশুর নদীর তীরে বিভিন্ন ছোট-বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে, এই শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যে সুন্দরবনের কোন ক্ষতি হচ্ছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এখনো এধরনের কোন জরিপ কাজ করা হয়নি। তবে জরিপ কাজ করা গেলে কোনধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান কি ধরনের বর্জ্য নদীতে নিঃসরণ করছে এবং তাতে কি ধরনের ক্ষতি হচ্ছে তা জানা যাবে। এরআগে ক্ষতির ব্যাপারে মন্তব্য করা যাবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ