পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আগামী বছর বিশ্বে ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কট ও দুর্ভিক্ষের প্রবল সম্ভাবনা থাকার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমার সাম্প্রতিক সফরের সময় আমি অনেক বিশ্বনেতা ও সংস্থার প্রধানদের সাথে কথা বলেছি। প্রত্যেকেই এই বিষয়টি (খাদ্য নিরাপত্তা) নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন। তারা মনে করেন, ২০২৩ সাল একটি খুব ভয়াবহ বছর হবে। এ বছরে খাদ্য সঙ্কট ও দুর্ভিক্ষ হতে পারে।
গতকাল রাজধানীর এনইসি ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে যুক্ত হন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অধীনস্থ একটি নির্বাহী কমিটি একনেক, যা সকল জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প যাচাই করে এবং অনুমোদন দেয়। সেই সঙ্গে ইন্টেলিজেন্টস ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমসহ ৬টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এছাড়া গত তিন মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) বাস্তবায়ন বেড়েছে। বৈঠক শেষে ব্রিফিং-এ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এসব তথ্য জানান। এনইসি সšে§লন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক পরবর্তী ব্রিফিং-এ পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম উপস্থিত ছিলেন। আরও ছিলেন পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ, আইএমইডি সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. কাউসার আহমেদসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা (সচিব) উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অবশ্যই খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে এবং সেগুলো (খাদ্য) সংরক্ষণ করতে হবে। খাদ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে আমাদের বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের মাটি খুবই উর্বর এবং (উর্বর ভূমি ব্যবহার করে) আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এড়িয়ে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মিতব্যয়িতা বজায় রাখার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানি, গ্যাস এবং অন্য সবকিছু ব্যবহারেই মিতব্যয়িতা বজায় রাখতে হবে। আমি প্রত্যেক পরিবারকে অনুরোধ করব; তারা যেন যতটুকু পারেন, সঞ্চয় করেন। এবং এটি আমাদের সরকারের জন্যও প্রযোজ্য। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার কোনো অপ্রয়োজনীয় ব্যয় করবে না।
তিনি বলেন, আমরা যা প্রয়োজন তা ব্যবহার করব, এর বেশি না। এর বাইরে কিছু করার সুযোগ আমাদের নেই। কারণ আমি বিশ্বনেতা ও সংস্থা প্রধানদের মধ্যে উদ্বেগ দেখেছি। তাই, আমাদের অবশ্যই সতর্কতামূলক পদক্ষেপগুলো মেনে চলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, তারা (জনগণ) আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। যতদিন মানুষ আমাদের সাথে থাকবে, ততদিন আমাদের কোনো চিন্তা নেই। করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলা করার সময়ের মতো জনগণকে আমাদের উৎসাহ দিতে হবে এবং তাদেরকে কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে দেশে যে মন্দার প্রভাব পড়ছে, তা থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। প্রতিবার মূল্যস্ফীতি নিয়ে আলোচনা করতে পরিকল্পনা কমিশনকে তাদের মূল্যবান সময় ব্যয় না করারও অনুরোধ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কারণ বিশ্বের অনেক দেশ এই বিষয়ে আলোচনা করে না (খুব বেশি)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো... তাদের নিজেদের দেশে বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি আলোচনা করে না। তিনি বলেন, আমাদেরও এই বিষয়ে কোনো বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন নেই। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম মানুষের নাগালের মধ্যে রাখার চেষ্টা করা উচিত। যা প্রয়োজন আমরা তাই করব। যেকোনো প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, জনগণের সর্বোচ্চ সুবিধা নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে। একই সঙ্গে ফান্ড পাওয়া গেলেও কোনো অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প হাতে নিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার দরকার নেই। আমাদের যে কোনো প্রকল্প খুব সতর্কতার সাথে যাচাই-বাছাই করে নিতে হয়, যাতে সেই প্রকল্প থেকে আমরা কিছু রিটার্ন পেতে পারি; যা দেশের উপকারে আসে। আমরা (এখন শুধু) এই ধরনের প্রকল্প হাতে নেবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সেরকম কোনো প্রজেক্ট নিইনি। আমরা এ ব্যাপারে সবসময় সতর্ক ছিলাম। ভবিষ্যতেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, জনগণের প্রতি তার প্রশাসনের দায়িত্ব রয়েছে। ‘আমরা এটি মনে করি, আর আমরা এজন্যই কাজ করি।’
কিছু অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলেও চলমান প্রকল্পগুলো যত দ্রুত সম্ভব শেষ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করলে আমরা সেসব প্রকল্পের সুফল পাবো এবং দেশের অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমাদের এই প্রকল্পগুলো বাছাই করতে হবে এবং দ্রুত সেগুলোর বাস্তবায়ন করতে হবে। যেসব প্রকল্প কিছুটা ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে সেগুলোকে চিহ্নিত করতে সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা ছাড়া কোনো দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ২১ বছর দেশের জনগণের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা ছিল না। ক্ষমতা ছিল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেনানিবাসের ভেতরে। দেশের সংবিধানকে উপেক্ষা করে সামরিক অধ্যাদেশ দ্বারা দেশ পরিচালিত হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, গণতন্ত্রের নামে প্রহসন হয়েছে এবং ভোট কারচুপি তখন স্বাভাবিক একটা নিয়ম হয়ে গিয়েছিল। আমরা এগুলো দেখেছি। এসব কারণে বাংলাদেশ এগোতে পারেনি। তিনি বলেন, ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর সরকার বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। শেখ হাসিনা বলেন, এই সাফল্যের পেছনে একটি কারণ আছে। আর তা হলো বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো বাধা ছাড়াই এতদিন গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রয়েছে। গণতন্ত্রের নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতার কারণেই আমরা এই সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশের সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে একনেকে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে বিশ্ব পরিস্থিতি কারনে আমরা শংকার মধ্যে আছি। কিন্তু এখনও আমাদের অর্থনৈতিক সূচকগুলো ভালো অবস্থানে আছে। গত তিন মাসে দেশে রেমিটেন্স গত অর্থবছরের তিন মাসের তুলানায় বেশি এসেছে। এছাড়া রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে ছিল ১১ শতাংশ। সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী আমদানি কমে হয়েছে ১৬ দশমিক ৯২ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে আমদানি বেড়েছিল ৪৫ শতাংশ্। সরকারি বিদেশী বিনিয়োগ গত ৩ মাসে বেড়ে হয়েছে ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ, গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারি পরিকল্পনা মতো মুদ্রা সরবরাহ কমে হয়েছে ৮ দশমিক ১ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১১ দশমিক ৬ শতাশ। বেসরকারি ঋণ প্রবাহ বেড়ে হয়েছে ১৪ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের ৩ মাসে ছিল ৮ শতাংশ। পরিকল্পনা মতো গত ৩ মাসে সরকারি ঋণ প্রবাহ কমে হয়েছে ৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর একই সময়ে ছিল ৫ হাজার ১০৮ কোটি টাকা।
সভায় ইনটেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম স্থাপনসহ ৬ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ১৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৪ হাজার ৩৬২ কোটি ৬৩ লাখ , বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ২৬৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২ হাজার ৩৮৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ব্রিফিং এ বলেন, সড়কের ইলেকট্রোনকি কন্ট্রোল ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। আমরা যেহেতু আইন মানিনা, সেহেতু এই সিস্টেম সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। পরীক্ষমূলকভাবে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার থেকে পদ্মা সেতু পর্যন্ত নতুন এ সিস্টেম স্থাপন করা হবে। এরপর সফলতা লাভ করলে সারা দেশে মহা প্রকল্প নেওয়া হবে। ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম সংক্রান্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১২২ কোটি টাকা। একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্প গুলো হচ্ছে,সীমান্ত হোস্টেল কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, ব্যয় হবে ৫৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এছাড়া ঘোনাপাড়া হতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ লুৎফর রহমান সেতু এ্যাপ্রোচসহ সড়কাংশ যথাযথ মানে উন্নীতকরণ, ব্যয় ৩৪৭ কোটি টাকা। শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলায় পদ্মা নদীর ভাঙ্গন রোধকল্পে নদী তীর সংরক্ষণ, ব্যয় ৫৫২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প, ব্যয় বেড়েছে ৫ হাজার ৩৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ফলে এ প্রকল্পে মূল ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। খাল পুনরুদ্ধার, সংস্কার ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।