এফ আর টাওয়ারের ঘটনা : জামিন পেলেন বিএনপি নেতা তাসভীর
রাজধানীর বনানীতে এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা তাসভীরউল ইসলাম জামিন পেয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মো.তোফাজ্জল হোসেন জামিনের আদেশ
আরিফ চৌধুরী শুভ : প্রকৃতিই বলছে এখন শীতের মৌসুম। প্রকৃতিতে হীম বাতাসের পাশাপাশি সত্যপ্রবাহ বইতে শুরু করেছে কয়েকদিন আগ থেকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দিনের বেশিরভাগই সূর্য কুয়াশার আড়ালে থাকে। এপ্রিল-মে পর্যন্ত থাকতে পারে শীতের আবাহ। জানুয়ারি থেকে শীতের মাত্রা বাড়বে আরও কয়েকগুণ। তাই বাজারে আসতে শুরু করেছে বাহারি রঙের শীতের পোশাক। শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেমন বাড়ছে ক্রেতা ও বিক্রেতার সংখ্যা তেমনি বাড়ছে গরম কাপড়ের দামটাও। সাধ্যের মধ্যে পছন্দের শীত বস্ত্রটি কিনে নিতে পারেন রাজধানীর হকার্স মার্কেট বা ফুটপাত থেকে।
রাজধানীর বিপণিবিতানগুলো ছাড়াও ফুটপাতে বিক্রি হয় শীতের গরম কাপড়। বাচ্চা, বুড়ো আর শিক্ষার্থীরাও হুমড়ি খেয়ে পড়েন এসব দোকনে। নিম্নআয়ের যারা তারই বেশি হকার্স আর ফুটপাতের কাস্টমার। কেউ নিজের জন্য কিনছেন, আবার কেউ কিনছেন গ্রামে থাকা পরিবারের সদস্যদের জন্য। পরিবারের সবার জন্য সাধ্যের মধ্যে আপনিও কিনুন পছন্দের পোশাকটি। ব্যবসার জন্য নিজেও হতে পারেন মৌসুমি পোশাক বিক্রেতা। রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাত আর হকার্স মার্কেট ঘুরে শীতের পোশাক নিয়ে প্রতিবেদনটি করেছেন আরিফ চৌধুরী শুভ।
কোথা থেকে আসে শীতের পোশাক?
রাজধানীর ফুটপাতে বা হকার্স মার্কেটে কম টাকায় চকচকে যে পোশাকটি কিনে নিচ্ছেন আপনি, সেটি কি নতুন না সেকে- হ্যান্ড বোঝার উপায় নেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, হকার্স বা ফুটপাতের কোন শীতের পোশাকই নতুন নয়। ৯০ শতাংশ পোশাক আছে দেশের বাহির থেকে। তাইয়ান, ফিলিপাইন, চায়না, হংকং, জাপান, সৌদি আরব, কুয়েত, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ডসহ আরো অনেক দেশ থেকে আসে এই পোশাক। তাদের ব্যবহৃত পোশাকটি ড্রাইওয়াশ করে বাংলাদেশে নিয়ে আসে একশ্রেণির হকার।
চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হওয়ার পরে পাইকারি বাজারের মাধ্যমে হকার হয়ে এই পোশাক চলে আসে ক্রেতার হাতে। রাজধানীর ফুটপাতে প্রায় ১০ হাজার শীত পোশাক বিক্রেতা রয়েছে। প্রতিদিন সকালে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে পাইকারি বা নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হয় শীত পোশাক। নিলামের মাধ্যমে ১০ হাজার, ১৫ হাজার, ২০ হাজার টাকা ধরে প্রতিগাইট শীতবস্ত্র ক্রয় করেন হকাররা। প্রতি গাইটে ৪০০ থেকে ৫০০টি কাপড় থাকে। সেগুলো বাচাই করে ভালোগুলো বিক্রির জন্য প্রদর্শন করা হয়।
কোথায় পাবেন সস্তা দামের শীত পোশাক?
রাজধানীর সদরঘাট, মতিঝিল, পুরানো পল্টন বায়তুল মোকারম মসজিদের সামনে, নীলক্ষেত, খিলক্ষেত, নিউমার্কেট, মৌচাক, মালিবাগ, ফার্মগেইট, মিরপুর, গাবতলী, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি, শনির আখড়া, বাড্ডা, রামপুরাসহ বেশ কিছু স্থানে শীতের পোশাক বিক্রি করা হয়। এছাড়াও ফুটপাতের বিভিন্ন জায়গায় খ-কালীন শীত পোশাক বিক্রি করেন হকাররা।
কেমন দামে ফুটপাতে বিক্রি হয় শীতের পোশাক?
শীতের পোশাকের মধ্যে সুয়েটার, মাপলার, কানটুপি, হাতমোজা, মোজা, ট্রাউজার, ব্লেজার, মোটা কামিজ, কম্বল, চাদর, মোটা কাঁথা, মোটা মালসি, গিলাপ, হুইলবেড কাভার ইত্যাদি। সর্বনি¤œ ১০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা পর্যন্ত সোয়েটার জাতীয় মোটা কাপড় পাওয়া যাবে। কাঁথা, কম্বল, গিলাপ, বেডকাভার আর মোটা কামিজ সর্বনি¤œ ৩০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। তবে কোর্ট বা ব্লেজারের সাইজ ও কাপড় অনুযায়ী দাম পড়বে ৫০০ থেকে ১০০ টাকা।
বাচ্চাদের পোশাক
এই শীতে বাচ্চাদেরও বাহারি রকমের পোশাকের সরবরাহ রয়েছে ফুটপাতের দোকানগুলোতে। সর্বনি¤œ ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৭৫০ টাকার মধ্যে ভালো মানের পোশাক ক্রয় করা যাবে ফুটপাত থেকে। কানটুপি, হাতমোজা, সুয়েটার, পায়ের মোজা, নরম তোশক, ছোটদের কম্বল ইত্যাদি পাওয়া যাবে ফুটপাতে।
কেমন জুতা কিনতে পারেন শীতে?
শরীরের সবকিছু গরম কাপড়ে আবৃত
থাকলেও বাদ পড়ে যায় পায়ের অংশটুকু। তাই শরীরের পোশাকের সাথে মানানসই জুতা, কনভাটর্স, কেটর্স, সু, লেপার্টসহ বিভিন্ন ডিজাইনের জুতা কিনতে পারেন ফুটপাত থেকে। নিউমার্কেট, গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল, মালিবাগ মোড়, বসুন্ধরা সিটির সামনে, ফার্মগেইট, মিরপুরসহ আরো কিছু স্থানে রয়েছে ফুটপাতে জুতার বিশাল সরবরাহ। সর্বনি¤œ ১৫০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে কিনে নিতে পারেন পছন্দের পাদুকাটি।
কেমন আয় হতে পারে ফুটপাতের শীতকাপড় বিক্রি করে?
রাজধানীর পল্টনে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে শীতের পোশাক বিক্রি করে আসছেন নোয়াখালীর রমজান আলী। দাদার পরে বাপ আর এখন নিজে ফুটপাতে শীতের পোশাক বিক্রি করে ৭ জনের সংসার চালাচ্ছেন। তার মত বরিশালের আলী আকবর, ভোলার দিদারুলসহ অনেকেই জীবিকা নির্বাহের জন্য এ পথ বেঁচে নিয়েছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। প্রতি মৌসুমে খরচ বাদ দিয়ে প্রায় লাখ খানিক টাকা আয় থাকে রমজান আলীর। তবে দিদারুল একটু ভিন্নভাবেই বললেন তার ব্যবসার কৌশল। গত বছর লাভের অংশ বেশি না থাকলেও এবার প্রত্যাশিত বিক্রি হবে তার আশা।
প্রতি গাইট পোশাক খোলার পরে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০টি পোশাক থাকে। গাইট ভালো হলে ৩০০ থেকে ৩৫০টি পোশাক টিকে। বাকিগুলো ফেলে দেন দোকানিরা। গাইট প্রতি কখনো ৭ থেকে ১০ হাজার টাকাও লাভ হয়। তবে জুতা দোকানির আয়ের হিসাবটা একটু বেশি। প্রতি মৌসুমে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকাও তাদের পকেটে থাকে।
যা খেয়াল রাখতে হবে?
ফুটপাতে ব্যবহৃত জিনিসই বেশি পাওয়া যাবে। তাই তাতে রোগজীবাণু থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। অন্যের ব্যবহৃত জিনিসটি যত কম দাম দিয়েই ফুটপাত থেকে কিনেন না কেন, ব্যবহারের আগে তা পরিষ্কার করে এবং ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে পরিধান করুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।