Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

প্লাস্টিকের বিকল্প উদ্ভাবন করতে হবে

রাজধানীতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সেমিনার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিশ্চিত করতে উদ্ভাবনী এবং কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। বর্জ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়াটি লাভজনক ব্যবসায়িক উদ্যোগ হিসেবে নেয়া গেলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে টেকসই করা যাবে। এ ক্ষেত্রে সার্কুলার বা চক্রাকার প্রক্রিয়া অনুসরণ করাকে কার্যকর সমাধান হতে পারে।

গতকাল শনিবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও ইউনিলিভার বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘প্লাস্টিক বর্জ্যরে টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য নীতি সহায়তা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। সেমিনারের প্যানেল আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ইউ জু এলিসন এল বলেন, প্লাস্টিকের বিকল্প উদ্ভাবন এবং এর মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে পরামর্শ দেন।

মন্ত্রী সার্কুলার প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ভ্যালু চেইনের অংশীদারদের ক্ষমতায়ন ও অনানুষ্ঠানিক খাতকে সামগ্রিক সহযোগিতা দেয়ার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ভ্যালু চেইনে অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, ভাঙ্গারি ও বর্জ্য সংগ্রাহকরা রয়েছেন। এই খাতটি অনানুষ্ঠানিক হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত উল্লেখ করে এই খাতে সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি। একই সঙ্গে পরিবেশ ও অর্থনীতির স্বার্থেই টেকসই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি উপযোগী কাঠামো তৈরির তাগিদ দেন।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি জটিল প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে বহু অংশীজন ও খাত সম্পৃক্ত। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা ও ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগে নীতি প্রণয়ন জরুরি।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, ভিশন-২০৪১ এ টেকসই নগরায়ণ লক্ষ্যের অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ হিসেবে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে প্লাস্টিক বর্জ্যকে টেকসই উপায়ে পুনঃব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, জিডিপি বৃদ্ধির সঙ্গে প্লাস্টিকের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়াটা স্বাভাবিক। তবে প্লাস্টিক বর্জ্যরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব এই খাতে মূল চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও তাদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা জরুরি।
ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও ও এমডি জাভেদ আখতার তার উপস্থাপনায় বলেন, আমরা প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সিটি কর্পোরেশনগুলোর সঙ্গে বেশকিছু পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এ উদ্যোগগুলো যথাযথ সুবিধা ও সহযোগিতা না পেলে, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এই ধরনের উদ্যোগ নিতে উৎসাহিত হবে না।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ও এফবিসিসিআইর প্যানেল বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. ইজাজ হোসাইন। তিনি বলেন, সরকার নীতি পর্যায়ে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভাগুলোর কারিগরি ও আর্থিক সক্ষমতার অভাব মূল সমস্যা। এ কারণে সঠিক প্রক্রিয়ায় বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ ও উৎসে বর্জ্য পৃথক করা যাচ্ছে না। যা রিসাইকেলকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। স্বল্পমেয়াদে ম্যাটেরিয়াল রিকভারি ফ্যাসিলিটি (এমআরএফ) স্থাপন করে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে সহজে এবং কম খরচে বিকল্প জ্বালানি তেল (আরডিএফ) উৎপাদন করা সম্ভব।

সাবেক এই বুয়েট অধ্যাপক বলেন, দীর্ঘমেয়াদে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন দেশের সফল মডেলগুলোকে লোকালাইজেশন বা দেশের জন্য উপযোগী করতে হবে। যেহেতু প্লাস্টিকের ওপর দেশের প্রায় সবাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল, তাই যে কোনো নীতি বা আইন প্রণয়নের আগে যথাযথ গবেষণা, সমীক্ষা ও পাইলটিং করার ব্যাপারে মূল প্রবন্ধে গুরুত্বারোপ করা হয়।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি বিপিজিএমইএর সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, প্লাস্টিক খাত দেশের সব শিল্পের সহযোগী চালিকাশক্তি।

সেমিনারের প্যানেল আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ইউ জু এলিসন এল বলেন, প্লাস্টিকের বিকল্প উদ্ভাবন এবং এর মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে একটা বৃত্তাকার অর্থনীতি তৈরির জন্য সিটি কর্পোরেশন ও উপকূলীয় অঞ্চলে কাজ করা প্রয়োজন। এজন্য প্লাস্টিক বর্জ্য এবং এর ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নীতিমালা প্রণয়নে সমন্বয় করতে হবে। যেন এর মাধ্যমে পরিবেশ এবং মানুষের উপকার হয় এবং দেশে সবুজ প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
এছাড়াও প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন এফবিসিসিআইর প্যানেল উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম-সচিব ইকবাল হাবিব, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. মইনুল ইসলাম প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ