Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দেশের অধিকাংশ এলাকা শত্রুমুক্ত

ফিরে দেখা বিজয়ের মাস

| প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হোসেন মাহমুদ : ’৭১-এর আজকের দিনে দেশের অধিকাংশ এলাকা শত্রুমুক্ত করে বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী বীরদর্পে ঢাকার দিকে এগিয়ে আসতে
থাকে। সবার চোখ তখন ঢাকার দিকে, আসন্ন বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা। হানাদার পাক সেনারা প্রায় প্রতিটি রণাঙ্গনে পরাজিত হতে হতে মনোবল হারিয়ে হন্যে হয়ে বাঁচার পথ খুঁজতে থাকে। বাংলাদেশের দামাল মুক্তিযোদ্ধারা এবং ভারতীয় বাহিনী কয়েকদিন ধরে সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল। এদিন এসব বাহিনীকে এক কমান্ডের অধীনে এনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সিনিয়র কমান্ডারদের যৌথবাহিনী পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। এদিন ঢাকা রেডিও ট্রান্সমিশন স্টেশনের ওপর সরাসরি বিমান আক্রমণ চালানো হলে ঢাকা রেডিও’র সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। বিমানবাহী ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ বিক্রান্তের বিমানগুলো চট্টগ্রামে সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর ছাড়াও পাক হানাদারদের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুসমূহের ওপর বিরতিহীনভাবে আক্রমণ চালাতে থাকে। আজকের এই দিনে হিলিতে প্রচ- রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ অব্যাহত থাকে এবং হিলির পার্শ্ববর্তী পাকিস্তানি সামরিক অবস্থান ভাদুরিয়াতে আক্রমণ চালানো হয়। এদিকে রংপুর ও সৈয়দপুর থেকে হানাদার বাহিনী পালিয়ে ফুলছড়িঘাট দিয়ে যমুনা নদী পার হয়ে ঢাকা যাওয়ার চেষ্টা করছেÑ এমন খবর পেয়ে যৌথবাহিনী গাইবান্ধা ও ফুলছড়িঘাট দখল করে অবস্থান নেয়। পলাতক সেনারা যাতে ঢাকায় এসে পাকবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি না করতে পারে, সে জন্যই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী মিলে দিনাজপুর, রংপুর ও সৈয়দপুরে পাক হানাদারদের অবরোধ করে রাখে। এছাড়া মিত্রবাহিনী কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাস সংলগ্ন উঁচু ভূমিতে সুদৃঢ় অবস্থান নেয়। এরপর তারা ময়নামতিতে হানাদারদের ওপর আক্রমণ শুরু করে।
এদিন আশুগঞ্জ শত্রুমুক্ত হওয়ার ফলে ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট, সিলেট শহর ও এর বাইরের কিছু এলাকা এবং চট্টগ্রামের কিছু অংশ ছাড়া পুরো পূর্ব সেক্টর শত্রুমুক্ত হয়। যৌথবাহিনীর প্রচ- প্রতিরোধের মুখে হানাদার বাহিনী কুষ্টিয়া ছেড়ে পালাতে শুরু করে।
এদিন ময়মনসিংহ শত্রুমুক্ত হয় এবং যৌথবাহিনী জামালপুর মুক্ত করার লক্ষ্যে এ শহরের কাছাকাছি অবস্থান নেয়।
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, আজ ১০ ডিসেম্বর মাদারীপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় মাদারীপুর।
মাদারীপুরের সমাদ্দার এলাকায় টানা তিন দিন পাক-বাহিনীর সঙ্গে অবিরাম যুদ্ধ চালিয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধারা। এরই মধ্যে পাকসেনাদের খাদ্য ও গোলাবারুদ ফুরিয়ে যায়। অবশেষে ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পশ্চিম আকাশে সূর্য ঢলে পড়লে আত্মসমর্পণ করে তারা। মুক্ত হয় মাদারীপুর। এই যুদ্ধে নিহত হয় জেলার সর্ব কনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ বাচ্চু।
মাদারীপুরে আলমগীর হোসাইন, স্টুয়ার্ট মুজিব ও খলিলুর রহমান ভারতের অম্বিকাপুর থেকে প্রশিক্ষণ শেষে পুলিশ, কৃষক, ছাত্রসহ সর্বস্তরের জনতা এক হয়ে মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলে।
অন্যদিকে, পাক হানাদারবাহিনী এদেশীয় দোসরদের সহায়তায় গোটা এলাকায় নির্যাতন চালাতে থাকে। এক সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পাক-বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। মুক্ত হতে থাকে নতুন নতুন এলাকা।
নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা জানান, রাজাকার, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার দীপ্ত অঙ্গিকারের মধ্য দিয়ে গতকাল শুক্রবার নেত্রকোনা পাক হানাদার মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে।
সকাল সাড়ে ৯টায় কালেক্টরেট প্রাঙ্গণে ‘প্রজন্ম শপথ’ নামক স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ড, জেলা আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, মধুমাছি কচি-কাঁচার মেলা, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সমবায় সমাজ কল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শহীদ মুক্তিযুদ্ধাদের গভীর ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে সাতপাই স্মৃতি সৌধেও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় পাবলিক হল প্রাঙ্গণ থেকে জেলা শহরে বর্ণাঢ্য আনন্দ র‌্যালী বের হয়। পরে স্থানীয় পাবলিক হলে জেলা প্রশাসক ড. মোঃ মুশফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে মুক্ত দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এমপি।
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, আজ ১০ ডিসেম্বর। এ দিনটি সুন্দরগঞ্জ উপজেলাবাসির জন্য একটি স্মরণীয় দিন। কারণ এদিনে পাক-হানাদার বাহিনীর কবল থেকে সুন্দরগঞ্জ এলাকা মুক্ত হয়। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর আজকের দিনে সুন্দরগঞ্জ শত্রু মুক্ত হলে “বিজয় উল্ল্যাস” আর ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়েছিল সুন্দরগঞ্জের আকাশ বাতাস। স্বাধীনতাকামী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কুলিয়ে উঠতে না পেরে ৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর রাতে পাক হানাদারবাহিনী পালিয়ে যায়। পরের দিন ১০ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে স্বাধীনতাকামী মানুষ একত্রিত হয়ে সুন্দরগঞ্জে পাকহানাদার বাহিনীর খোঁজে তল্লাশি চালায়। এ তল্লাশিতে পাকবাহিনীর কোন সদস্যকে না পেয়ে সেদিন মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মুক্তিকামী জনগণ বিজয় উল্লাস করে। সেই থেকেই ১০ ডিসেম্বরকে সুন্দরগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস ঘোষণা করা হয়। যার ধারাবাহিকতা আজও অব্যাহত রয়েছে।
ফুলপুর (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, যথাযোগ্য মর্যাদায় ৯ ডিসেম্বর ফুলপুরমুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ফুলপুর উপজেলা কমান্ডের উদ্যোগে আনন্দ র‌্যালি ও আলোচনা সভা হয়েছে। বিকেলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ের সামনে থেকে র‌্যালিটি শুরু হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে গোলচত্বর মোড়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ফুলপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার এমএ হাকিম সরকার, আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ছালাম আকন্দ, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল বাতেন সরকার প্রমূখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ