Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলা ও সহযোগিতার প্রমাণ মিলেছে-ড. ফরাসউদ্দিন আহমেদ

রিজার্ভ চুরি

| প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এ ঘটনায় ব্যাংকের পাঁচ কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলা ও অসতর্কতার প্রমাণ পেয়েছে। গতকাল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮১ মিলিয়ন ডলার নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ থেকে চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ সরকার। গত মে মাসে কমিটি তাদের প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নিকট হস্তান্তর করে। প্রতিবেদন প্রকাশে বেশ কয়েক দফা সময়ও ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটি অপ্রকাশিতই রয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ফিলিপাইন সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ রিজাল ব্যাংকের মাধ্যমে এ দেশটিতে চলে যায়। তদন্ত প্রতিবেদন কোনো অবস্থাতেই দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অবশ্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রতিবেদন দেয়ার কথা বলছেন।
এমন পরিস্থিতেই তদন্ত কমিটির প্রধান ফরাসউদ্দিন রিজার্ভ চুরি নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচ কর্মকর্তার বিষয়ে বলেন, তারা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছে, অসতর্ক ছিল এবং পরোক্ষ সহযোগী ছিল। তিনি বলেন, তবে কমিটি সিদ্ধান্তে উপণীত হয়েছে বাইরের কারো দ্বারাই রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটেছে। যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাদের কারো নামই বলেননি তিনি।
রিজার্ভ চুরিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচ কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলা থাকলেও তারা যে রিজার্ভ চুরিতে জড়িত নয় সেটি স্পষ্ট হওয়ার জন্য তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা উচিত বলে ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করেন ফরাসউদ্দিন। তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান আরো সুদৃঢ় হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যেহেতু তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি সে জন্য ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাউকে আটক বা কারা এটি করেছে, এ বিষয়ে কোনো কিছুই বলা হয়নি।
সুইফট লেনদেন ব্যবস্থার মাধ্যমে হ্যাকাররা নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের এক বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তবে অনেকগুলো লেনদেন স্থগিত করে দেয়া সম্ভব হলেও ৮১ মিলিয়ন ডলার অর্থ ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের একটি শাখায় সরিয়ে নিতে সমর্থ হয় হ্যাকাররা। এ সব অর্থের বড় অংশই জুয়ার আসরে চলে যায় এবং বাকি অর্থ পাচারের বিষয়টি অজানাই থেকে গেছে। চুরি হয়ে যাওয়া অর্থের ১৫ মিলিয়ন ডলার এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
ফরাসউদ্দিন বলেন, চুরি হয়ে যাওয়া অর্থ উত্তোলন ও জুয়ার আসরে চলে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার জন্য রিজাল ব্যাংক দায়ী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অসাধু চক্রের সহায়তায়ই রিজার্ভ চুরি
      সিআইডি তদন্ত দলের প্রধান
স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি অসাধু চক্রের সহায়তায় রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটে। ওই অসাধু চক্রের সঙ্গে দেশি-বিদেশি চক্র মিলে ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলা হয় বলে সিআইডির তদন্ত দলের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ আলম জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার পুলিশের এ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় এ বিষয়টি প্রকাশিত হয়। তিনি বলেন, প্রথম থেকেই আমাদের সন্দেহ ছিল এদেশের ব্যাংক থেকেও হ্যাকারদের সহায়তা করা হয়েছে। এই অসাধু চক্রটি প্রথমে গোপন তথ্য দিয়ে হ্যাকারদের সহায়তা করে।  হ্যাকাররা ব্যাংকের নিরাপত্তার তথ্য জেনে যায়। পরে তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলে। এরপরই হ্যাক করে। ব্যাংকের লোকজনের সঙ্গে বিদেশি চক্রও এতে জড়িত। ঘটনার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলেই বিস্তারিত জানানো হবে।
গত ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর থেকেই সিআইডির একটি বিশেষজ্ঞ দল তদন্তে নামে। ব্যাংকের ভেতর অনেক ইলেকট্রনিক প্রমাণ খতিয়ে দেখে। সিআইডির একটি সূত্র বলছে, এর সঙ্গে অনেকেই জড়িত। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিলিং রুমের সার্ভার ও কম্পিউটার থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল সব তথ্য। দুটি বিভাগের প্রধানসহ আরো কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসব কাজ করে। এদের মধ্যে আইটি বিভাগের লোকজনের সংখ্যাই বেশি। হ্যাকাররা সরাসরি তাদের সহযোগিতা নিয়ে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে। সুবিধাজনক সময় টাকাগুলো তুলে নেয়। সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে জালিয়াতির আশ্রয় নেয় হ্যাকাররা।
২৯ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনের পত্রিকা ইনকোয়েরারের প্রতিবেদনে রির্জাভ চুরির ঘটনার প্রথম তথ্য প্রকাশ পায়। ওই সময় বলা হয়, ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল হ্যাকাররা। এ প্রচেষ্টায় দুই ধাপে প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার লোপাট করলেও ৮৭০ মিলিয়ন ডলার পাচারে ব্যর্থ হয় তারা। এরপরই মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডিকে। অবশ্য ইতোমধ্যেই চুরি যাওয়া কিছু টাকা ফেরত এনেছে সরকার। বাকি টাকা উদ্ধারে ফিলিপাইন সরকারের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক অব্যাহত রেখেছেন ব্যাংকের কর্মকর্তা থেকে সিআইডির তদন্ত দল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজার্ভ চুরি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ