পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পাঁচদিনব্যাপী আয়োজনের শেষদিন বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে সারা দেশে শেষ হয়েছে এ বছরের দুর্গোৎসব। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দশমীর পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সারা দেশে ৩২ হাজারের বেশি পূজামÐপে ফুল ও আরতি দিয়ে পূজা দেয়া হয় দেবী দুর্গাকে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দশমীর পূজা পরিচালনা করেন তিনজন পুরোহিত। এর মধ্যে প্রধান পুরোহিত হিসেবে ছিলেন প্রনাদ চক্রবর্তী। আর তার সঙ্গে ছিলেন প্রণব চক্রবর্তী ও বরুণ চক্রবর্তী। এ সময় মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করা হয়।
পুরোহিতদের পূজার পর ফুল ও বেলপাতা দিয়ে অঞ্জলি দেন আগত ভক্ত ও দর্শনার্থীরা। এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন পুরোহিত, পূজা উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব প্রণব চক্রবর্তী। অঞ্জলির পর তর্পণ দেয়া হয়। পরে সকাল সোয়া ১১টা নাগাদ ঘট বিসর্জনের পর সিঁদুর খেলা শুরু হয়।
এ বিষয়ে পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী বলেন, গতকাল বিজয়া দশমীর মাধ্যমে পাঁচদিনব্যাপী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হয়েছে। সকালে দশমী পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জন দেয়া হয়। এই দর্পণ আঘাত প্রতিরোধক। সমাজে যত অশুভ, অশিষ্ট আর বৈষম্য আছে তার বিরুদ্ধে দেবীর সম্মিলিত শুভশক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে এই দর্পণ বিসর্জন দেয়া হয়। দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে দেবী শুভ সময়, সমাজ ও সংসার সৌভাগ্য ও ঐশ্বর্যময় হয়ে ওঠার জন্য আশ্বস্ত করেন। গতকাল দেবী বিসর্জনের পর শিবের সঙ্গে অবস্থানের জন্য কৈলাশ ফিরে যান দেবী দুর্গা।
বিজয়া দশমীর সকালে ঢাকেশ্বরী প্রাঙ্গণের মÐপ ছাড়াও অনেককে আদি মন্দিরেও পূজা দিতে দেখা যায়। এখানে ফুল ও প্রসাদ দিয়ে পূজা দেয়ার পর মোমবাতি ও ধূপ জ্বালিয়ে অর্ঘ্য প্রদানের মাধ্যমে অঞ্জলি দেন অনেকে।
গতকাল বিকেলে প্রতিমা বিসর্জন দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর সম্পাদক সুবল ঘোষ। প্রতিমা বিসর্জন শেষ করার জন্য দেশের সকল পূজা কমিটির প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ঢাকেশ্বরীর দেবী বিসর্জন দেয়া হয় বরাবরের মতোই পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে। বিসর্জনের পরে হয় অপরাজিতা পূজা। মিরপুর থেকে সংজ্ঞা রাহা এসেছেন ছোটভাই অর্জুনকে নিয়ে। অন্যান্যবার গ্রামে গেলেও এবার ঢাকায় পূজা উদযাপন করছেন। দুর্গোৎসবের শেষদিন গতকাল ঢাকেশ্বরীতে যান তারা। কেমন লাগলো জানতে চাইলে অর্জুন বলে, ‘সবগুলো মÐপের চেয়ে এই মন্দিরের ঠাকুর সবচেয়ে সুন্দর। তাছাড়া এখানে পূজার মঞ্চ উঁচু হওয়ায় ঠাকুরকে ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে।
দুপুর দেড়টায় সিঁদুরখেলা শেষে পলাশী থেকে একটি শোভাযাত্রা যায় ভাসানের উদ্দেশ্যে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রতিমাটি স্থায়ী হওয়ায় এটি ভাসান দেয়া হয় না। আগেই ঢাকেশ্বরী প্রাঙ্গনের পুকুরে ঘট এবং দর্পন বিসর্জন দেয়া হয়। স্বামীবাগ থেকে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সিঁদুর খেলতে গিয়েছিলেন শিখা ভট্টাচার্য। প্রতিবছরই বন্ধুদের সঙ্গে মন্দিরে যান তিনি। তিনি বলেন, স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনায় তারা হিন্দু বিবাহিত নারীরা সিঁদুর পরেন। সারাবছর বিজয়া দশমীর জন্য অপেক্ষায় থাকেন। এদিন দেবীর পায়ে সিঁদুর দিয়ে নিজেদের সিঁথিতে বা গালে সিঁদুর ছোঁয়ান তারা। বিবাহিত নারীরা সিঁথিতে সিঁদুর দিলেও অবিবাহিত মেয়েরা গালে দেন। এভাবেই বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতা পালন করেন প্রতিবছর।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, পতেঙ্গা সৈকতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উপলক্ষে গতকাল বুধবার পতেঙ্গা সৈকতে প্রচÐ ভিড় জমে। মহানগরীর পূজা মন্ডপ থেকে দুপুরের পর সৈকতে নিয়ে যাওয়া হয় প্রতিমা। তবে সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় শুরু হয় বিসর্জন। পূজারি এবং ভক্তরা ট্রাকে করে বাজনা বাজিয়ে নেচে গেয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিমা নিয়ে যান সৈকতে। দুর্গাকে বিদায় জানাতে নারী-পুরুষ-শিশুসহ এতে সব ধরনের মানুষের সমাবেশ ঘটে।
পতেঙ্গা সৈকতের পাশাপাশি মহানগরীর অভয়মিত্রের ঘাট, সদরঘাট, কাট্টলীর রাসমণি ঘাট, কালুরঘাটসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সাগর ও কর্ণফুলী নদীতে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। এবার মহানগরীতে ২৮৩ এবং জেলায় ১ হাজার ৫৫৭সহ মোট ১ হাজার ৮৪০টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গাপূজাকে ঘিরে অঘটনের আশঙ্কা থাকলেও শেষপর্যন্ত শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ উৎসব সম্পন্ন হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।