Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাগত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০২২, ৬:৩৩ পিএম

দীর্ঘ ১৮দিন পর বাংলাদেশ ফিরে পাচ্ছে প্রাণপ্রিয় অভিভাবক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে । মঙ্গলবার রাত করে যুক্তরাজ্য আর যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে দেশে ফিরছেন বিশ্বনেত্রী । দেশের মানুষ তাদের প্রিয়নেত্রীকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ।

এক নিবন্ধে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ আদম তমিজী হক এসব লিখেন। তার নিবন্ধটি তুলে ধরা হল :
যুক্তরাজ্য-যুক্তরাজ্য ঘুরে ফের ঢাকা। বেশ লম্বা সফর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ১৮ দিনের এই সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববাসীর কাছে বেশ কিছু আহ্বান জানান দিয়ে এসেছেন। তার মূল মর্মবাণী হলো বিশ্বকে হতে হবে হানাহানিমুক্ত, বঞ্চনাহীন, বিশ্বকে হতে হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত। সবমিলিয়ে একটি মানবিক বিশ্ব ও সমান্তরালে মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আহ্বানই ছিল তার কণ্ঠজুড়ে। শেখ হাসিনার আহ্বান ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়কে এক সূত্রে গাঁথা যায়।


এদিকে পুরো সফরজুড়ে বিশ্ববাসীর কাছে অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ ও স্যাংশন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘যুদ্ধ বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞার মতো বৈরীপন্থা কখনও কোনো জাতির মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না’ উল্লেখ করে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন তিনি।


বাংলাদেশ যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই। কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে বিশ্বাসী বাংলাদেশ সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু তনয়া। তাই বিশ্ব দরবারে তার অবস্থান ছিল ‘আমরা ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের অবসান চাই।’


গত আড়ই বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ব যখন করোনাভাইরাস মহামারির ধকল সামলে উঠতে শুরু করেছে, তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত বিশ্বকে নতুন করে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, জ্বালানি এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে নারী, শিশুসহ গোটা মানবজাতিকেই শাস্তি দেওয়া হয়। এর প্রভাব কেবল একটি দেশেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং সকল মানুষের জীবন-জীবিকা মহাসংকটে পতিত হয়।


বিশ্ব বিবেকের কাছে তাই শেখ হাসিনার উদাত্ত আহ্বান অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ, স্যাংশন বন্ধ করুন। শিশুকে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা দিন। শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন। সেই সঙ্গে তিনি উচ্চারণ করেছেন পারস্পরিক আলাপ-আলোচনাই সংকট ও বিরোধ নিষ্পত্তির সর্বোত্তম উপায়।


প্রসঙ্গত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি আমদানিকারক বাংলাদেশ মারাত্মক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের শতকরা ৬৫ ভাগের বেশি আসে গ্যাস থেকে। কিন্তু যুদ্ধের কারণে তেল ও তরলীকৃত গ্যাসের দাম বেড়েছে দশগুণের বেশি। বন্ধ হয়ে গেছে তরলীকৃত জ্বালানি (এলএনজি। এর ফলে বাংলাদেশর বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় দেশে চলছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। জ্বালানির দাম বাড়ায় অবধারিতভাবে বেড়েছে বাংলাদেশের পরিবহন খরচ ও প্রায় সকল নিত্যপণ্যের দাম।


ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম হলেও দেশের বার্ষিক ৮০ লাখ মেট্রিকটন গমের চাহিদার প্রায় ৭০ লাখ মেট্রিকটনই আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়, যা মূলত মূলত রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আসে। কিন্তু গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর দেশগুলো থেকে গম আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে গম ও আটার সংকট শুরু হয়। এরইমধ্যে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় গম কেনা শুরু হয়েছে। অচিরেই দেশে পৌঁছাবে গমের বিশাল চালান।


বৈশ্বিক সমস্যার পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিয়ানমারে নির্যাতনে শিকার হয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেবার পাঁচ বছর পার হলেও প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো যায়নি। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ মেয়াদের উপস্থিতি অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এমনকি এ পরিস্থিতি উগ্রবাদকেও ইন্ধন দিতে পারে।


রোহিঙ্গা সংকট প্রলম্বিত হতে থাকলে উপমহাদেশসহ বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশ মনবিকতায় বিশ্বাসী বলেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের বুকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্য-সংহতির বাণী উচ্চারণ করেছেন। এ যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠে যেন বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনা ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়েছে।


বঙ্গবন্ধু ছিলেন শান্তি ও ন্যায়ের প্রতীক যিনি সারা বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বপ্ন দেখেছেন- বিশ্ব শান্তিই ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের অন্যতম মূলনীতি। স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামরত বিশ্বের মানুষের পাশে দাঁড়াতে তিনি মোটেই কুণ্ঠিত ছিলেন না, সে সংগ্রাম হোক আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা কিংবাএশিয়ার যে কোনো প্রান্ত। অস্ত্র দিয়ে স্বাধীনতার সংগ্রাম বন্ধ করা যায় না এ কথাতিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে শান্তির প্রতি জোরদেওয়া, যে কোনো ধরনের সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার সর্বোত্তম উপায় হিসেবে সংলাপ এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খোঁজা- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ভারসাম্যপূর্ণ নীতি। এই নীতির মাধ্যমেই সংঘাত এড়িয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে মানবিক বিশ্ব, প্রতিষ্ঠিত হতে পারে মানবিক বাংলাদেশ।


গত ১৫ সেপ্টেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন । রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে ১৯ সেপ্টেম্বর যোগ দেন প্রয়াত রাণীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় । ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে আয়োজিত রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোসহ অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ।


যুক্তরাজ্য সফর শেষে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান শেখ হাসিনা । নিউ ইয়র্কে যোগ দেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে । ২৩ সেপ্টেম্বর ভাষণ দেন জাতিসংঘের অনুষ্ঠানে । এছাড়া তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন।


জাতিসংঘে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ নানাকারণে আলোচিত হয়েছে । বরাবরের মতো বাংলায় দেয়া ভাষণে শেখ হাসিনা করোনা মহামারী আর ইউক্রেইন আর রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার বিষয়ে আলোকপাত করেন । পারমানবিক অস্ত্র বিস্তাররোধসহ সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের তাগিদে শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ছিল বিশ্বনেতাদের সামনে সোচ্চার । তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহবান জানাতেও ভোলেননি ।


বহুদিন ধরেই ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি বিদেশীদের কাছে অপপ্রচার চালাচ্ছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের ধোঁয়া তুলে । ওয়াশিংটনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে মতবিনিময়কালে এই বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন । প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা , দেশের মাটিতে বর্তমান সরকারের প্রকৃত উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি শাসনামলের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও বর্বরতার কথা তুলে ধরতে হবে ।


এটা শুধু প্রবাসীদের দায়িত্ব না । দায়িত্ব সকল সচেতন বাংলাদেশি নাগরিকের । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি নিশ্চিত থাকুন । আপনার অভিভাবকত্বে এই দেশে কোন অপশক্তিকে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে দেয়া হবে না । ব্যহত করতে দেয়া হবে না এই দেশের উন্নয়নের জোয়ারের ধারাবাহিকতাকে । আমাদের প্রয়োজন শুধু আলোকবর্তিকা হয়ে আপনার দিক-নির্দেশনা । আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ