পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর ‘স্থগিত’ করা হয়েছে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর চারদিনের সফরে দিল্লী যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। গতকাল বৃহস্পতিবার কূটনৈতিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। দুই দেশ আলোচনা করে এই সফরের জন্য নতুন তারিখ নির্ধারণ করবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সফরে শেষ মুহূর্তে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন তারিখ শিগগির চূড়ান্ত করা হবে। তবে হঠাৎ করে এই সফর স্থগিতের কারণ সম্পর্কে কিছু জানাননি তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রটি জানায়, ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রস্তাবিত সফরটি কমপক্ষে কয়েক সপ্তাহের জন্য পিছিয়ে গেল। সফরের নতুন সময়সূচি দুই পক্ষ খুব শিগগিরই প্রচার করবে। তবে এটি আগামী বছরের শুরুতে হবে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো আভাষ দিয়েছে। এদিকে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর এক মাসের বেশি সময়ের জন্যে স্থগিত হয়েছে।
তবে এরই মধ্যে আজ শুক্রবার ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর। ঢাকায় অভিবাসন সংক্রান্ত ‘গ্লোবাল ফোরাম ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ (জিএফএমডি) সম্মেলনে যোগদানের লক্ষ্যে এম জে আকবর ঢাকায় এলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গেও তার বৈঠকের কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে এই সফর বাতিলের কারণ হিসেবে দুটি কারণের কথা জানা গেছে। একটি হলো, এই সফরে তিস্তা চুক্তি না হওয়ার সম্ভাবনাই কারণে প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্যটি হলো, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চলতি মাসে চীন সফরে যাচ্ছেন। এ কারণে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকের সময়সূচি নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এরই মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানে নতুন দিক উন্মোচন করবে। গত শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হয় শেখ হাসিনাকে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এ বিষয়ে প্রস্তুত। এখন বিষয়টি ভারতের ওপর নির্ভর করছে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের জানুয়ারিতে সর্বশেষ দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারত গিয়েছিলেন। ওই সময়ে দুই দেশের মধ্যে ৫০ দফার যে যৌথ ইশতেহার ঘোষণা হয় তাতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন যুগের সূচনা করে। বৈরী সম্পর্কেও পরিবর্তে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নিবিড় বন্ধুত্বের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। তারপর ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফর করেন। এ সফরে ভারতের পক্ষ থেকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির অঙ্গীকার করা হয়। তবে এখনও পর্যন্ত তিস্তা চুক্তি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরেও তিস্তা চুক্তি অনিশ্চিত রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানায়, তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে অবশ্যই অগ্রগতি হবে এবং আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে এই সফর হতে পারে।
সর্বশেষ গত ১৬ অক্টোবর ভারতের গোয়ায় নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ২০১৫ সালের ৬ ও ৭ জুন বাংলাদেশ সফর করে যান নরেন্দ্র মোদি। এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর এই সফর অনুষ্ঠানের জন্য আলোচনা চলছিল। সফরের প্রস্তুতি হিসেবে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ৮ নভেম্বর দিল্লী গিয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর ও পানি সম্পদ সচিব শশী শেখরের সাথে আলোচনা করে তিস্তার পানি বণ্টনের ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা পাননি তিনি। তবে অববাহিকাভিত্তিক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ভারত তার আগ্রহের কথা জানিয়েছিল। একটি নির্দিষ্ট ইস্যুতে আটকে না থেকে অন্যান্য বিষয় নিয়ে অগ্রসর হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পিত দিল্লী সফর নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানায় ভারত।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এখনো বাংলাদেশের অগ্রাধিকার। এ ব্যাপারে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ইতিবাচক থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সম্মতি পাওয়া যাচ্ছে না। সম্প্রতি ভারতে ৫০০ ও এক হাজার রুপির পুরোনো নোট বাতিল ঘোষণা ও পশ্চিমবঙ্গে সেনাবাহিনীর তৎপরতার তীব্র প্রতিবাদ জানান মমতা। এ কারণে কেন্দ্রের সাথে মমতার দূরত্ব আরো বেড়েছে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী সফরকালে তিস্তা চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা আরো ক্ষীণ হয়ে আসে। তবে গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণে ভারতের কাছ থেকে সহায়তার ঘোষণা আশা করছে বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রীর সফরে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারতের ব্যবহারের জন্য বিধিবিধান (এসওপি) সই, উপকূলীয় ও নৌ প্রটোকল রুটে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল, পায়রা বন্দরে টার্মিনাল নির্মাণে ভারতীয় কোম্পানির সাথে সইয়ের জন্য চুক্তিগুলো চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে। গত বুধবার দুই দেশের নৌ পরিবহন সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এসব চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়। এছাড়া আরো কয়েকটি চুক্তি প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী সফরকালে সই হওয়ার কথা রয়েছে।
ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে তিস্তা চুক্তি দীর্ঘদিন ঝুলে রয়েছে। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরকালেই তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তির কারণে শেষ মুহূর্তে এই চুক্তি সইয়ে অপারগতা প্রকাশ করে ভারত। এর প্রতিক্রিয়ায় চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারে সম্মতিপত্র সইয়ে বাংলাদেশ বিরত থাকে।
অবশ্য গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকালে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারে দিল্লীর সাথে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে উপকূলীয় জাহাজ চলাচলসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চুক্তি ও সিদ্ধান্ত হয়। নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ভারতের কোনো প্রধানমন্ত্রীর এ যাবতকালের ‘সবচেয়ে সফল’ সফর হিসাবে বিবেচনা করে দিল্লী। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরকেও সফল করতে চায় ঢাকা।
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তিস্তার মত স্পর্শকাতর কোনো চুক্তি সইয়ে এর আগে আগ্রহ দেখাননি মমতা। সর্বশেষ নির্বাচনে তার দল তৃণমূল কংগ্রেস দ্বিতীয়বারের মত পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসায় এখন অন্তত কেন্দ্র ও রাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের অনিষ্পন্ন ইস্যু তিস্তা চুক্তি সইয়ের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না বলে আশা করেছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু তারপরও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে মমতাকে রাজী করাতে কম চেষ্টা করেনি বাংলাদেশ। প্রথমবার ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এবং দ্বিতীয়বার নরেন্দ্র মোদির সফরসঙ্গি হিসেবে দুইবার ঢাকা এসেছেন মমতা। কিন্তু কোনোবারই তিস্তা চুক্তি নিয়ে তার কাছ থেকে নিশ্চয়তা আদায় করা যায়নি।
প্রধানমন্ত্রীর সফরে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতার নতুন একটি রূপরেখা সইয়ের ব্যাপারে ভারতের পক্ষ থেকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনার জন্য গত ৩০ নভেম্বর ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসেন। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় এ দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সামর্থ্য বাড়াতে নতুন নতুন উদ্যোগ নেয়ার প্রস্তাব দেন মনোহর পারিকর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।