পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আবু তালিবের উপ-জীবিকা ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য। কুরাইশদের রেওয়াজ ছিল বছরে একবার, তারা ব্যবসার উদ্দেশ্যে শামদেশে যেতেন। হুযুরে পাক (সা.)-এর ১২ বছর বয়:ক্রমকালে আবু তালিব ব্যবসার উপলক্ষে শামদেশে যাওয়ার মনস্থ করলেন। পথের কষ্ট ও নানা অসুবিধার কারণে বালক ভাতিজাকে তিনি সাথে নিয়ে যেতে ইচ্ছুক ছিলেন না; কিন্তু রাসূলে পাক (সা.) আবু তালিবকে খুবই ভালোবাসতেন বলে যখন তিনি রওনা হলেন, তখন তাকে জড়িয়ে ধরলেন। আবু তালিব ভাতিজার মনে কষ্ট না দিয়ে তাকে সাথে নিয়ে রওনা হলেন। সাধারণ ঐতিহাসিকদের মতে বুহাইরা পাদ্রীয় সাথে সাক্ষাতের ঘটানাটি এ সফরেই ঘটেছিল। ঘটনার বিস্তারিত বিবরণে চরিতকারগণ লিখেছেন, আবু তালিব যখন বশরায় পৌঁছলেন, তখন বুহাইরার আস্তানায় গেলেন। তিনি মুহাম্মদ (সা.)-কে দেখা মাত্র বললেন, ইনিই সাইয়্যিদুল মুরসালীন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি তা কীভাবে জানলেন? তিনি বললেন, তোমাদের পাহাড় থেকে অবতরণকালে পাথর ও বৃক্ষক‚ল-এর সম্মানে মস্তকনত করেছিল। এই ঘটনাটির বিবরণ নানাভাবে পাওয়া যায়। এ সম্পর্কে খ্রিষ্টানদের ভ‚মিকা খুবই ন্যাক্করজনক। স্যার উইলিয়াম মেয়র, ড্রেপার ও মারগুলিথ প্রমুখ পÐিতগণ ভাবেন যে, এটা ছিল খ্রিষ্টানদের শ্রেষ্ঠত্বের নমুনা। তাদের দাবি যে, রাসূলে পাক (সা.) ধর্মীয়তত্ত¡ ও গুপ্ত রহস্য এই পাদ্রী থেকেই লাভ করেছিলেন। তিনি তাকে যে শিক্ষা দিয়েছেন, পরবর্তীকালে তা-ই ইসলামের ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছিল ও তার উত্তম আদর্শগুলো এই তত্ত¡ শিক্ষারই ফল। ড্রেপার সাহেব বলেন, বুহাইরা তাকে আকায়েদ শাস্ত্র শিখিয়ে ছিলেন। তিনি তাতে অভিভ‚ত হয়েছিলেন। তাছাড়া উইলিয়াম মেয়র আরো একধাপ এগিয়ে বলেন, মুহাম্মদ (সা.)-এর মূর্তিপূজার বিতৃষ্ণা তার এই শাম সফরেরই প্রত্যক্ষ ফল; কিন্তু খ্রিষ্টানদের এসব ভ্রান্ত ও মিথ্যা বর্ণনার অনুক‚লে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের কোথাও কোনো ইঙ্গিতে নেই; সুতরাং এসব বিভ্রান্তিকর বর্ণনার অসারতা প্রতিপন্ন করা একান্ত প্রয়োজন। এদের বর্ণনায় কোথাও এরূপ উল্লেখ নেই যে, বুহাইরা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে কোনো কিছু শিক্ষা দিয়েছিলেন। এটাও অবোধ্য যে, ১০ থেকে ১২ বছরের এক কিশোরকে এত অল্প সময়ে কীভাবে ধর্মতত্ত¡ শিক্ষা দিলেন এবং গায়ে পড়ে এ কষ্ট স্বীকারের প্রয়োজনই বা কি ছিল? সারকথা হলো, এসব বর্ণনার কোনো মৌলিকত্ব নেই। এ জাতীয় বর্ণনাগুলো প্রায় সবই মুরসাল বর্ণনা। প্রথম বর্ণনাকারী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না, এমন কি মূল ঘটনা প্রত্যক্ষকারীর নামও উল্লেখ নেই। মূলত তিরমিজি শরিফের একটি দুর্বল বর্ণনার ভিত্তিতেই খ্রিষ্টান সমাজ একটি মিথ্যাকে দ্বার করানোর চেষ্টা করেছে। বর্ণনাটিকে এবার যাচাই করা যাকÑ
তিরমিজি বলেছেন, হাদিসটি হাসান এবং গরিবÑ এটির অন্য কোনো সূত্র আমি পাইনি। ছহিহ্ হাদিস থেকে হাসান হাদিসের মান অনেক নিচে। হাদিসটি গরিব হলে এর মান আরো নিচে নেমে যায়। এই দৃষ্টিতে তিরমিজির হাদিসটির মূল্য মান সহজেই অনুমেয়।
তিরমিজির বর্ণনার একজন রাবী হলেন, আবদুর রহমান বিন গাজওয়ান। কেউ কেউ একে বিশ্বস্ত বললেও অধিকাংশ হাদিস বিশারদ তার বর্ণনা ধর্তব্য নয় বলেছেন। আল্লামা সাহাবী মীযানূল এ’তেদাল কিতাবে লিখেছেন, আবদুর রহমান পরিত্যাজ্য হাদিস বর্ণনা করতেন। তম্মধ্যে অধিক পরিত্যাজ্য হলো, বুহাইরা পাদ্রীর ঘটনা।
হাকেম মসতাদরেকে লিখেছেন যে, এই হাদিসটি ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী আছে। আল্লামা যাহাবী হাকেমের বর্ণনাকে উল্লেখ করে তালখীছুল মুসতাদরেক কিতাবে বলেন, আমি এই হাদিসের কিছু কিছু ঘটনাকে মিথ্যা ও কল্পনা মনে করি।
তিরমিজির বর্ণনায় আছে, হজরত বেলাল (রা.) ও হজরত আবু বকর (রা.) ও সে সফরে রাসূলে করীম (সা.)-এর সঙ্গী ছিলেন। অথচ তখন বেলালের কোনো নাম-নিশানাও ছিল না। হজরত আবু বকর (রা.)-ও ছিলেন ছোট বালক। তারা কীভাবে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সফর সঙ্গী ছিলেন?
হাদিসটির সর্বশেষ রাবী হলেন, আবু মুসা আশআরী (রা.)। মূলত: তিনি ওপরের রাবীদের কথা উল্লেখ করেননি। তিরমিজি ছাড়া তাবাকাতে ইবনে সা’দে যে সনদ বর্ণিত আছে তা হয় মুরসাল, না হয় মুদাল। মুরসালের বর্ণনায় একজন তাবেয়ী ঘটনার সাথে জড়িত ছিল না। সে কোনো সাহাবীর নাম উল্লেখ করেনি আর মুদালে রাবী নিজের ওপরের দু’জনের নাম উল্লেখ করেনি, যাদের একজন সাহাবী ও অপরজন তাবেয়ী। তাই তাবাকাতে ইবনে সা’দের বর্ণনাও পরিত্যাজ্য।
হাফেজ ইবনে হাজার-এ হাদিসটিকে প্রথমে ছহীহ্ বলেছেন; কিন্তু হাদিসের রাবীদের মাঝে হজরত আবু বকর (রা.) ও হজরত বেলাল (রা.)-এর নাম থাকায় স্বীকার করেন যে ভুলবশত : এদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ইবনে হাজারের-এ দাবিও ভ্রান্ত যে, হাদিসটির সনদ গ্রহণযোগ্য। কেননা, তিনি নিজেই তাহযীবুত তাহযীব গ্রন্থে লিখেছেন, আবদুর রহমান বিন গাজওয়ানের ভুল হত। সে মামালিকের বর্ণনা প্রকাশ করত। মুহাদ্দিসগণ যাকে মিথ্যা তৈরিকারী বলে মনে করতেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।