Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বালাগাল উলা বিকামালিহি কাসাফাদ্দোজা বিজামালিহি

এ. কে. এম ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাসূলে কারীম (সা.)-এর ছয় বছর বয়ঃক্রমকালে তাঁর মা আমেনা তাঁকে নিয়ে মদীনায় যান এবং তথায় রাসূলে কারীম (সা.)-এর পিতামহ আবদুল মুত্তালিবের মাতামহের বংশ নাজ্জার গোত্রে অবস্থান করেন। এই সফরে উম্মে আয়মানও তাদের সাথে ছিলেন। ঐতিহাসিকদের মতে, আমেনা নানাবাড়ির সম্পর্ক ধরেই মদীনা গিয়েছিলেন, যদিও তারা খুব দূর সম্পর্কের আত্মীয় ছিলেন। এক্ষেত্রে কোনো কোনো ঐতিহাসিক লিখেছেন, আমেনা গিয়েছিলেন প্রাণপ্রিয় স্বামীর কবর জিয়ারত করতে। এক মাস যাবত তিনি মদীনায় অবস্থান করেন। ফেরার পথে আবওয়া স্থানে তিনি মারা যান এবং সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। অতঃপর উম্মে আয়মান শিশু মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে মক্কায় ফিরে আসেন। আবওয়া একটি গ্রামের নাম; যা যুহফা থেকে তেইশ মাইল দূরে। মদীনা থাকাকালীন বহু ঘটনাই রাসূলে কারীম (সা.)-এর স্মরণ ছিল। হিজরতের পর মদীনায় অবস্থানকালে একবার তিনি বনু আদীর একটি গোত্রে গমন করে বললেন, এই গৃহেই আমার মাতা কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন এবং এই ক‚পেই আমি সাঁতার কাটা শিখেছিলাম এবং এই প্রান্তরেই আমি আনীসা নামী এক বালিকার সাথে ঘোরাফেরা করতাম।

আবদুল মুত্তালিবের তত্ত¡াবধানে : মা আমেনার মৃত্যুর পর দাদা আবদুল মুত্তালিব শিশু মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতিপালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। রাসূলে কারীম (সা.)-এর আট বছর বয়ঃক্রমকালে বিরাশি বছর বয়স্ক দাদা আবদুল মুত্তালিব মৃত্যুবরণ করেন। আবদুল মুত্তালিবের লাশ বহন করে নিয়ে যাওয়ার সময় শিশু নাতির চোখ থেকে অশ্রæ ঝরছিল। মৃত্যুকালে আবদুল মুত্তালিব প্রিয় নাতির দেখাশুনার ভার পুত্র আবু তালিবের ওপর দিয়ে গেলেন। আবু তালিব অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে তা পালন করেছিলেন। আবদুল মুত্তালিবের মৃত্যুতে মক্কার নেতৃত্বে এক বিরাট পরিবর্তন আসে। এতে বনু হাশেমের মর্যাদার বেশ কিছু হানি ঘটে এবং বনু উমাইয়া শাসন ক্ষমতার অধিকারী হয়। আবদুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর হরব নেতা নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন বনু উমাইয়ার সার্থক সন্তান। তার আমলে বনু হাশেম গোত্রের আব্বাসের ওপর শুধুমাত্র হাজিদের পানি পান করানোর দায়িত্ব ছিল। আব্বাস আবদুল মুত্তালিবের কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন।

আবু তালিবের তত্ত¡াবধানে : আবদুল মুত্তালিবের বিভিন্ন স্ত্রীর গর্ভে বারজন ছেলে জন্মগ্রহণ করেছিল। আবদুল্লাহ ও আবু তালিব একই মাতার সন্তান ছিলেন। এ জন্যই আবদুল মুত্তালিব নাতি মুহাম্মদ (সা.)-কে আবু তালিবের আশ্রয়ে রেখে যান। তিনি ভ্রাতুষ্পুত্রকে অত্যধিক ভালোবাসতেন। এমনকি নিজ সন্তান-সন্ততি থেকেও তাঁর প্রতি অধিক মমতা ছিল। তাঁকে পাশে নিয়ে ঘুমাতেন এবং সাথে নিয়ে বাইরে যেতেন।
আনুমানিক দশ-বারো বছর বয়ঃক্রমকালে কিশোর মুহাম্মদ (সা.) বকরী চরাতেন। জনৈক ফরাসি ঐতিহাসিক লিখেছেন, আবু তালিব মুহাম্মদ (সা.)-কে অবজ্ঞার চোখে দেখতেন বলেই তাঁর দ্বারা বকরী চরাতেন। মনে হয় ঐ ঐতিহাসিক হয়তো জানেন না যে, তৎকালে আরবে বকরী চরানো হীনকাজ ছিল না। এ জন্যই আরবের অভিজাত ও আমীর-উমরাহদের সন্তানগণও ছাগ ও ভেড়া চরাতেন। পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে- ‘আর সেগুলোতে তোমাদের সৌন্দর্য বিদ্যমান। যখন সন্ধ্যায় সেগুলোকে ঘরে তোল এবং যখন চারণভূমিতে ছেড়ে দাও’। মূলত এটা ছিল মুহাম্মদ (সা.)-এর বিশ্ব চরানোর বা দেখাশুনা ভূমিকামাত্র। নবুয়ত আমলে তিনি বকরী চরানোর কাহিনী সাহাবীদের বলতেন। একবার তিনি সাহাবীদের নিয়ে বনে গেলেন। তারা বন্য কুল সংগ্রহ করে খেতে লাগাতেন। তিনি বললেন, কালো রঙের বন্য কুল অধিক মিষ্টি। শৈশবে বকরী চরানোর কালে তা আমি জেনেছিলাম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ