Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘যুক্তরাষ্ট্র চায় সব দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন’

অ্যামচেম আয়োজিত অনুষ্ঠানে পিটার হাস

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৯:১৭ পিএম | আপডেট : ৯:৩৩ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে না; তবে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে ভোটাররা যেন পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারেন। এ জন্য প্রচার প্রচারণায় সব রাজনৈতিক দলের প্রার্থী সমান সুযোগ ভোগ করবেন। গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সরকার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের। কোন পক্ষ তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে ব্যার্থ হলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে না। আজ বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স (অ্যামচেম) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি, জাতীয় নির্বাচনের পথে বাধা।

রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স (অ্যামচেম) আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্র্কে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দৃস্টিভঙ্গি তুলে ধরেন পিটার হাস। অ্যামচেমের নিয়মিত মাসিক মধ্যাহ্ন ভোজ উপলক্ষ্যে এই আলোচনার আয়োজন করা হয়। অ্যামচেমের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল এসময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী, আমলা, শিক্ষক, গবেষক ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়াও এ দেশে যুক্তরাষ্ট্রের ৫টি লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করেন পিটার হাস। যেখানে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। একইসঙ্গে ব্যবসা, বিনিয়োগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে স্থগিত থাকা বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা (জিএসপি) নিয়েও কথা বলেন তিনি।

পিটার হাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপনের এ সময়ে আমরা দূতাবাসের পক্ষ থেকে পাঁচটি মূল উদ্দেশের প্রতি দৃষ্টিপাত করছি। রাষ্ট্রদূত বলেন, এগুলোর মধ্যে প্রথমত একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র; দ্বিতীয়ত, এমন একটি বাংলাদেশ যা গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা, বহুত্ববাদ, সহনশীলতা, সুশাসন ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল; তৃতীয়ত, সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে সহনশীল বাংলাদেশ নিশ্চিত করার কথাও বলেন তিনি। চতুর্থত, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। যতক্ষণ পর্যন্ত মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন সম্ভব না হয়, ততক্ষণ এ সমর্থন থাকবে। প্রথম চারটি লক্ষ্যের প্রতিটি লক্ষ্য আমাদের পঞ্চম লক্ষ্যের ভিত্তি, টেকসই ও বিস্তৃত পরিসরে পারস্পরিক সমৃদ্ধি অর্জন, শ্রম মানের উন্নয়ন, অর্থনীতির সম্প্রসারণ ও বৈচিত্রময়করণের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করছে। পাশাপাশি এটিকে বৃহত্তর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাণিজ্য ও সংযোগের পরিসর বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করছে বলে জানান মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবসন প্রসঙ্গে পিটার হাস বলেন, দু:খজনকভাবে মিয়নমারের বর্তমান পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবসনের অনুকূলে নেই। তবে অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের মত যুক্তরাষ্ট্রও রোহিঙ্গাদের শিক্ষা এবং স্টাটাসসহ বিভিন্ন প্রয়োজন মিটাতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে মার্কিন উদ্যোক্তদের বিনিয়োগ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নের পর বাংলাদেশের প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রয়োজন হবে। এজন্য প্রতিষ্ঠানিক উন্নয়ন প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যুক্তরাষ্ট্র সফরে গত সপ্তাহে মার্কিন এফডিআইয়ের আহবান জানিয়েছেন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে বিনিয়োগ পরিবেশ। এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে পিটার হাস বলেন, মার্কিন উদ্যোক্তারা কোন দেশে বিনিয়োগের আগে দুর্নীতি সংত্রান্ত বাস্তবতা, সহজ ব্যবসা পরিবেশ, দক্ষ শ্রমশক্তির সহজপ্রপ্যতা ও বেশি মুনাফার বিষয়টি বিবেচনা করে থাকে। দু:খজনকভাবে প্রতিবেশি দেশগুলোর চেয়ে এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। পিটার হাস বলেন, মার্কিন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে স্থিতিশীলতার বিকল্প নেই। এই প্রসঙ্গ টেনে রাষ্ট্রদূত দাবি করেন, বর্তমান সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি আসছে জাতীয় নির্বাচনের পথে বাধা। একই সঙ্গে নিজের যুক্তি তুলে ধরেন কেন উভয় দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও গভীর করা উচিত।

জিএসপি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, শ্রমিক নিরাপত্তা প্রশ্নে বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিত করা হয়। এখনো রফতানি পণ্যের বাইরে স্থানীয় বাজারের জন্য যে সব পণ্য উৎপাদিত সেগুলোর ক্ষেত্রে এখনো অগ্রগতি নেই। শ্রম আইনের জটিলতাও এখনো কাটেনি। এছাড়া শ্রমঅধিকার এবং সিবিএ (কালেকটিভ বার্গেনিং এজেন্সি) যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ প্রসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) শুল্কমুক্ত রফতানিতে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়টিও জড়িত। যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের মধ্যকার আগামী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংলাপে এ নিয়ে আলোচনা হবে। ভূ-রাজনীতি এবং ভূ-অর্থনীতি সম্পর্কিত এক প্রশেুর জবাবে মার্কিন রাস্ট্রদূত বলেন, রাশিয়া- ইউত্রেক্রন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইন ব্যাহত হচ্ছে। এর নেতিবাচক এই প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলোর সম্পদক মতিউর রহমান প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ