Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বালাগাল উলা বিকামালিহি কাসাফাদ্দোজা বিজামালিহি

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

সোয়াইবার পর শিশু ‘মোহাম্মাদ (সা.)’ ভাগ্যবতী হালিমার দুধ পান করেন। সেকালে নিয়ম ছিল, শহরে অভিজাত পরিবারের বাচ্চাদেরকে গ্রাম বা শহরতলীর মহিলাদের কাছে দুগ্ধপান এবং প্রতিপালনের জন্য সমর্পণ করতেন। এতে বেদুঈনদের বিশুদ্ধ ভাষা ও নিখুঁত উচ্চারণে তারা অভ্যস্ত হতো এবং খাছ আবরীয় বৈশিষ্ট্যমÐিত হয়ে উঠতো। ওয়াকেদীর পেশকৃত হাদীসে জানা যায়, হুজুরে পাক (সা.) বলেছেন, আমি প্রতিপালিত হয়েছি শুদ্ধভাষী বানী আসাদ গোত্রে। স্যার উইলিয়াম মেয়র বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.) দৈহিক গঠনের দিক থেকে বর্দ্ধিষ্ণু ছিলেন। তাঁর চরিত্র ও নির্ভিক মানসিকতা ছিল অতুলনীয়, তিনি পাঁচ বছর বনু সাদ গোত্রে লালিত হওয়ায় তার ভাষাও প্রকাশ ভঙ্গিতে নিখুঁত আবরি নিদর্শন প্রকাশ পেত। দুধপানের প্রথাটি অভিজাত আরবদের মাঝে বহুকাল চালু ছিলো। বনু উমাইয়াদের দামেশকে শাসনামলে তারা মর্যাদায় কিসরা ও কায়সার তুল্য হয়েও নিজেদের বাচ্চা শিশুকে বেদুঈন মহিলাদের কাছে প্রতিপালন করতে দিতেন। কেবলমাত্র অলীদ ইবনে আবদুল মালেকের শৈশবে এ ভাগ্য হয়নি। ফলে বানি উমাইয়াদের মধ্যে শুধু তিনিই বিশুদ্ধ আবরি ভাষা বলতে পারেননি।

রেওয়াজ অনুসারে বেদুঈন মহিলারা বছরে দু’বার করে শহরে আসত এবং তথাকার অভিজাত মহিলারা নিজ নিজ দুগ্ধপোষ্য সন্তান প্রতিপালনের জন্য তাদের নিকট সোপর্দ করতেন। শিশু মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মের কিছুদিন পর হাওয়াযেন কাবিলার কতিপয় মহিলা দুগ্ধপোষ্য বাচ্চার সন্ধানে মক্কায় এলো। এদের সাথে বিবি হালিমাও ছিলেন। সবাই দুগ্ধপোষ্য শিশু পেলেও ঘটনাক্রমে হালিমা কোনো শিশু সংগ্রহে সক্ষম হলো না। মা আমেনা শিশু মুহাম্মদ (সা.)-কে তার কাছে দিতে চাইলেন। হালিমা ভাবলেন, এ ইয়াতীম শিশুকে নিয়ে তার লাভ কী হবে? অবশেষে মনে করলেন, খালি হাতে ফিরে যাওয়ার চাইতে ভালো। অতএব আমেনার প্রস্তাবে রাজি হয়ে শিশু মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে গেলেন। হালিমার এক মেয়ে ছিল, নাম শায়বা। সে শিশু মুহাম্মাদ (সা.)-কে খুবই স্নেহ করত। সে তাকে সাদরে-স্বযতেœ আহার করাত, কোলে-কোলে রাখত। দু-বছর পর হালিমা মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে মক্কায় তাঁর মাতার কোলে তাকে ফিরিয়ে দিলেন। সে বছর মক্কায় মহামারি দেখা দিয়েছিল। তাই তিনি বললেন, বোন হালিমা! তুমি তাকে আবার নিয়ে যাও। এতে তিনি পুনরায় ঘরে নিয়ে ফিরলেন। মুহাম্মদ (সা.) কতদিন হালিমার ঘরে ছিলেন তা নিয়ে মতভেদ আছে, তবে ইবনে এসহাক জোর দিয়ে বলেছেন যে, তিনি তথায় ছ’টি বছর ছিলেন।

কাবিলায় হাওয়াযেন বিশুদ্ধ ভাষায় ও স্বচ্ছ উচ্চারণে প্রখ্যাত ছিলেন। উল্লেখ্য যে, বনু সা’দ গোত্র কাবিলায় হাওয়াযেনেরই শাখা। রাসূলে করীম হালিমাকে খুবই ভালোবাসতেন। নবুয়ত আমলে হালিমা যখন রাসূল (সা.)-এর দরবারে এসেছিলেন, তখন তিনি তাকে মা আমার, মা আমার বলে জড়িয়ে ধরেছিলেন। ইবনে কাছীর অবশ্য বলেছেন যে, হালিমা নবুয়ত আমলের পূর্বেই প্রাণ ত্যাগ করেছিলেন; কিন্তু তা সঠিক নয়। কেননা বহু খ্যাতনামা ঐতিহাসিক ও চারিতকার লিখেছেন যে, হালিমা ইসলমা গ্রহণ করেছিলেন। এমনকি হাফেজ মুগলতাঈ হালিমার ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে একখানি পুস্তক পর্যন্ত রচনা করেছেন।

হারেছ বিন আবদুল উজ্জা রাসূল কারীম (সা.)-এর দুধপিতা অর্থাৎ হালিমার স্বামী ছিলেন। নবুয়ত আমলে তিনি মক্কায় এসে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি রাসূল (সা.)-এর দরবারে এসে বলেছেন, আপনি কী শিখাচ্ছেন? তিনি বললেন, সেদিন অবশ্যই আসবে যখন আপনারা বুঝতে পারবেন যে, আমি সত্য কথা বলছি। একথা শুনেই হারেছ মুসলমান হয়ে গেলেন। রাসূলে কারীম (সা.)-এর চারজন দুধভাই-বোনের নাম ছিল, আবদুল্লাহ, উনাইসা, হোযায়ফাহ ও হাযাফাহ। হাযাফাহকে সবাই সায়মা নামে ডাকত। আবদুল্লাহ ও সায়মার ইসলাম গ্রহণের কথা উল্লেখ আছে; কিন্তু অন্য দুজনের কথা কিছু জানা যায় না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ