Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কমছে প্রবাসী আয়

প্রতি ডলার ১০৮ টাকা নির্ধারণের প্রভাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের দর নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে হিসেবে প্রতি ডলার সর্বোচ্চ ১০৮ টাকায় কিনতে পারবে ব্যাংকগুলো। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয় সংগ্রহে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের তুলনায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে ধারাবাহিকভাবে কমেছে রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত দরের তুলনায় বেশি দর পাওয়া যাচ্ছে হুন্ডিতে। রেমিট্যান্সের ওপর নগদ প্রণোদনা দেয়ার পরেও ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর চেয়ে হুন্ডিতে পাঠাতেই আগ্রহী প্রবাসীরা। কারণ তাতে টাকা বেশি পায়।
সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ২২ দিনে দেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে ১২৬ কোটি ৫৪ লাখ (১ হাজার ২৬৫ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন) ডলার। দেশীয় মুদ্রায় (হালনাগাদ রেট প্রতি ডলার ১০৩ টাকা ধরে) যার পরিমাণ ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে (৮ সেপ্টেম্বর) ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার, দ্বিতীয় সপ্তাহে (১৫ সেপ্টেম্বর) এসেছে ৪১ কোটি ২৭ লাখ ডলার। আর তৃতীয় সপ্তাহে পাঠিয়েছেন (১৫ সেপ্টেম্বর) মাত্র ২০ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাসের শুরুর দিকে প্রবাসী আয়ের যে হার ছিল শেষ দিকে তা অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে। ব্যাংকাররা বলছেন, যে হারে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমছে এই ধারা চলমান থাকলে আগের মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স কমে যাবে।

চলতি অর্থবছরের টানা দুই মাস ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স বৈধ পথে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত আগস্ট মাসে ২০৩ কোটি ৭৮ লাখ (২ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। তার আগের মাস জুলাইয়ে এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। জুলাই মাসে পবিত্র ঈদুল আজহার কারণে দেশে বিপুল পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছিল। তবে আগস্টে বড় উৎসব ছিল না, তারপরও প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলার ছাড়ায়। চলতি বছরের প্রথম আট মাসের মধ্যে তিন মাস প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলারের বেশি ছিল।
এদিকে সেপ্টেম্বরের প্রথম ২২ দিনে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮ কোটি ৫৮ লাখ মার্কিন ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১০৫ কোটি ৩৭ লাখ মার্কিন ডলার। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫১ লাখ মার্কিন ডলার, আর বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২ কোটি মার্কিন ডলার।

আলোচিত সময়ে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বরাবরের মতো বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসীরা ২৭ কোটি ৮২ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। এরপর সিটি ব্যাংকে এসেছে ১০ কোটি ৯৩ লাখ ডলার, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে ৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার, অগ্রণী ব্যাংকে ৮ কোটি ডলার এবং পূবালী ব্যাংকে এসেছে ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার প্রবাসী আয়।

আলোচিত সময়ে সরকারি বিডিবিএল, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ, বিদেশি ব্যাংক আল-ফালাহ, হাবিব ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও উরি ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি।

প্রণোদনা ও ডলারের দাম বাড়ার পরও ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে বড় পতন হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

এখন বিদেশ থেকে যেকোনো পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাতে কোনো ধরনের কাগজপত্র লাগে না। এছাড়া প্রবাসী আয়ের ওপর আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার।
ডলারের সঙ্কট নিরসন ও প্রবাসী আয় বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেরাই বসে গত ১১ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করে দেয়। ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) যৌথ সভায় দাম নির্ধারণ করে।

বাফেদার ঘোষিত দাম অনুযায়ী, এখন থেকে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে প্রতি ডলার সর্বোচ্চ ১০৮ টাকায় কিনতে পারবে ব্যাংক। বাণিজ্যিক রেমিট্যান্স ও রফতানি বিল নগদায়ন হবে প্রতি ডলার ৯৯ টাকায়। এছাড়া রেমিট্যান্স আহরণ ও রফতানি বিল নগদায়নে ব্যাংকগুলোর গড় (ওয়েট অ্যান্ড এভারেজ) মূল্যের সঙ্গে সর্বোচ্চ এক টাকা যোগ করে আমদানিকারকের কাছে ডলার বিক্রি করতে পারবে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বলা হয়, ‘টাকার বিনিময় মূল্য’ অংশে বলা হয়েছে, চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে এবং বাফেদার নির্দেশনা অনুযায়ী আন্তব্যাংক লেনদেন এবং গ্রাহক লেনদেনের জন্য টাকার বিনিময়মূল্য নির্ধারণ করছে ব্যাংকগুলো।
সবশেষ ২২ সেপ্টেম্বরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য সর্বোচ্চ ১০৩ টাকা ২৫ পয়সা এবং সর্বনিম্ন ১০১ টাকা ৫৭ পয়সা দেওয়া আছে।



 

Show all comments
  • Mahmud Hussain Chowdhury ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:৩৯ এএম says : 0
    কঠোর পরিশ্রমের টাকা যেখানে ভালো রেট পাওয়া যাবে, সেখানে প্রবাসীরা যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Saiful Sharkar ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:৩৯ এএম says : 0
    এয়ারপোর্টে চুরি করবে আর প্রবাসীরা ব্যাংকে টাকা পাঠাবে এই আসা নিয়ে বসে থাকো।
    Total Reply(0) Reply
  • Abul Bashar ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:৪০ এএম says : 0
    ডলা‌রের রেট ১০৮ টাকা হওয়ায় সৌ‌দি রি‌য়ে‌লের রেট 1 রিয়‌াল = 28.29 tk, হু‌ন্ডি রেট ৩০ টাকা । অর্থ্যাৎ ১০০০ টাকায় ব্যাং‌কে পা‌বে 2829 tk ও 2.5% বোনাস ৭০ টাকা অর্থ্যাৎ ২৯০০ টাকা । কিন্তু দুঃ‌খের বিষয় ১০০০ টাকা থে‌কে ১৮টাকা চার্জ কাট‌বে । কোন কোন ব্যাংক ২৩ টাকা, কোন ব্যাংক ২৮ টাকা চার্জ কাট‌বে । তাহ‌লে ২৮×২৯ = ৮১২ টাকা কম‌বে । তাহ‌লে মোট টাকা পা‌বে 1000-28= 972 × 29= 28188 , ব্যাং‌কে যাতায়াতে ট্যা‌ক্সি ভাড়া ৩০/৪০ রিয়‌াল । কমপ‌ক্ষে ২ ঘন্টা সি‌রিয়‌া‌লে দা‌ড়ি‌য়ে থাকা । ‌অথচ হু‌ন্ডি ওয়ালারা ফোন দি‌য়ে রুম থে‌কে এ‌সে নি‌য়ে যা‌বে । শুক্র, শ‌নি , র‌বি সপ্তা‌তে ২৪/৭
    Total Reply(0) Reply
  • Md Mahabubur Rahman Khandakar ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:৪১ এএম says : 0
    ডলারের রেট ৯০ টাকা হলে সব ঠিক হবে। কারন ব্যাবসা করার জন্য টাকা বিদেশে নেওয়াও লাগে। টাকা দিয়ে টাকা আনতে হয়। সরকার বসে বসে বলতেছে শুধু টাকা পাঠাও টাকা পাঠাও
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডলার

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৬ জানুয়ারি, ২০২৩
৫ ডিসেম্বর, ২০২২
১৯ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ