Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাপায় গৃহবিবাদ চরমে, দিশেহারা তৃণমূল নেতা-কর্মীরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৯:২০ পিএম

জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। সংসদের প্রধান বিরোধী দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ এবং চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের (জিএম কাদের) মধ্যে বিরোধ এখন তুঙ্গে। সম্প্রতি জিএম কাদেরকে ‘আদেশ-নির্দেশ’ দিয়ে এ পর্যন্ত অব্যাহতি দেয়া নেতাদের দলে ফিরিয়ে নেয়া বিষয়ে রওশনের চিঠি নিয়ে বিরোধ আরো তীব্র হয়ে ওঠেছে। এই বিরোধ যে অনেকদূর গড়াবে, তা রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠজনদের কথাবার্তায় প্রকাশ পেয়েছে। তারা জানান, যারা রওশন এরশাদের বিরোধিতা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। নেয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থাও।

এদিকে জিএম কাদের ও দলের সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ বলেছেন, রওশন এরশাদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় জিম্মি হয়ে আছেন পার্টির কিছু নেতার হাতে। সংগঠন বিরোধী এসব কর্মকান্ডকে ভালো চোখে দেখছে না তারা। তাই কয়েকজনের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে অব্যাহতি দেয়া হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে। রওশনপন্থীরা বলছেন, সর্বশেষ পাঠানো চিঠিটি রওশন এরশাদের নির্দেশে প্রস্তুত করা হয় এবং তিনিই স্বাক্ষর করেন। কিন্তু জিএম কাদের পন্থীরা তা বিশ্বাস করছেন না। তারা বলছেন, রওশনকে জিম্মি করে ব্যাংককে বসে এসব করা হচ্ছে। এ অবস্থায় কয়েকজন নেতাকে অব্যাহতি দেয়া হতে পারে বলেও আভাস দিয়েছেন দলের একাধিক নেতা।

এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশিদ অসুস্থ রওশন এরশাদের সঙ্গে ব্যাংককে ছিলেন। দুদিন আগে দেশে ফিরেছেন। তিনি জানান, ‘রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে তিনি দেশে ফিরবেন বলে আশা করেন কাজী মামুন। তিনি আরো বলেন, যারা রওশন এরশাদের পাঠানো চিঠি ও বিবৃতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন এবং এরশাদ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বাজে কথা বলছেন, তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই আইনগত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রওশনের চিঠি প্রসঙ্গে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর সন্দেহ প্রকাশ বিষয়ে কাজী মামুনুর রশিদ বলেন, ‘চুন্নু কে? এরশাদ পরিবারের বিষয়ে কথা বলার তিনি কে? এসব তাদের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বলছে। তারা এতো কথা বলছে, কিন্তু ১১ মাস ধরে রওশন এরশাদ অসুস্থ, তারা দেখতে যাননি কেন? রওশন এরশাদ ঢাকায়ও তাদের ডেকেছিলেন, কিন্তু তারা আসেননি কেন?’ মামুন আরো বলেন, রওশন এরশাদের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২৬ নভেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। ওই কাউন্সিলে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।

রওশনের ডাকা কাউন্সিল ও চিঠি নিয়ে সন্দেহ পোষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘নো কমেন্ট। ‘এর আগে গেলো বৃহষ্পতিবার রওশন এরশাদের চিঠির বিষয়ে মুজিবল হক চুন্নু বলেন, জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক পার্টির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছায় কিছু করছেন বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। তবে রওশন তার ছেলে সাদ এরশাদ ও আরো দু’এক জনের কাছে জিম্মি বলে দাবি করেন চুন্নু। বেগম রওশন এরশাদের যে চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, সেই চিঠি আমলে নিচ্ছে না তারা।

সাবেক মহাসচিব ও সংসদে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গাকে সম্প্রতি দলের সব পদপদবি থেকে অব্যাহতি দেয়া এবং পরবর্তীতে দলীয় চেয়ারম্যানের বিরোধীতা করে রাঙ্গাঁর সংবাদ সম্মেলনের মধ্যদিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান জাপার অন্তর্দাহ-কলহ চুড়ান্তভাবে প্রকাশ্য রূপ নেয়। রাঙ্গার পর অব্যাহতি দেয়া হয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধাকে। এছাড়া রওশন এরশাদের বদলে জিএম কাদেরকে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা করার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর দলীয় সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে বিদেশে চিকিৎসাধীন রওশন এরশাদের নামে গেলো এক মাস ধরে বিভিন্ন বিবৃতি বা চিঠিপত্র আসায় আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে রওশন ও জিএম কাদের শিবিরের দূরত্ব।

তবে রওশন এরশাদ এসব বিবৃতি স্বেচ্ছায় দিচ্ছেন না বলে মনে করেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি বলেন, ‘রওশন এরশাদ অসুস্থ। তার চিকিৎসা চলছে। অসুস্থতা ও বয়স সবকিছু মিলিয়ে ঠিকভাবে বাছবিচার করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো শারীরিক অবস্থা তাঁর নেই। কোথায়, কী কাগজে স্বাক্ষর করছেন সেটিও হয়তো তিনি বুঝতে পারছেন না।’ সেই সুযোগে একটি চক্র নিজেদের মতো করে সাজানো চিঠিতে তার স্বাক্ষর নিচ্ছেন বলে দাবি জিএম কাদেরের। সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব ও দশম জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব গোলাম মসীহ্ গণমাধ্যমকে বলেন, রওশন এরশাদ নিজেই ওইসব চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। তিনি নিজেই এসব চিঠি প্রস্তুত করতেও বলেছেন। তিনি চিঠিতে স্বাক্ষর করছেন এমন ভিডিও রয়েছে বলে দাবি মসীহ্'র। তাকে কেউ জিম্মি করেনি বলেও জানান তিনি।

শুধু তাই নয়, রওশনের নামে পাঠানো বিবৃতি নিয়ে সন্দেহ দূর করতে প্রমাণ স্বরূপ বিরোধী দলীয় নেতার প্রেস উইংয়ের বিভিন্ন মাধ্যমে একটি ছবিও পাঠানো হয়েছে। যাতে দেখা যায়, হাসপাতালের বেডে বসে রওশন এরশাদ কাগজপত্র পড়ছেন এবং কলম হাতে স্বাক্ষর করছেন। রওশন এরশাদ টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশে-বিদেশে চিকিৎসাধীন। বিরোধী দলীয় নেতা ফোন না ধরা প্রসঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ বলেন, কেউ যোগাযোগই করছেন না। তিনি সবার ফোন ধরেন। তবে এরশাদ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যারা সন্দেহ করছে, তাদের জন্ম নিয়েও সন্দেহ আছে। রওশন এরশাদ নিজেই দলকে সুসংগঠিত করতে এসব বিবৃতি, চিঠি দিয়েছেন।’

গেলো একমাস ধরে রওশন এরশাদকে বিবৃতি ও বক্তব্যে সরব দেখা গেছে। সবশেষ ২১ সেপ্টেম্বর বিরোধী দলীয় নেতার নামে গোলাম মসীহ্ স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জাপা থেকে অব্যাহতি, বহিষ্কার এবং কমিটি থেকে বাদ দেয়া সবাইকে দলে অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে ‘আদেশ’ দিয়েছেন জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ। জি এম কাদেরের কাছে পাঠানো নির্দেশনামূলক এক চিঠিতে তিনি এ আদেশ দেন। চিঠিতে জাপার গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার কয়েকটি উপধারাকে ‘গণতন্ত্রপরিপন্থী ও স্বেচ্ছাচারমূলক’ আখ্যা দিয়ে সেগুলো স্থগিতেরও ‘নির্দেশ’ দেন রওশন এরশাদ। বিজ্ঞপ্তিতে রওশন এরশাদ বলেন, ‘এ পর্যন্ত দেশজুড়ে অব্যাহতিপ্রাপ্ত, বহিষ্কার ও নিষ্ক্রিয় করে রাখা সব নেতাকর্মীকে এই আদেশ জারির পর হতে যার যার আগের পদ-পদবিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলো।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ