Inqilab Logo

শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রূপগঞ্জে ১০টি সমবায় প্রতিষ্ঠানের অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম ভোগান্তি ও উধাও আতঙ্কে গ্রাহক

| প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ থেকে : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের এক গ্রামেই রয়েছে সমবায়ের নামে ১০টি সুদি প্রতিষ্ঠান। চড়া সুদে ঋণদান ও আদায়, অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম, এফডিআর,সঞ্চয়,আমানত গচ্ছিত, লাখে ২০ হাজার টাকায় চুক্তিতে চালাচ্ছে তাদের অবৈধ কার্যক্রম। গ্রাহকদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করায় প্রতিনিয়ত বাগি¦তÐা, অভাব-অভিযোগে ও হয়রানির মাধ্যমে চলছে তাদের সেবার নামে কার্যক্রম। সমবায়ের অধীনে নিবন্ধন নিয়ে তাদের বেপরোয়া অর্থনৈতিক লেনদেনে চুক্তি ভঙ্গ করায় স্থানীয় গ্রাহকরা অতিষ্ঠ। এমন একটি গ্রামের নাম বাগবের। স্থানীয়দের সুবিধায় এখানে প্রতি সকালে মুদি মনোহারী দোকানপাট থাকায় বাগবের বাজার বলেও চেনেন অনেকে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বাগবের বাজারের ২০০ গজের মধ্যেই রয়েছে ১০টি সমবায় প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে দুটি মাল্টিপারপাস ও ৮টি সমবায় শ্রমজীবী নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে সাইনবোর্ড। এসব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে জানা যায়, তাদের রয়েছে স্থানীয় উপজেলা সমবায় বিভাগের দেয়া সনদ। একইভাবে রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের দেয়া ট্রেড লাইসেন্স। নিয়মনীতি বেঁধে তাদের সনদ দিলেও এসব প্রতিষ্ঠানে মানা হচ্ছে না তা। তাদের অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম, চড়া সুদের ভিত্তিতে ঋণ দেয়াসহ নানা অনিয়ম থাকায় বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে এ সংক্রান্ত সংবাদ ছাপা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাগবের বাজার এলাকায় সবুজ বাংলা মাল্টিপারপাসের বিরুদ্ধে উপজেলা সমবায়ে অভিযোগ করেন স্থানীয় গ্রাহকরা। পরে গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দেয়ার নিশ্চয়তা দিলে বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা কমে আসে। একইভাবে সূর্যতরুণ মাল্টিপারপাস নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন যাবৎ কতিপয় গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে দেই দিচ্ছি বলে হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভস নামে এ দু’টি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা নিয়েও স্থানীয়দের ক্ষোভের শেষ নেই। তবে তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে গড়ে উঠেছে আরো ৮টি সমবায় প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান দরিদ্রদের মধ্যে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া ও সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে কর্মসংস্থান ও স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে কাজ করার কথা থাকলেও তারা করছে তার উল্টো। চড়া সুদের বিনিময় ঋণ দেয়া, এফডিআর, সেভিং অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে ব্যাংকের ন্যায় চালাচ্ছে তাদের কার্যক্রম।
গ্রাহকদের নিয়মিত লভ্যাংশ পরিশোধ না করার রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। বছরের পর বছর ঘুরেও পাচ্ছে না আসল টাকা। কেউ কেউ সাধারণের জমি বিক্রির টাকা এসব সমবায়ে গচ্ছিত রাখছে বেশি লাভের আশায়। পরে এসব প্রতিষ্ঠান হয়ে যাচ্ছে লাপাত্তা। মধুখালী এলাকার মধুখালী মাল্টিপারপাস নামের একটি সমবায় প্রতিষ্ঠান মালিক হানিফ কোটি টাকা নিয়ে গোপনে বাড়িঘর বিক্রি করে উধাও হয়ে যায়। বেলদী মাল্টিপারপাস নামের একটি প্রতিষ্ঠানেরও রয়েছে এমন অভিযোগ। কাঞ্চন পৌর এলাকায় পদ্মা মাল্টিপারপাস, ভক্তবাড়ি ও গাউছিয়া এলাকায় এফআইসিএল নামের আরো দু’টি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়।
ফলে স্থানীয় গ্রাহকরা রয়েছেন উধাও আতঙ্কে। এখন ব্যাংকের সুদের হার কম থাকায় ব্যাংকে আমানত রাখতেও ভয় পাচ্ছেন। আবার সমবায় ও মাল্টিপারপাস উধাও হয়ে যাবার ভয়ে তাতেও টাকা রাখছেন না অনেকে। অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এই এলাকায় জনগণ। বাগবের এলাকার আবু তালেবের ২০ লাখ টাকা, মাজেদা বেগমের ৮ লাখ টাকা, তোতা মিয়ার ৪ লাখ, আরিফ মিয়ার ৬ লাখসহ শতাধিক গ্রাহক তাদের আমানত ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না ।
এমন আরো প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান বাদশা মিয়ার তত্ত¡াবধানে হিমালয় শ্রমজীবী সমবায়, উপজেলা জামায়াত নেতা ই¯্রাফিল আলমের তত্ত¡াবধানে ইকুইটি সমবায় সমিতি, স্থানীয় আতিকুল্ল্যা ও সুশীলের পরিচালনায় নবজাগরণ সমবায় সমিতি, বাচ্ছু মিয়ার পরিচালনায় মাটির মায়া শ্রমজীবী সমবায়, সেলিম মিয়ার সোনালী শ্রমজীবী সমবায়, টিনর এলাকার নাদিম, রুবেলের পরিচালনায় শ্যামল বাংলা শ্রমজীবী সমবায় সমিতি। এদের মধ্যে ইশুইটির কার্যক্রমে অনিয়ম পাওয়ায় তা সিলগালা করে দিয়েছে প্রশাসন।
এদিকে মধুখালী এলাকার দু’টি সমবায় প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার পর থেকে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ও হতাশা বিরাজ করছে। সমবায় প্রতিষ্ঠানের মালিকরা মাঠে টাকা না ছেড়ে সাধারণ লোকজন থেকে কেবল আমানত সংগ্রহ করে থাকে। এক সময় বেশিসংখ্যক আমানত জমা করে সুযোগ বুঝে গোপনে বাড়িঘর বিক্রি করে পালিয়ে যায়। এতে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মির্জা ফারজানা শারমিন বলেন, অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম ও গ্রাহক হয়রানি বিষয়ে একাধিক সূত্রে জানতে পেরেছি। ফলে বাগবের এলাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। এ সময় তিনি আরো বলেন, অবৈধভাবে এসব প্রতিষ্ঠান ব্যাংকিং কার্যক্রম করলে সমবায় সমিতি আইন ২০০১, সংশোধিত ২০০২, ২০১৩-এর বলে ১০ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জড়িমানার বিধান রয়েছে। এমন অভিযোগের প্রমাণ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রূপগঞ্জে

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ