Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন

প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১১ এএম, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : এক লাখ তের হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। গতকাল শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সভার পর সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় থাকার সময় ছোট পরিসরে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তখন এটি ছিল ২০০ মেগাওয়াটের। সে সময় পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়াকে প্রকল্প পরিচালকও করেছিলেন।’ ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) মারা যাওয়ার পর প্রকল্পটা থমকে যায়। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবার উদ্যোগ নেয়া হলেও আর্থিক অসঙ্গতির কারণে সম্ভব হয়নি। এখন রাশিয়ার সহযোগিতায় এটি করা হচ্ছে।’
এটি হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ব্যয়ের প্রকল্প, বলেন মন্ত্রী।
বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড ব্যয়ের এই প্রকল্পে দু’টি ইউনিটের মাধ্যমে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল পর্বের কাজ বাস্তবায়নে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে রাশিয়া ৪ শতাংশ হারে সুদে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে। ১০ বছরের রেয়াতকালসহ ২০ বছর মেয়াদে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়া হবে বাকি ২২ হাজার কোটি টাকা।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গৃহীত প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত ২৬ জুলাইয়ে রাশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মধ্যে একটি ‘স্টেট এক্সপোর্ট ক্রেডিট’ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কমিশনিং, পরিচালন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে দুই হাজার ৫৩৫ জন কাজ করবে। এছাড়াও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিটে বিভিন্ন পর্যায়ে ৩৬৯ জন লোক নিয়োজিত থাকবে।
এর আগে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে প্রস্তুতি হিসেবে ২০১৩ সালে পাঁচ হাজার ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম পর্যায় প্রকল্প’ অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। ওই প্রকল্পেও রাশিয়া চার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়।
প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে প্রস্তুতিমূলক কাজ বাস্তবায়নে রুশ ফেডারেশনের পক্ষে এটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট এবং বাংলাদেশের মধ্যে পরমাণু শক্তি কমিশনের মধ্যে চারটি চুক্তি হয়েছে।
জানা যায়, প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ হবে ২০২১ সাল নাগাদ। ওই বছরেই জাতীয় গ্রিডে পারমাণবিক বিদ্যুতের সংযোগ দেয়ার আশা করছে সরকার। আর দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শেষ হবে ২০২৫ সালে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির আয়ু নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ বছর। এই কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হবে ২ টাকার কম।
বিতর্ক রয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে। তবে জানা গেছে, নিরাপত্তার ইস্যুটি মাথায় রেখেই রাশিয়ার সর্বশেষ আধুনিক প্রযুক্তি ভিভিইআর ১২০০ মডেলে স্থাপিত হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিশ্বের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাগুলো মাথায় রেখেই রাশিয়া তার সর্বশেষ মডেলের আধুনিকায়ন করে এই মডেল দাঁড় করিয়েছে। রাশিয়ার অভ্যন্তরেই নবোভরনেজ ও লেনিনগ্রাদে ভিভিইআর ১২০০ মডেলটি চালু করা হয়েছে। তুরস্ক ও ফিনল্যান্ডসহ অনেক দেশ এই প্রযুক্তি গ্রহণে এগিয়ে এসেছে। এসব কারণে বাংলাদেশে নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার সক্ষমতা আছে এই মডেলটির। আর পাবনা জেলাতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প ৭.৮ মাত্রার যার কেন্দ্রস্থল ছিল নেপালে। এই প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী রাশিয়ান কোম্পানি রোসাটোম জানিয়েছে, এই মডেলটি যে কোনো ধরনের বিমান হামলা থেকেও রক্ষা পেতে সক্ষম। বিশ্বে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান হলো ‘রেসাটোম’।
এদিকে এই প্রকল্পের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষ স্থানীয় জনশক্তি তৈরি করতে রাশিয়ায় প্রতি বছর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশীদের। প্রতি মাসেই একাধিক দল যাচ্ছে রাশিয়ায় প্রশিক্ষণের জন্য। আরো দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য সারাদেশ থেকে বাছাই করে তিন বছর মেয়াদি মাস্টার্স প্রোগ্রাম ও পাঁচ বছর মেয়াদি স্পেশালিস্ট প্রোগ্রামে রাশিয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ