পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
খাদির জন্য খ্যাত কুমিল্লার চান্দিনা ও দেবিদ্বার উপজেলায় যে চরকায় সুতা কাটা হতো সে রকম ৪৯টি চরকায় তৈরি হচ্ছে বিলুপ্ত মসলিনের মিহি সুতা। এই সুতা কেটে পাঠানো হয় ঢাকায়। সেখানেই বুনন হচ্ছে বাংলার ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে এক আলেকিত মাইলফলক মসলিন শাড়ি। মিহি সুতা তৈরির মধ্যদিয়ে ঐতিহ্যবাহী ও রাজসিক কাপড় মসলিনের ইতিহাসে যুক্ত হলো কুমিল্লার নাম।
জনশ্রæতি রয়েছে কাঁচের মতো স্বচ্ছ ওই মসলিন কাপড় একটি আংটির ভেতর দিয়ে অনায়াসে আনা-নেয়া করা যেতো এবং একটি দিয়াশলাইয়ের বাক্সেও রাখা যেতো। মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর তার স্ত্রী নূরজাহানকে মসলিন কাপড় দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। এই মসলিন বাংলা থেকে হারিয়ে যায় ১৮৫৬ সালে। ওই বছর ইংল্যান্ডে মসলিন প্রদর্শনীর পর এদেশ থেকে বিলুপ্ত হয় মসলিন কাপড়।
১৮৫৬ সালের পর বাংলাদেশে আর মসলিন তৈরি হয়নি। পাকিস্তান শাসনামল থেকে শুরু করে বাংলাদেশ স্বাধীনের পর ৪৩ বছরেও কেউ উদ্যোগ নেয়নি ঐতিহ্যের মসলিন তৈরিতে। দেখতে দেখতে কেটেছে প্রায় ১৬২ বছর। ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে মসলিন পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দেন।
এরপর শুরু হয় গবেষণা। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের তত্ত¡বাবধানে শুরু হয় ‘বাংলাদেশ সোনালী ঐতিহ্য মসলিন তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার প্রকল্প’। এদিকে মসলিনের সুতা তৈরির জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ‘ফুটি কার্পাস’ তুলা চাষ করে সাফল্য এনে দেন। সেই তুলায় কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার সোনাপুর ও দেবিদ্বার উপজেলার রামপুর গ্রামে দুইটি কারখানায় অন্তত ৪৯টি চরকায় মসলিনের সুতা তৈরির কাজ করছেন নারীরা। এর মধ্যে চান্দিনার কারখানায় রয়েছে ৩৭টি চরকা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মসলিনের পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লার চান্দিনা ও দেবিদ্বার অঞ্চলের ৪০ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে বাছাই করা ছয়জন এখন সুপারভাইজর হিসেবে কাজ করছেন। তাদের অধীনে চরকায় সুতা কাটার কাজ করছেন দুই শতাধিক নারী। এসব নারীরা সুপারভাইজরদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মসলিনের সুতা তৈরির পুরো কাজটাই করছেন খুব যতœসহকারে।
প্রকল্প পরিচালক মো. আইয়ুব আলী ইনকিলাবকে বলেন, হারিয়ে যাওয়া বাংলার ঐতিহ্যবাহী মসলিন পুনরুদ্ধারে কুমিল্লার চান্দিনার সোনাপুর ও দেবিদ্বারের রামপুরে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে শুরু হওয়া চরকায় কাটা মসলিন সুতা দিনে দিনে সুক্ষম থেকে সুক্ষমতর হচ্ছে। বর্তমানে ২২৬ জন নারী কাজ করছেন। তারা আগে মোটা সুতা কাটতেন। আমরা তাদের ৩০০ থেকে ৭০০ মেট্রিকাউন্টের সুতা কাটার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছি। হাতের চরকায় প্রথম দিকে ৮ থেকে ১০ মেট্রিকাউন্ট সুতা তৈরি করলেও বর্তমানে ৫৫৬ মেট্রিকাউন্ট মিহি সুতা তৈরি করছেন এখানকার নারী শ্রমিকরা। দুই উপজেলায় চরকায় তৈরি সুতায় এ পর্যন্ত পাঁচটি মসলিন শাড়ি, সাতটি মসলিন ওড়না ও ছয়টি নমুনা কাপড় তৈরি করা হয়েছে।
কুমিল্লায় খাদির চরকায় মসলিনের সুতা তৈরি প্রসঙ্গে কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. লুৎফুর রহমান বলেন, কুমিল্লা সবদিক থেকেই পথিকৃৎ। বিশ^জুড়ে কুমিল্লার খাদির সুনাম আজও অমলিন। ঢাকাই মসলিনের ২০০ বছরের ইতিহাসের সঙ্গে নাম যুক্ত হয়ে আরেকটি বিরল সুনাম অর্জন করছে কুমিল্লা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।