Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চিঠিপত্র : প্রশ্নবিদ্ধ সুচি

| প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা চলছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে স্থানীয় মগ ও বর্মী সেনাবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে এই হত্যাযজ্ঞ চলছে। রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। নিরীহ মানুষকে হত্যা ও দেশত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এর ফলে মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি এমন একপর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অস্বীকার করা বা এড়িয়ে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর তেমন কোনো তৎপরতা এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হচ্ছে না। ফলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা আরও তীব্র হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রশ্নবিদ্ধ হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বাংলাদেশ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে। এখন পর্যন্ত তার কোনো সমাধান না হওয়া সত্ত্বেও নতুন করে আবার আরেক চাপ। বিষয়টিকে এখন আর ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। বলাবাহুল্য, মিয়ানমারের বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগেও রাখাইন রাজ্যে এরূপ হত্যাযজ্ঞ চলেছিল। মিয়ানমারের তৎকালীন সামরিক সরকার রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নানা রকম অত্যাচার, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছিল। বিষয়টি সারা বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। মিয়ানমারের তৎকালীন বিরোধী নেত্রী (বর্তমানের ক্ষমতাপ্রাপ্ত) অং সান সুচি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তখন বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করলেও রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে কোনো ধরনের টুঁ শব্দটি করেননি। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তিনি বারবরই নীরবতা পালন করেছিলেন। বর্তমানে সুচি ক্ষমতায় এলেও তারই আমলে রাখাইন রাজ্যে পুনরায় হত্যাযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ ও রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু হবে বিষয়টি ভাবাই যায় না। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, যে সুচিকে নিয়ে সারা বিশ্বে এত আলোচনা, এত তোলপাড় এমনকি বাংলাদেশও সুচির পক্ষে এত কথা বলল সেই সুচির আমলেই কিনা আবার নতুন করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী আসা শুরু হলো। অথচ সুচি এখন পর্যন্ত মুখ খোলেননি। এমনকি এ ব্যাপারে তার সরকারও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাহলে কি এ কথা এখন ধরে নেয়া যায় যে, বর্তমানে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রতি সুচির কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই? অথবা তার সরকার সেনাবাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে? বিষয়টি যদি তাই হয় তাহলে মিয়ানমার  কিংবা অং সান সুচিকে নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এত আলোচনা, এত প্রচার কিংবা তার প্রতি সহানুভূতি আদায়ের এত চেষ্টা হয়েছিল কেন? রাখাইন রাজ্যে যদি রোহিঙ্গাদের ওপর সব সময়ই এত অত্যাচার চলে তাহলে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় থাকলে কি আর অং সান সুচির সরকার ক্ষমতায় থাকলেই বা কী? সবই তো এক। মুদ্রার এপিট আর ওপিট। সুচির এই নীরবতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার অর্জিত ইমেজকে অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ করবে। একজন অবিসংবাদিত নেত্রী হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার যে একটি ইমেজ তৈরি হয়েছিল, তারই আমলে এসে কিনা সেই মিয়ানমারেই পূর্বের ন্যায় আবারও গণহত্যা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন হলো, সুচি এখন এ বিষয়টিকে কীভাবে নেবেন? পূর্বের সরকারের ওপর দোষ চাপাবেন নাকি নিজেই দোষ নেবেন। এই মুহূর্তে জাতিসংঘেরও বিশেষ করণীয় রয়েছে। বান কি মুনের মিয়ানমার সফর করা এই মুহূর্তে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারেরও মিয়ানমার সফর অতীব জরুরি। জাতিসংঘের শরণার্থী কমিশন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেরূপ তৎপরতা দেখায় বর্তমানে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তার সেরূপ তৎপরতা চোখে পড়েনি। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে যেভাবে চলে আসছে তাতে বাংলাদেশের ওপর প্রচ- চাপ পড়ছে বৈকি। বাংলাদেশ অত্যন্ত আন্তরিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে জরুরি সাহায্য দেয়া প্রয়োজন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই মুহূর্তে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো উচিত এবং রোহিঙ্গা সমস্যার একটা দ্রুত সমাধান করা উচিত।
মাহমুদ এলাহী মন্ডল
রংপুর



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন