পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের আন্তরিকতার অভাব নেই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের সব দল-মত এক থাকে। বঙ্গোপসাগর নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে বিজয়ী হয়েছি। কিন্তু ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের ফাটল ধরেনি। ভারত সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে গতকাল বুধবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাংলাদেশ কী পেয়েছেÑ সেই প্রশ্ন যারা করেন, তাদের উদ্দেশে বলব, ভারত থেকে শূন্য হাতে ফিরে এসেছি এমন নয়। বিএনপির আন্দোলনে জনগণ সাড়া না দিলে আমাদের করার কি আছে? জিয়াউর রহমান ভারতের পণ্যের উপর সবধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। সে সময় অবাধে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অথচ বাংলাদেশের পণ্য ভারতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেননি।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদেশে অর্থপাচারকারী এমন অনেকের তথ্য আমার কাছে আছে। আমি সোজা কথা বলি, অনেক স্বনামধন্যের তথ্য আমার কাছে আছে। দুর্নীতি দমন কমিশন আর বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সামনে তাদের নাম আসবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে গত সপ্তাহে শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ৭টি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর মধ্যে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভারত গিয়ে কী পেলাম, এই প্রশ্নটা খুব আপেক্ষিক। এটা আপনার নিজের ওপর নির্ভর করছে, আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন। এটা আত্মবিশ্বাসের বিষয়। ভাগ্যিস প্রশ্ন করেননি ভারতকে কী কী দিয়ে এলাম?
‘ভারত সফরে বাংলাদেশ কী পেল’এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের যে ভৌগলিক অবস্থা, চারিদিকে ভারত, একটুখানি মিয়ানমার, তারপর বে অব বেঙ্গল। বন্ধুপ্রতীম দেশ থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, যোগাযোগ সব বিষয়ে সহযোগিতাটা আমরা পাই। নুমালিগড় থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল নিয়ে আসছি। সেই লাইনটা কিন্তু ভারত নির্মাণ করে দিচ্ছে। দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপোতে এই তেলটা থাকবে। উত্তরবঙ্গে আর সুদূর চট্টগ্রাম থেকে বাঘাবাড়ি হয়ে তেল যেতে হবে না। রিফাইন করা তেল ওখান থেকেই আসবে। অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য আরও বাড়বে। উত্তর বঙ্গের মঙ্গা আমরা দূর করেছি। পাশাপাশি ভারত থেকে এলএনজি আমদানির ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। ভারত যে এলএনজি নিয়ে আসছে, সেখান থেকে খুলনা অঞ্চলের জন্য যেন এলএনজি পেতে পারি সেই আলোচনা হয়েছে। অতএব, মনে হয় না যে একেবারে শূন্যহাতে ফিরে এসেছি।
একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি দিল্লি সফরে যাওয়ার আগে একটি কথা বলেছিলেন যে, আপনি প্রত্যাশা করেন, ভারত আরো নানা বিষয়ে উদার হবে। এই সফরে আপনার প্রত্যাশিত উদারতা নিয়ে আপনার মন্তব্য কী? তাদের আচরণ বা কথায় সেই উদারতা পেয়েছেন কি-না? জবাব দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যথেষ্ট আন্তরিকতা আমি পেয়েছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট বা অন্যান্য যার যার সঙ্গে কথা হয়েছে, তাদের আন্তরিকতা সবসময় ছিল, আছে।
ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে ভারতের সব দল-মত, জনগণ এক হয়ে আমাদের সমর্থন দিয়েছিল। আবার আমরা যখন স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন করি, যখন ছিটমহল বিনিময় করি, তখন দেখেছেন, ভারতের পার্লামেন্টে যখন আইন পাস হয়, তখন কিন্তু সব দল এক হয়ে স্থল সীমান চুক্তি আইন তারা পাস করেছিল। বন্ধুপ্রতীম দেশ তাদের সাথে অবশ্যই সুসম্পর্ক থাকবে।
তবে তিস্তা চুক্তির মত কিছু বিষয় যে আটকে আছে, সে দিকে ইংগিত করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা বাস্তব যে, পাশাপাশি একটি দেশের সঙ্গে নানা সমস্যা থাকতে পারে। আমি সবসময় মনে করি যে, সমস্যাগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যে যুদ্ধ হয়েছিল, সেই যুদ্ধের ফলে আমাদের অনেক রেল যোগাযোগ, সড়ক যোগাযোগ অনেক কিছু বন্ধ ছিল। আমরা একে একে সেগুলো উন্মুক্ত করে দিচ্ছি। কারণ আমাদের যেসব জেলাগুলো আছে, ওই অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ড যা আছে, আরো যাতে গতিশীল হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের প্রতি ভারতের আন্তরিকতার কোনো অভাব দেখিনি। আমি যদি নিজে ভালো বন্ধু হন, তবে সবাই ভালো থাকবে। আর যদি নিজে এদিক-ওদিক করেন তবে সম্পর্ক ভালো থাকে না। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অত্যন্ত স্পষ্ট। সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়। ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার এ নীতিই মেনে চলেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ বলতে পারবে না এ শত্রু ও বন্ধু, তা নয়। সকলের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই আমাদের সব সমস্যার সমাধান করছি। বিশাল সমুদ্রসীমা ১৯৯৬ সালের আগে তো এ ব্যাপারে কোনো আলোচনাই হয়নি। ৯৬ সালে আমরা কাজ শুরু করেছিলাম। তিনি বলেন, ২০০১ এ বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলো। তারা কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। দ্বিতীয়বার সরকারে আসার পর আমরা যখন উদ্যোগ নিলাম, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেই ভারত-মিয়ানমারের সাথে আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়ে সমাধান হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়েছি সত্য। দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ফাটল ধরেনি।
বিদেশে অর্থ পাচার সংক্রান্ত এক প্রশ্নে জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, অর্থপাচারকারী এমন অনেকের তথ্য আমার হাতে আছে সেটা আপনারা (গণমাধ্যম) লিখবেন কি-না সন্দেহ। আমি সোজা কথা বলি, অনেক স্বনামধন্যের তথ্য আমার কাছে আছে। দুর্নীতি দমন কমিশন আর বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সামনে তাদের নাম আসবে, তবে আপনারা ছাপাবেন কি-না আমি সেটা দেখব। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে অর্থপাচারকারীর তথ্য নেয়া হচ্ছে। সুইস ব্যাংকে কিন্তু আমরা বহু আগে ডিমান্ড পাঠিয়েছিলাম। আমরা তালিকা চেয়েছিলাম। কিন্তু তালিকা আসেনি। সবাই হাওয়ায় কথা বলে যায়; কিন্তু কেউ সঠিক তথ্য দিয়ে বলে না। মানি লন্ডারিং বন্ধে যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ডলার সংকট বাংলাদেশের একার না, বিশ্বব্যাপী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর আমেরিকা স্যাংশন দিলো, তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে গেল। তারপরও আমি বলব, আমরা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর রিজার্ভ কতো ছিল, করোনার সময় কোনও খরচ ছিল না, আমাদের রিজার্ভ বেড়েছে। এরপর যখন আমদানি শুরু হয়েছে তখন তো কিছু কমেছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ যেখান থেকে ঋণ নেয় সবসময় ঠিক সময়ে শোধ করে। আমরা কোনোদিন খেলাপি হইনি। সেটা করতে গিয়েও রিজার্ভে একটু টান পড়ে। ডলার নিয়ে কিছু একটা খেলা শুরু হয়েছিল, কিন্তু ভালোভাবে নজরদারি করা হয়েছে বলেই আজকে একটা স্থিতিশীল পরিস্থিতি আছে। কিন্তু সংকট তো আন্তর্জাতিক বিষয় থেকে এসেছে। এখন যে সংকট দেখছেন, হয়তো সামনের বছর আরও বেশি সংকট দেখা দিতে পারে। আমার তো শঙ্কা সারা বিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে, চরম অর্থনৈতিক অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। রোহিঙ্গা ইস্যু তিনি তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে ভারত আন্তরিক।
নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সবাই ইলেকশনে পার্টিসিপেট করুক সেটাই আমরা চাই। তবে যদি কেউ না করে সেটা যার যার দলের সিদ্ধান্ত। সে জন্য আমরা সংবিধান তো বন্ধ করে রাখতে পারি না। আমরা চাই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে। সংবিধান অনুযায়ী গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকবে।
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে জোট-ভোটের বিষয়টি সময় এলে বলা যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ১৪ দল করেছি। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করেছি। জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে নির্বাচন করেছে। তবে তাদের সঙ্গে আমাদের একটি সমঝোতা ছিল। ভবিষ্যৎ নির্বাচনে কে কোথায় থাকবে তা সময় বলে দেবে। নির্বাচনে যারা সবসময় আমাদের সঙ্গে ছিল তারা আমাদের সঙ্গে থাকবে। এতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। আর আমাদের সঙ্গে কে থাকবে না থাকবে, বা নতুন জোট হবে বা কী হবে, হোক। অসুবিধা নেই তো।
আগামী নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে দলটির প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারে আসার পর আমরা যে উন্নয়ন করতে পেরেছি, নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, গৃহহীনদের ঘর তৈরি করে দেওয়া, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা, এভাবে সার্বিক দিক থেকে আমরা উন্নয়ন করেছি। তৃণমূল পর্যায়ে থেকে আমরা উন্নয়ন করে যাচ্ছি। এত কাজ করার পরে অবশ্যই জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে এটা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। তারা যদি এই চলমান উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে চান, আর না চাইলে তো কিছু করার নেই। সেটা জনগণের ইচ্ছা।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি কোভিড মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ তিন বছর বিরতির পর আমার এই ভারত সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। সফরের পুরো সময় জুড়ে আমরা ভারতের আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ ও সৎ প্রতিবেশী হিসেবে সমতা এবং শ্রদ্ধার ভিত্তিতে দুদেশের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার লক্ষ্য করেছি। ভারতীয় নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ে, সংবাদমাধ্যমে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আমি বাংলাদেশের জন্য যে প্রীতি ও সৌহার্দ্য লক্ষ্য করেছি তা সত্যিই অসাধারণ। এই প্রীতির সম্পর্ককে সুসংহত করে আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই।
ভারত সফর থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তির বিষয়গুলোও প্রধানমন্ত্রী তার লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরে বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, যার মাধ্যমে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সীমান্তে প্রাণহানির সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে কাজ করতে দুই দেশ সম্মত হয়েছে। ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ও অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত রেল সংযোগে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হবে। চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য রপ্তানি বন্ধের আগে বাংলাদেশকে আগাম বার্তা দিতে ভারত সরকার পদক্ষেপ নেবে। বাংলাদেশের মুজিবনগর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত ঐতিহাসিক ‘স্বাধীনতা সড়ক’ চালু করা হবে। নদীদূষণ এবং অভিন্ন নদ-নদীর ক্ষেত্রে নদীর পরিবেশ এবং নদীর নাব্যতা উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে। রেলওয়ে সেবার মান বাড়াতে আইটি সল্যুশন বিনিময় করা হবে। ২০২২ সালের মধ্যে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি নিয়ে দুদেশের বাণিজ্য কর্মকর্তাদের কাজ শুরু করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।