Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঝুঁকিতে ২৭৯০ মিটার বেড়িবাঁধ

নদীভাঙনে ১৮ হাজার ঘর-বাড়ি হারানোর শঙ্কা

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বর্ষাকাল চলে গেছে। শরতের ভাদ্র শেষ হচ্ছে। বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে আশ্বিন মাসেও নদী ভাঙন হয়। গত বছর আশ্বিন মাসেও তিস্তা, পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ কয়েকটি নদ-নদী ভাঙ্গনে হাজার হাজার মানুষ বাড়ি-ঘর হারিয়েছে। এবারও নদী ভাঙ্গনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। নদী পাড়ের মানুষের শঙ্কা বেড়িবাঁধগুলো মেরামত করা না হলে এবার ভাঙ্গনের কবলে পড়বেন হাজার হাজার পরিবার। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এবারও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে ২৭৯০ মিটার বেড়িবাঁধ। এতে ১৮ হাজার মানুষ ঘর-বাড়ি-ও জমি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের ১২ জেলায় নদীভাঙনে ঝুঁকিপূর্ণ ২ হাজার ৭৯০ মিটার বেড়িবাঁধ, ২ হাজার ২৬৫ মিটার সড়কপথ এবং জেলা, উপজেলা ও গ্রামীণ সড়ক ভাঙনের কবলে রয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে ২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন, ১৬টি মসজিদ ও ৫টি হাট-বাজার, ২টি কবরস্থান, ২টি বেসরকারি সংস্থার কার্যালয়, এতিমখানা এবং বাসস্ট্যান্ড। এসব জেলার ১৮ হাজার মানুষ ঘর-বাড়ি-ও জমিহারা হতে পারেন বলে জানা গেছে। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর, বগুড়া এবং সিরাজগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় ভাঙন শুরু হয়েছে। গত ৬ মাসে কি পরিমান জমি, ঘর-বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিলিন এবং নদীর ভাঙনে কত হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে সে তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়া ভাঙন প্রতিরোধে কি প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে তার সঠিক তথ্য নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডে। নিয়মিত ভাঙনের সম্ভাব্য শিকার এলাকাগুলো চিহ্নিত করে অগ্রাধিকার বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর ভাঙন রোধে ব্যবস্থা করার দাবি বিশেষজ্ঞদেরএ

পানি সম্পদ উপ-মন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেছেন, এ বছর তেমন নদী ভাঙন দেখা দেয়নি। যে কয়েকটি এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেগুলো এলাকার ভাঙন প্রতিরোধে নতুন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। আমার এলাকায় যে স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে সেই এলাকা প্রতিবছরেই নদীতে ভাঙ্গে। তারপর নদীর ভাঙন প্রতিরোধে সারা দেশে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

সিইজিআইএসের নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা আবদুল্লাহ খান ইনকিলাবকে বলেন, আমরা তিনটি নদী নিয়ে কাজ করছি। তিস্তার ভাঙন নিয়ে আমরা এখনো কাজ করছি না। তবে আগামীতে তিস্তা নিয়ে কাজ শুরু করা হবে। আমরা নিয়মিত ভাঙনের সম্ভাব্য শিকার এলাকাগুলো চিহ্নিত করে সরকারকে তথ্য দেই। সরকার থেকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু দেশের অনেক এলাকায় অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে হঠাৎ ভাঙন বেড়ে যায়।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, হাওরাঞ্চল ছাড়া দেশের অন্য কোথাও এবার এখনো তেমন বন্যা হয়নি। জুলাই-আগস্টে সাধারণভাবে যেসব এলাকায় ভাঙন হয়, এবার তা হয়নি। তবে এ বছর চলতি মাসের বাকি সময় ভাঙনের আশঙ্কা আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে সম্ভাব্য ভাঙন প্রবণ এলাকাগুলোতে প্রতিরক্ষা অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে মাদারীপুরের ৫১৫ হেক্টর, কুষ্টিয়ার ২১৫ হেক্টর এবং টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের প্রায় ২০০ হেক্টর এলাকায়। সবচেয়ে বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হতে পারে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার বাগুটিয়া ইউনিয়নে। সেখানকার ১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও অন্যান্য অবকাঠামো ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে Ñচৌহালি পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৌবাড়িয়া শিকদারপাড়া টেকনিক্যাল ও ম্যানেজমেন্ট কলেজ, চৌবাড়িয়া শিকদারপাড়া এতিমখানা, চর সলিমাবাদ হাফিজিয়া মাদ্রাসা, চর সলিমাবাদ বাজার, পইলা বহুমুখী হাইস্কুল। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জের উলিপুর কেন্দ্রীয় বাজার, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএসের কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ