Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীমিত আয়ে সংসারের ভারসাম্য রক্ষা করছেন নারীরা

‘দেশের বর্তমান সামগ্রিক অবস্থা, নারীরা কী ভাবছেন’ শীর্ষক আলোচনা সভা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

দেশে দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে সংসারের খরচ কাটছাঁট করতে হচ্ছে। জিনিসপত্রের দামের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে আরা নাজুক অবস্থায় চলে যাচ্ছে নিম্নবিত্তের সংসার। সীমিত আয়ে সংসারের ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হচ্ছে এমন পরিবারের নারীদের। কম খেয়ে সবকিছু সামলানোর দায়িত্ব পড়ছে তাঁদের ওপর। নারীগ্রন্থ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ‘নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এমন বক্তব্য তুলে ধরা হয়। ‘দেশের বর্তমান সামগ্রিক অবস্থা, নারীরা কী ভাবছেন’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা গতকাল রোববার আয়োজন করা হয়। ভাচর্ু্যুয়ালি এ আলোচনা সভায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ-সংকট, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, মেগা প্রকল্পের প্রভাব, নারী নির্যাতন নিয়ে আলোচনা করেন অর্থনীতিবিদ, অধিকারকর্মী, গবেষক ও নারীনেত্রীরা।
বক্তারা বলেন, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের সময় অনেক পরিবারকে উচ্ছেদ করে অন্যত্র পুনর্বাসন করা হয়। সেসব ক্ষেত্রে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বিপদে পড়েন পরিবারের নারী ও মেয়েশিশুরা। তাঁদের মতে, নারীর কথা বলার জন্য, নারী উপকৃত হন এমন নীতি ও কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে হবে। নারী সংগঠনগুলোকেও আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান তারা।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্র নারীবান্ধব না হলে নারী অধিকার বিষয়ে দাবিদাওয়া তুললেও তা বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। দেশে গণতন্ত্র থাকতে হবে ও জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি লাগবে। এখন কথা বলতেও ভয় লাগে, যদি ১৪ বছরের জেল হয়ে যায়। কোন কথা বললে কে রাগ হবে, তা বুঝতে পারছি না।
সভা সঞ্চালনা করেন বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণার (উবিনিগ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক নারীনেত্রী ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, জিনিসপত্রের দাম অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে বাজার চলে যাওয়ায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে অসম বাণিজ্য চলছে। পণ্যের দাম কমার বিষয়ে সরকারের আশ্বাসে আস্থা রাখা যাচ্ছে না।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অর্থনীতিবিদ মাহা মির্জা বলেন, জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির বড় প্রভাব পড়ছে নারীর জীবনে। একেকটা পণ্যে ১০-১৫ টাকা বাঁচানোর জন্য সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টিসিবির দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো মানুষের মধ্যে নারীরাই বেশি থাকেন। যে নারীরা কর্মজীবী, তারা স্বল্পমূল্যে জিনিসপত্র কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে সময়মতো কাজে পৌঁছাতে পারেন না। মেট্রোরেল ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে মাহা মির্জা বলেন, অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে মেট্রোরেল করা হচ্ছে। এর ভাড়া নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। তাহলে এসব মেগা প্রকল্প কার জন্য বানানো হচ্ছে, সেই প্রশ্ন ওঠে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য উচ্ছেদ হয়ে অন্যত্র পুনর্বাসন হওয়া পরিবারের অনেক মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, যেখানে পরিবার আবাস গড়ে, সেখান থেকে স্কুল অনেক দূরে।
সভায় অস্ট্রেলিয়া থেকে অনলাইনে যুক্ত হওয়া গবেষক ও অধিকারকর্মী দিলশানা পারুল বলেন, যে নীতি গ্রহণ করলে নারী লাভবান হবেন, তা সবার পরে বিবেচিত হচ্ছে। নেদারল্যান্ডস থেকে অনলাইনে সভায় যুক্ত হয়ে নৃবিজ্ঞানী নাসরীন সিরাজ বলেন, নারীরা এ সমাজেরই অংশ। ফলে সমাজের সব ইস্যুই নারীর ইস্যু। না খেয়ে না ঘুমিয়ে প্রতিটি আন্দোলনে নারী অংশ নিচ্ছেন। নারীর এসব পদক্ষেপকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে দেখতে হবে।
আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন ‘নারীপক্ষ’র সদস্য কামরুন্নাহার, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক দিলরুবা নূরী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক খুরশিদা ইসলাম, সাংবাদিক উম্মে রায়হানা ও অধিকারকর্মী মারজিয়া প্রভা প্রমূখ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ