পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ ৩ বছর পর ৪ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গতকাল ভারত পৌঁছেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে এই সফর নিয়ে দু’দেশের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দেড় বছরেরও কম সময় আগে এবং দ্বিপাক্ষিক নানা ইস্যু অমিমাংসিত থাকায় প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে কি কি চুক্তি, স্বারক সই হতে পারে তা নিয়ে চলছে বিস্তর বিশ্লেষণ। ভারত থেকে বাংলাদেশ কী পাবে আর বাংলাদেশ ভারতকে কী দেবে সেই দিকে সবার দৃষ্টি। সে লক্ষ্যে আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আর সবার নজর থাকবে সেদিকেই।
টানা ১৩ বছর ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ ভারতকে বাংলাদেশের জন্য স্পর্শকাতর চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ বা ট্রানজিট- ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু যেসব বড় ইস্যুতে বাংলাদেশের স্বার্থ জড়িত - সেগুলোর মীমাংসা হচ্ছে না। তিস্তা নদীর পানিবন্টন নিয়ে চুক্তি ঝুলে রয়েছে লম্বা সময় ধরে। অন্যদিকে, ভারতের প্রতিশ্রুতির পরও সীমান্তে মানুষ হত্যা থামছে না। ফলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরকে ঘিরে প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির প্রশ্নে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে।
বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, বাংলাদেশের স্বার্থের ইস্যুগুলোতে মীমাংসা না হওয়ায় যেহেতু অনেক সমালোচনা রয়েছে, সেকারণে শেখ হাসিনার এবারের সফর তাঁর সরকার এবং আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা মনে করেন। যদিও ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শীর্ষ এই সফরকে রাজনৈতিক দিক থেকে দেখতে নারাজ।
কিন্তু সরকার এবং আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতার সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, সফরের রাজনৈতিক গুরুত্ব তাদের বিবেচনায় রয়েছে। এই সফরকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় বা সরকারের জন্য রাজনৈতিক দিক থেকে দেখতে রাজি নন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তবে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ভারত সফরকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন।
বলেছেন, এটি রাষ্ট্রীয় সফর এবং বাংলাদেশ-ভারত, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে যখন সফর বিনিময় হয়, তখন তা দুই রাষ্ট্রের বা দ্বিপাক্ষিক সমস্যা সমাধানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। তিনি উল্লেখ করেন, তারা এই সফরকে দেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। তবে একাধিক সিনিয়র মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, যেহেতু আগামী বছর নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে - তাই তার আগে শেখ হাসিনার এই সফরে অমীমাংসিত বড় ইস্যুগুলোর সমাধান না হলে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সেই সুযোগ নেবে এবং সমালোচনা বাড়বে। তারা মনে করেন, সরকার এবং আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে এবার অমীমাংসিত ইস্যুগুলোতে সমাধানের চেষ্টা থাকবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, যেহেতু নির্বাচনের আগের বছর শেখ হাসিনা এই সফর করছেন, সেই পটভূমিতে তিস্তা নদীর পানিবন্টন চুক্তি এবং সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধ করাসহ দ্বিপাক্ষিক মূল ইস্যুগুলোতে প্রাপ্তি কতটা হলো - আওয়ামী লীগ এবং সরকারের জন্য তার একটা রাজনৈতিক দিক রয়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেছেন, রাষ্ট্রীয় সফরেও রাজনৈতিক আলোচনার সুযোগ থাকে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে এবং ভারতেও নরেন্দ্র মোদীর সরকার রয়েছে লম্বা সময় ধরে। তারা (শেখ হাসিনার সরকার এবং মোদী সরকার) দীর্ঘ সময় দেশ দু›টিতে সরকারে থাকার কারণে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একটা ভাল বোঝাপড়া হয়েছে এবং সেই পটভূমিতে তাদের একান্ত বৈঠকে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
এদিকে গতকাল সফরের আগ মুহূর্তে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সফর থেকে বাদ পড়া নিয়ে চলেছে তুমুল আলোচনা। ‘ভারতকে বলেছি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে যা যা করা দরকার করতে হবে’ কিছুদিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের কারণে তিনি সফর থেকে বাদ পড়েছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে।
গতকাল সকাল ১০টা ১৭ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইট ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। ভারতের স্থানীয় সময় ১১টা ৪০ মিনিটে নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে অবতরণ করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা অভ্যর্থনা জানানো হয়।
সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান অভ্যর্থনা জানান। শেখ হাসিনার সম্মানে বিমানবন্দরে লাল গালিচা বিছানোর পাশাপাশি ৬-৭ সদস্যের একটি সাংস্কৃতিক দল স্বাগত নৃত্য ও বাদ্যযন্ত্র পরিবেশন করে।
এরপর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি ভারত, ভুটান ও নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে কথা হয়েছে। জ্বালানী তেল আমদানির বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এ বিষয়ে কিছুটা আলোচনা হয়েছে। যদি ভারতের উদ্বৃত্ত জ্বালানী তেল থেকে থাকে তা আমরা আমদানি করতে পারি। তিনি আরো বলেন, রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বিষয়ে স্পেসিফিকেশনস গুলো দেখা হচ্ছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের রাখাইনে সাম্প্রতিককালে যে অস্থিরতা চলছে সেটা তুলে ধরেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও একমত পোষণ করে বলেছেন, এ অঞ্চলে অস্থিরতা কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয়।
বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কট ঘিরে সমগ্র বিশ্বে যে অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সহযোগিতা কীভাবে আরও বাড়াতে পারি তা নিয়েও আলাপ করেছেন তারা।
পরবর্তীতে শেখ হাসিনা দিল্লিতে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগাহ জিয়ারত করেন। তিনি সেখানে কিছু সময় অতিবাহিত এবং ফাতিহা পাঠ ও মোনাজাত করেন। প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সচিব কেএম সাখাওয়াত মুন সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে নফল নাজাম আদায় ও মোনাজাতকালে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন। সেখান থেকে ফেরার পরে আদানী গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানীর সাথে বৈঠক করেন এবং সন্ধ্যায় ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মোহাম্মদ ইমরান ও জাকিয়া হাসনাত ইমরান আয়োজিত এক রিসেপশন-ডিনারে যোগ দেন।
এদিকে আজ হায়দ্রাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বর্ধিত বাণিজ্য সম্পর্ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সহযোগিতা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, মাদক চোরাচালান ও মানবপাচার রোধ সংক্রান্ত বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাবে।
এরপর ভারতের প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মু এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জগদীপ ধনখারের সঙ্গে পৃথক সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া আজ ভারতের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার দেখা করার কথা রয়েছে।
আগামীকাল (৭ সেপ্টেম্বর) ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়ন মন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি এবং নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাত করবেন।
এছাড়া কাল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর অফিসারদের বংশধরদের ‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদানের একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফেরার আগে রাজস্থানের খাজা গরীব নওয়াজ দরগাহ শরীফ, আজমির (আজমির শরীফ দরগাহ) জিয়ারত করবেন।
কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাবের আগে ২০১৯ সালে শেষবার সফর করার পর থেকে তিন বছর পর ভারত সফর করছেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী একটি উচ্চ-পর্যায়ের ১৬০ জনের একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন যার মধ্যে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রয়েছেন।
ইউক্রেন সংকট, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং চলমান কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে এই সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, দুই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশী চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা বাড়াতে চায়।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।