Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু

একদিনে তিনজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ২০৮

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। চলতি বছরের শুরু থেকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকলেও বছরের মাঝামাঝি এসে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে রোগটি। বছরের প্রথম পাঁচ মাস সংক্রমণের হার অত্যন্ত কম থাকলেও গত তিন মাসে তা আকাশ ছুঁয়েছে। একইসঙ্গে বেড়েছে প্রাণহানির ঘটনাও। জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কোন মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও পরের তিন মাসে ঘুরে গেছে দৃশ্যপট। জুনে এক জনের মৃত্যু হলেও জুলাইয়ে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় নয়ে। আগস্টে আরও বেড়ে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ জনে। আর চলতি সেস্টেম্বর মাসের প্রথম পাঁচ দিনেই মারা গেছেন ৫ জন। প্রতিদিনই যেন ভয়াবহতা বাড়ছে ডেঙ্গুর। চলতি মাসে পাঁচ মৃত্যুর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৩ জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ জনে। আর এই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরও ২০৮ জন। গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত রোববার সকাল ৮টা থেকে গতকাল একই সময়ের মধ্যে সারাদেশে নতুন করে আরও ২০৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নতুন ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ১৫৭ জন ঢাকায় এবং ৫১ জন অন্যান্য শহরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ নিয়ে বর্তমানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ৮০৬ জন ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৪৭টি ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৬৭৪ জন। এছাড়া ১৩২ জন ঢাকার বাইরে চিকিৎসাধীন।
স্বাস্থ্য খাতের বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত বেশি হচ্ছে। এটি যদি থেকে যায়, তাহলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ার সম্ভাবনা আছে। একটানা যদি অনেক বৃষ্টি হয়, তাহলে বাড়বে না। কিন্তু থেমে থেমে বৃষ্টি হলে তা বাড়বে। কারণ এতে অল্প পানি জমে। আর এতে ডেঙ্গু মশার প্রজনন বৃদ্ধি পায়। তাই দ্রুত ডেঙ্গুর সম্ভাব্য প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে।
বিশিষ্ট মাইক্রোবায়োলজিস্ট প্রফেসর ডা. মো. শেখ শহীদ উল্লাহ (পিএইচডি) বলেন, গত কয়েক বছরে ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানেই তারা গেছে সেখানেই ডিম পেড়েছে। গত দু’বছর আগের তুলনায় কমলেও প্রতিকূল পরিবেশে এসব ডিম সুপ্ত অবস্থায় দীর্ঘদিন থাকতে পারে। যখনই বৃষ্টি পড়ে পানি জমতে শুরু করবে, তখন ওই ডিম থেকে মশা বেরিয়ে আসবে। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে দ্রুত সারা দেশে ডেঙ্গুর সম্ভাব্য প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট সাত হাজার ১১৩ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ছয় হাজার ২৮১ জন। এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ২৬ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১২৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর ফেব্রুয়ারি ও মার্চে এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় মাত্র ২০ জনে। এপ্রিলেও নিয়ন্ত্রণে থাকা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৩ জন ভর্তি হয়েছিলেন। মে মাসে সেই সংখ্যা এক লাফে প্রায় আটগুণ বেড়ে হয় ১৬৩ জন। তবে এতে তেমন দুঃশ্চিতার কারণ ছিল না। কারণ এসময়ের ব্যবধানে কোন মৃত্যু নেই।
তবে এর পরের মাসে (জুনে) ৭৩৭ জন হাসপাতালে ভর্তির পাশাপাশি মৃত্যু হয় একজনের। জুলাইয়ে এই আরও ভয়াবহ হয় পরিস্থিতি। সে সময়ে ১ হাজার ৫৭১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তির সঙ্গে মৃত্যু হয় ৯ জনের। আগস্ট মাসে রোগী ভর্তির সংখ্যা আগের মাসের তুলণায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। ৩ হাজার ৫২১ জন হাসপাতালে ভর্তির পাশাপাশি মৃত্যু হয় ১১ জনের। চলতি মাসের প্রথম ৫ দিনের পরিসংখ্যান আরও ভয়াবহ। ৫ দিনেই মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। ভর্তি হয়েছেন ৯৩২ জন রোগী।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) তথ্য মতে, বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকায় বসবাস করে। এশিয়া, প্রশান্ত মহাসগরীয় অঞ্চল, আমেরিকা, আফ্রিকা ও ক্যারেবীয় অঞ্চলের প্রায় ১০০টি দেশে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে প্রতি বছর ৫ থেকে ১০ কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে ৫ লাখ মানুষ হেমোরেজিক জ্বরে ভোগে আর কমপক্ষে ২২ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। যাদের মধ্যে একটি বড় অংশই শিশু।
বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর এ চৌধুরী বলেন, গত দু’বছরের তুলনায় এ বছর এডিস মশা এবং ডেঙ্গু ভাইরাস দুটোর উপস্থিতিই বেশি। ভাইরাসের বাহক এডিস এলবোপিক্টাস এবং ইজিপ্ট দেশের বিভিন্ন জায়গাতেই আছে। এতেই ধারণা করা যায়, এটা দেশব্যাপী বিরাজমান এবং ছড়িয়ে পড়বে। তিনি বলেন, ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট প্রিন্সিপাল অনুসারে সারা দেশে সার্ভিলেন্স করা দরকার ছিল। সেই অনুসারে এডিস নির্মূল কর্মসূচি গ্রহণ করতে হতো। কিন্তু সেটা করা হয়নি। এখন যেসব জায়গা থেকে রোগী পাওয়া যাচ্ছে, সেসব এলাকায় হিট করতে পারলে ভাইরাস এবং বাহক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু এর জন্য শক্তিশালী ফোগিং মেশিন ও কার্যকর কীটনাশক প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। মৃত্যু হয়েছিল ১০৫ জনের। তবে ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা যায়নি। এর আগে ২০১৯ সালে এক লাখের বেশি আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডেঙ্গু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ