Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে সরকার

কল্যাণ পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নেতৃবৃন্দ

| প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় সংসদ এলাকার চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার উচ্ছেদের কথা বলে সরকার দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গতকাল রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই অভিযোগ করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক কল্যাণ পার্টির ৯ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
মার্কিন স্থপতি লুই আই কানের নকশা ভেঙে সংসদ ভবন এলাকায় জিয়াউর রহমানের কবরসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা বিভিন্ন সময়ে নির্মিত হয়। মূল নকশা পাওয়ার পর সেগুলো সরানো হবে বলে জানিয়েছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বেগম খালেদা জিয়া একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছেন, সুষ্ঠু গণতন্ত্রের জন্য একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। সেজন্য একটা যোগ্য সাহসী স্বাধীন নির্বাচন কমিশন চাই। আমরা বলতে চাই, যে নির্বাচন কমিশন আছে, তা ঠিক না। এই ধরনের কমিশন গণতন্ত্রকে দুর্বল করে। কিন্তু তারা জানে, এরকম নির্বাচন কমিশন যদি না হয়, এই রকম নির্বাচন না হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের জেতার কোনো সম্ভাবনা নেই। সেজন্য দেশনেত্রীর প্রস্তাবের পর তারা বললেন, এটা অন্তঃসারশূন্য।
তিনি বলেন, এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় আমরা বার বার তাদেরকে (ক্ষমতাসীন দল) এরকম খেলার সুযোগ দেব কিনা। এই রকম পরিস্থিতি চলতে পারে না। চলতে পারে না বলেই আন্দোলন-সংগ্রাম হবে। আমাদেরকে জনগণের কাছে যেতে হবে।

সরকার প্রধানকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, ওই ‘চান-তারা’ ডিজাইন নিয়ে পার্লামেন্ট ও লেকÑ আপনি সেটা পরিবর্তন করতে চান না। লুই আই কানের ম্যাপ নিয়ে এসে আপনি অশুভ ষড়যন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে চান, বাস্তবায়ন করতে চান। জিয়াউর রহমানের মাজারকে আপনি সেখান থেকে ধ্বংস করতে চান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, আপনি অনিবার্য গৃহযুদ্ধের দিকে দেশকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের মানুষের মণিকোঠার মধ্যে জিয়াউর রহমানের প্রতি যে শ্রদ্ধা আছে, আপনার ষড়যন্ত্র আপনার র‌্যাব-পুলিশ দিয়ে সেটাকে আপনি কখনোই দমন করতে পারবেন না।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা পটভূমি তুলে ধরে রিজভী বলেন, একাত্তরে যে দায়িত্বটি ছিল প্রধানমন্ত্রীর পিতার, সেই দায়িত্বটি যখন পালন করেননি তিনি, সেই সময়ের একজন মেজর সেই দায়িত্বটি পালন করেছেনÑ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন মেজর জিয়াউর রহমান। এটা আপনি (প্রধানমন্ত্রী) সহ্য করতে পারছেন না। যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যেমন তাজউদ্দিন আহমদকে (প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী) সহ্য করতে পারেননি আপনার পিতা। সেজন্য এক-দেড় বছরের মাথায় তাকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান সিনিয়র হওয়ার পরও তাকে সেনা বাহিনীর প্রধান করা হয়নি। তাই আপনারা তাদের সহ্য করতে পারেন না। এজন্যই এই এসব ষড়যন্ত্র।
রিজভী বলেন, আমার মনে হয়, এখানে এক ধরনের ঈর্ষা কাজ করছে। কেন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন, কেন তিনি যুদ্ধের নেতৃত্ব দিলেন? সেজন্য আজ পর্যন্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তার ক্ষোভ, তার প্রতিহিংসা অব্যাহত রেখেছেন। এভাবে আপনি যেটা করতে চাচ্ছেন সেটা কোনোদিনও বাস্তবায়ন করতে পারবেন না।

হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, এই দেশ ভুটান নয়, সিকিমও নয়। এটা ১৬ কোটি মানুষের দেশ, তাদের দাবিয়ে রাখতে পারবেন না।
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে আসার রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রসঙ্গ টেনে গণস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বাঘা পুরুষ ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৪ সালে রোহিঙ্গারা এসছিল। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ পাঠিয়েছিলেন। ওদেরকে ফেরত নাও, তা না হলে প্রয়োজনীয় যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ১৯৭৮ সালে জিয়াও একইভাবে রোহিঙ্গাদের সমস্যা সাহসিকতার সাথে মোকাবিলা করেছিলেন।
ডা. জাফরুল্লা বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বলছেন, যেকোনোভাবে তোমাদেরকে (রোহিঙ্গা) ফেরত পাঠিয়ে দেবো। কী লজ্জার! এখন আমরা নিরহ মানুষের দিকে বন্দুক তাক করে রাখি। আমাদেও নৈতিক দায়িত্ব, মানবতার খাতিরে আজকে তাদেরকে আশ্রয় দিতে হবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, ১৯৭১ সালে বার্মা (মিয়ানমার)তেও প্রায় ৪০/৫০ হাজার বাঙালি আশ্রয় নিয়েছিল, ভারতে আরো বেশি বাঙালি আশ্রয় নিয়েছিল।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রসঙ্গ টেনে মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বলে এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ২০% থেকে এখন ১০% সংখ্যালঘু রয়েছেন। এটা আমাদের ব্যর্থতা। এই ১০%-এর মধ্যে আমাদের ১০০ জন সচিবের মধ্যে প্রায় ৩০ জন সচিব আছেন সংখ্যালঘু। তার মানে আমাদের অসাম্প্রদায়িক হিসেবে সুনাম আছে। হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও মুন্সিগঞ্জের আলী কদম প্রভৃতি থানার ওসিরাও সংখ্যালঘু। আমাদের প্রধান বিচারপতিও সংখ্যালঘু। আমাদের সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনীতে সংখ্যালঘু  রয়েছেন। তবে এই সংখ্যা ১০% না আরো বেশি হতে হবে।
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্যের সূত্র ধরে রুহুল কবির রিজভী বলেন,  আজকে ৩০ জন সচিব ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়েরই কেবল নন, প্রায় ২০/৪০ ডিসি (জেলা প্রশাসক) হিন্দু সম্প্রদায়ের। আমরা অসাম্প্রদায়িকতার দেশ।
তিনি বলেন, সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, পশ্চিম বাংলায় মুসলমান হচ্ছে সরকারিভাবে ২৫% এবং বেসরকারিভাবে ৩০%। সেখানে সরকারি চাকুরিতে মাত্র ১% মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজন কাজ করছেন। এই হচ্ছে পার্থক্য। এই হলো ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক ভারত, এই হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতার দেশ ভারত।
বাংলাদেশ স্বাধীনতার অর্জনের বিষয়ে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিকারের সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ১৯৭১ সালে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম, বর্তমান বাংলাদেশের জন্য নয়। ভারতের কাছে নতজানু হওয়ার জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধ করি নাই, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের ধিক্কার জানাই। বতর্মান সরকারের নতজানু নীতির প্রতিবাদ করছি।
‘গু-া’ সিনেমা বানিয়ে ভারতের গণমাধ্যম জানিয়েছিলÑ তারা নাকি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ করেছে। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পারিকার বলেছেন, তারা নাকি স্বাধীনতা পাকিস্তান থেকে ছিনিয়ে এনে বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছেন। আপনার সবাই একযোগে বলুন সেইম সেইম সেইম। ভারত আমাদের সহযোগী ছিল, আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি।  
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মূর্তজা, ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এমএম আমিনুর রহমান, স্থায়ী কমিটির সদস্য আজাদ মাহবুব, কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার হুমায়ুন কবীর, সাইদুর রহমান তামান্না প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।




 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ